সজল বোস, ফিচার রাইটার ও সমাজকর্মী, দুর্গাপুর:

হিক... হিক... হিক...

ক্রমাগত হয়েই চলেছে। নিঃশব্দতা ভেঙ্গে আওয়াজটা বড্ড কানে লাগে। সবার অনুসন্ধিৎসু চোখ চলে যায় এটার দিকে। কারুর মুখে বিরক্তির ছাপ কেউ আবার ভ্রু কুঁচকে জানান দেই এবার থামো। বাড়িতে হলে মা বলবে জল খা, বাড়ির অন্যজন বলবে চুরি করে খেলে এমনটা হয়। আবার কেউ বলবে লিভার বাড়ছে। অদ্ভুত অদ্ভুত সব কথা। বলুন এটা বড্ড বিরক্তিকর। সকলের মাঝে এটা যেন কিরকম বেমানান, অপ্রস্তুতকর পরিবেশ তৈরী করে। ফলে কোথাও যেন এটাই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের কারন হয়ে দাঁড়ায় আর নিজেকে বড্ড বেমানান করে তোলে। কি পড়তে ইচ্ছা হচ্ছে নিশ্চয়। হবেই তো হেঁচকির চেঁচকি যে। আসুন তাহলে কিছুটা জেনে নিই এই বিষয়ে। 

হেঁচকি কেন হয় তা নিয়ে এখনো খুব স্পষ্ট ধারণা নেই  বিজ্ঞানীদের কাছে। শত শত বছর ধরে আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিহীন এই শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যার সুনির্দিষ্ট কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন।

হেঁচকির সময় শ্বাসনালীতে সামান্য খিঁচুনির মত হয় যার ফলে শ্বাসযন্ত্রে দ্রুত বাতাস প্রবেশ করে। তখন ভোকাল কর্ড হঠাৎ বন্ধ হয়ে 'হিক' শব্দ তৈরি হয়।

ফুসফুসের নীচের পাতলা মাংসপেশীর স্তর, যেটিকে ডায়াফ্রাম বলে, হঠাৎ সংকোচনের ফলেই হেঁচকি তৈরি হয়।

হেঁচকি ওঠার একশো'র বেশি মেডিক্যাল কারণ থাকতে পারে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলো খুবই সামান্য কারণেই হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিপাকতন্ত্রের গোলমালের কারণেই মানুষের হেঁচকি আসে। তবে দ্রুত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করলে, অনেক গরম খাবার ও মশলাদার খাবার খেলে এমন হবার সম্ভবনা বেশী। আবার গরম খাবারের সঙ্গে খুব ঠান্ডা জল বা তরল পানীয় পান করতে শুরু করলে, আবার অনেকক্ষণ ধরে হাসলে বা কাঁদলে হেঁচকি হতে পারে। 

তবে বয়সে বড়দের অবিরত হেঁচকি হওয়ার পেছনে অন্য কিছু কারণ থাকতে পারে।

বেশী উদ্বেগ হলে , কিডনির রোগ বা সমস্যা হলে, শরীরে লবণের বা সোডিয়াম ও আয়োডিনের মাত্রার ভারসাম্যহীনতা, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, ফুসফুসের সংক্রমণ বা নিউমোনিয়ায় হেঁচকি হতে পারে। আবার মস্তিষ্কের কিছু রোগ যেমন টিউমার বা ফোড়া, পেটের কিছু রোগ, যেমন অগ্ন্যাশয়ে প্রদাহ বা হেপাটাইটিস ইত্যাদিও হেঁচকির কারণ হতে পারে।

সাধারণ ভাবে কোনো কারণে হেঁচকি হলে তা একটু পর এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা বা মনের তাৎক্ষণিক ভাবে তা পরিবর্তন করে অন্য দিকে মনঃসংযোগ তৈরী করলেও সাধারণ হেঁচকি বন্ধ হয়ে যায়। তবে শারীরিক সমস্যা ও রোগে অনেক সময়

বিরক্তিকরভাবে বারবার বা অবিরত হেঁচকি হতে পারে।

হেঁচকি উঠলে বা বারবার হলে কিছু প্রক্রিয়ায় এটি থামানো যায়।

মূলতঃ শরীরে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর মাত্রা বৃদ্ধি করে ডায়াফ্রাম কে থামিয়ে দেওয়া যায়। ফলে হেঁচকি বন্ধ হয়। 

ঘরোয়া কিছু উপায় অভ্যাস করলে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া সম্ভব। কিছুক্ষণ শ্বাস বন্ধ করে রাখে একটি পলিথিন ব্যাগ নিয়ে এর ভেতরে শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়ুন। ঠান্ডা জল বা বরফকুচি গিললে অথবা শুকনো খাবার চিবোলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের চাপ বেড়ে গিয়ে ডায়াফ্রামকে থামিয়ে দেয়। কটন বাড দিয়ে নাকের ভেতর সুড়সুড়ি দিয়ে হাঁচ্চি দিলে বা চোখের ওপর আঙুল দিয়ে হল্কা চাপ দেওয়া, নাকে তীব্র ঝাঁজাল ঘ্রাণ যেমন কিছুটা কালো জিরে একটি পরিস্কার কাপড়ে রেখে ঘসে নিয়ে নাক দিয়ে টানলে এটি থামানো যায়।

এর পরও যদি শরীরে এমন ঘটণা বার বার হয় এবং তা অসহনীয় ও অনবরত হতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

হেঁচকিরও আবার বিশ্ব রেকর্ড আছে ১৯২২ সালে হেঁচকি তোলা শুরু করেন তিনি, কথিত আছে সেসময় তিনি একটি শূকর ওজন করার চেষ্টা করছিলেন। মি. অসবোর্ন হেঁচকি তোলা থামান ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে - মোট ৬৮ বছর পর।

পরিশেষে এটা বলি শিশুদের এই হেঁচকি হলে ভয় পাবেন না। নবজাতকের হেঁচকিগুলি ডায়াফ্রামের পেশীর স্বয়ংক্রিয় খিঁচ দ্বারা সৃষ্ট হয় যা পাঁজরের খাঁচার গোড়ায় থাকে এবং শ্বাস নিতে সহায়তা করে। এগুলি প্রায় এক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা অব্যাহত থাকে তবে সম্পূর্ণ ক্ষতিহীন, পাশাপাশি ব্যাথাহীন। যখন আপনার শিশুর অঙ্গ তন্ত্রগুলি পরিপক্ক হয়ে উঠবে, হেঁচকিগুলি স্বাভাবিকভাবে হ্রাস পাবে। যথেষ্ট মজাদার, আপনার শিশু তাদের হেঁচকিগুলি থেকে তাদের দেহ থেকে আসা শব্দগুলিতে আনন্দ পাবে বা আনন্দ দেওয়ার উৎস হিসাবে আবিষ্কার করবে। আপনার ছোট্টটি থেকে একটি সূত্র নিন এবং হেঁচকিগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুর ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ না হওয়ায় নিশ্চিন্তে থাকুন।



 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours