সুমিত তালুকদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, নৈহাটি, উত্তর ২৪পরগনা:

একদিকে করোনা সন্ত্রাস আর অন্যদিকে ফলপ্রকাশে নানাবিধ সমস্যা ও বিলম্ব। তবু এর মধ্যে অত্যন্ত দ্রুততা ও ঢালাও নম্বরের বদান্যতায় প্রকাশিত হলো মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল। এবারের মাধ্যমিকে জেলার ছাত্র ছাত্রীদের সাফল্য এবং মেধা তালিকায় স্থান দখল রেকর্ড গড়েছে সারা রাজ্যে। পাশাপাশি পাশের হারে রেকর্ড উচ্চমাধ্যমিকে, ৪৯৯ পেয়ে প্রথম স্থানে চার পড়ুয়া। কলকাতার শাখাওয়াত মেমোরিয়ালের একমাত্র স্রোতশ্রী রায় ছাড়া বাকি দুজন বাঁকুড়ার আর অন্যজন হুগলি কলেজিয়েট স্কুলের। লক্ষনীয় জেলার এই ধারাবাহিক সাফল্য আমাদের মুগ্ধ ও গর্বিত করে। সকলের জন্য শিক্ষা, মিডডে মিল, বিভিন্ন প্রকল্প (কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, যুবশ্রী প্রভৃতি) এর প্রভাবে কলকাতা ছাড়িয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। পাশাপাশি পড়ুয়াদের মনে তৈরি হয়েছে একধরনের জেদি মনোভাব এবং জীবনযুদ্ধে লড়াই করে কিছু করে দেখানোর আপ্রাণ চেষ্টা।

জুতো সেলাই করে, মুচির কাজ করে হরিশচন্দ্রপুর কনুয়া হাই স্কুলের সঞ্জয় ৯০ শতাংশ নম্বর দিয়ে পাশ করেছে। পরের জনের লড়াই আরো মর্মান্তিক। ঘর জুড়ে অভাবের ছাপ। মুছে যায়নি এসিড হামলার দাগও। তবু অদম্য রূপতাজ ইয়াসমিন। এবারের উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ৭০ শতাংশ নম্বর নিয়ে উত্তীর্ণ পাশকুড়ার এই লড়াকু ‘কন্যাশ্রী‘। এই তালিকায় আরো আছে। হয়েছে সংবাদের শিরোনাম। নদীয়া তেহট্টের হাউলিয়া গ্রামের ঋত্বিক মাল সাপের খেলা দেখিয়ে এইচ এস- এ পেয়েছে ৪৬৫। সাপের বিষ নয়, শিক্ষার অমৃত চায় ঋত্বিক। আবার মুর্শিদাবাদ সুতির কেধুয়া গ্রামের আরমান চায়ের দোকান চালিয়ে এবারের এইচ এস-এ পেয়েছে ৪৬৮। এত ভালো নম্বর পেয়েও এদের দুচোখের স্বপ্ন পূরণ কিভাবে হবে জানা নেই। চূড়ান্ত অভাব ও দারিদ্র্যকে নিত্য সঙ্গী করে এদের জীবন যাপন, বাঁচা মরার লড়াই। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াও কেউ ইংরাজি সাহিত্য নিয়ে, আবার কেউবা নার্স বা শিক্ষিকা হতে চায়। অধিকাংশের স্বপ্ন পূরণ হয়ত হয় না। সরকারি সাহায্য মেলে না। ১০০ দিনের কাজে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। অথবা রাজনৈতিক নেতাদের দলদাস হয়ে অনিশ্চিত জীবন যাপন করতে বাধ্য হওয়া। তাই এ শুধু খাতা- কলমের পরীক্ষা নয়, জীবন যুদ্ধের পরীক্ষাও বটে। 

বাস্তবিকই প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ছাত্র ছাত্রী পাশ করছে। উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নেই, চাকরি নেই। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। সম্প্রতি করোনা সন্ত্রাস গ্রাস করেছে সামগ্রিক জীবন ও সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ। তবু এতসব সমস্যা অসুবিধার মধ্যেও জেলার ছাত্র ছাত্রীদের জেদি মানসিকতা ও অসম লড়াই-এ গৌরবময় সাফল্য আমাদের অভিভূত করে।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours