আপনারা প্রত্যেকেই উল্কাপাতের কথা তো শুনেছেন নিশ্চয়ই। যাকে আমরা সাধারণত তারা খসা বলে থাকি। এই উল্কাপাত আসলে কোন ধূমকেতুর কিছু অংশ যখন নিজের কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকে পড়ে তখন তা বাতাসের সংস্পর্শে এসে আগুনের গোলার মতো জ্বলজ্বল করে।
বেশীরভাগ উল্কাই আকাশেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। প্রতি বছরই পৃথিবীতে উল্কাপাত হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি বছর প্রায় ১৫০০ মেট্রিক টন উল্কাপিণ্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। ভূপৃষ্ঠে যে সকল উল্কাপিণ্ডের অবশেষ পাওয়া যায়, তাদের বেশিরভাগের রঙ থাকে কালো। প্রচণ্ড উত্তাপে এদের বহির্ভাগ পুড়ে যাওয়ার কারণে এগুলোর রঙ কালো হয়।
বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশে নানা ধরণের ছোটো ছোটো মহাকাশীয় বস্তু ভেসে বেড়ায়। এই বস্তুগুলো যখন কোন গ্রহ-নক্ষত্রের কাছাকাছি চলে আসে, তখন এদের আকর্ষণে বস্তুগুলো এদের দিকে চলে আসে। এই ঘটনা মহাকাশের সকল গ্রহ-নক্ষত্র এমন কি চাঁদের মতো উপগ্রহেও ঘটে থাকে। পৃথিবীর দিকে ছুটে আসা অধিকাংশ উল্কাপিণ্ডের উৎস ধূমকেতু। রাতের আকাশে এই জ্বলন্ত বস্তুগুলোকেই উল্কা নামে অভিহিত করা হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫ কিলোমিটার থেকে ১১৫ কিলোমিটারের মধ্যে যে সকল উল্কা জ্বলতে জ্বলতে নীচে নেমে আসে, সেই উল্কাগুলোই ভূপৃষ্ঠ থেকে দেখা যায়।
অনেক বিজ্ঞানী তাদের গবেষণার জন্য এই উল্কাপিণ্ডকে সংগ্রহ করে রাখেন, আবার অনেকেই এগুলোকে এলিয়নের উপহার হিসেবে নিজেদের বাড়িতে রেখে দেয়। ব্রাজিলের একটি গ্রামে এরকমই শয়ে শয়ে উল্কাপাতের ফলে সেই গ্রামের বাসিন্দারা রাতারাতি বড়লোক হয়ে যায়। কারণ এই উল্কাপিণ্ড গুলোর দাম কয়েক লক্ষ টাকা। সবচেয়ে বড় উল্কাপিণ্ডটির মূল্য ১৯ লক্ষ টাকা বলে জানা গেছে।
ব্রাজিলের গ্রাম স্যান্টা ফিলোমেনায় ১৯ আগস্ট এই উল্কাপিণ্ডের বৃষ্টি হয়। ওখানকার লোকেরা সেটিকে পয়সার বৃষ্টি বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। অনেকেই সেই উল্কাপিণ্ড গুলো জড় করে রেখে দেয়। যখন বৈজ্ঞানিকরা ওই পাথর গুলোর গবেষণা করে, তখন জানা যায় যে পাথর গুলো খুবই দুর্লভ। বৈজ্ঞানিকরা যখন গ্রামবাসীদের থেকে ওই পাথর গুলো চায়, তখন গ্রামবাসীরা পাথরের বদলে টাকা চাইতে শুরু করে। ফলে সেগুলো কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়ে যায়।
সবথেকে বড় টুকরোটির ওজন ৪০ কেজির মতো যা নাকি ২৬ হাজার ডলার অর্থাৎ প্রায় ১৯ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়। শোনা যায়, স্যান্টা ফিলোমেনায় ছোট-বড় পাথর মিলিয়ে প্রায় ২০০ টিরও বেশি টুকরো পড়েছিল। এই টুকরো গুলো সেই উল্কাপিণ্ডের, যেটি সৌরমণ্ডল সৃষ্টি হওয়ার সময় তৈরি হয়েছিল। এই টুকরো গুলোকে গবেষণা করে দেখলে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের রহস্যের ব্যাপারে জানা যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা জানান, এই উল্কাপিণ্ডের মতো মাত্র ১ শতাংশ উল্কাপিণ্ড আছে যেগুলো লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়। ব্রাজিলের ওই গ্রামের মানুষ অনেক গরীব। যারা ওই পাথর পেয়ে রাতারাতি বড়লোক হয়ে গেছে। এক ২০ বছর বয়সী ছাত্র অ্যাডিমার ডি কস্টা রড্রিগেজের থেকে জানা যায়, সেদিন রাতে গোটা আকাশ জুড়ে ধোয়ায় ভরে গিয়েছিল। এরপর তারা জানতে পারে যে, আকাশ থেকে উল্কাপিণ্ড পড়ছে।
খবরে প্রকাশ, এই উল্কাপিণ্ড গুলি ৪.৬ বিলিয়ন বছরের পুরনো। এটি একটি খুবই বিরল প্রজাতির উল্কাপিণ্ড। যার জন্য এর দামও অনেক বেশি। সাও পাওলো ইউনিভার্সিটির কেমিস্ট্রি ইনস্টিটিউটের এক বিশেষজ্ঞ গ্যাব্রিয়েল সিলভা বলেন, সম্ভবত এই উল্কাপিণ্ড গুলোই প্রথম খনিজ পদার্থ যেগুলো দিয়ে সোলার সিস্টেম তৈরি হয়েছিল।
স্থানীয় মানুষেরা যখন জানতে পারেন যে, তাঁদের এলাকায় আকাশ থেকে কিছু পড়েছে যার মূল্য বহুগুণ বেশি, তখন তাঁরা সেটিকে, আকাশ থেকে টাকার বৃষ্টি হচ্ছে বলে আখ্যা দেন। অ্যাডিমার কস্টা রড্রিগেজ বলে ছাত্রটি সাত মিটারের একটি পাথর পেয়েছিল, যেটির ওজন ছিল ১৬৪ গ্রাম। সেটিকে বিক্রি করে সে ৯৭ হাজার টাকা আয় করেছিল।
এখানকার স্থানীয় মানুষেরা বলেন, ভগবান নাকি তাদের জন্য আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো তাদের ভাগ্যের ঝুলি খুলে দিয়েছেন। সেখানকার এক গ্রামবাসী মোট ২.৮ কেজি পাথর বিক্রি করে ১৪.৬৩ লক্ষ টাকা উপার্জন করে। রড্রিগেজের কাছ থেকে আরও জানা যায় যে ওই এলাকার ৯০ শতাংশ মানুষই কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। তারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত গরীব। তাই ভগবান তাদের জন্য এই পয়সার বৃষ্টি করিয়েছেন।
একটা উল্কাপিণ্ডও যে কোন মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারে তা এই ব্রাজিলের গ্রামটি সম্পর্কে না জানলে হয়তো জানাই হতো না, তাই না??
Post A Comment:
0 comments so far,add yours