শাহনাজ পলি, সাংবাদিক, বাংলাাদেশ:

বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ ৭৪তম জন্মদিন।১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার নিভৃত পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তার এই অবিচল পথ চলায় বারবার তার জীবনের ওপর এসেছে ঝুঁকি। খাটতে হয়েছে জেল, থেকেছেন গৃহবন্দি।

পুরো জীবনই যার কেটেছে সংগ্রামে।সাধারণ আর দশটা মানুষের মতো তিনি পাননি পরিবারের সান্নিধ্য, ছিলো না জীবনের স্বাভাবিক গতিধারাও। সব হারিয়েও যিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন গৌরবোজ্জ্বল সাফল্যের অধ্যায়ে। বর্ণাঢ্য সেই সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

করোনা মহামারীর কারণে সীমিত পরিসরে সারাদেশে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন পালন করা হচ্ছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপ জাতিসংঘ, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফোর্বসসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছেন। বিভিন্ন সময় বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রতিবছর জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দেয়ার কারণে জন্মদিনের সময় তিনি বিদেশে থাকেন। এবারে করোনা মহামারীর কারনে দেশেই অবস্থান করছেন এবং দীর্ঘ কয়েক বছর পর এবারের জন্মদিনটি দেশের মাটিতে কাটাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার ঘটা করে তার জন্মদিন পালিত হচ্ছে না। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলের সভাপতিমণ্ডলীর সভায় তিনি কোনও আনুষ্ঠানিকতা না করার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে, দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সীমিত পরিসরে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এছাড়া মসজিদে মিলাদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে আজ সকালে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন এবং প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। 'ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা: বিশ্ব নেতৃত্বে বাংলাদেশ' শীর্ষক সেমিনারটির আয়োজন করে মিডিয়া ফর ডেভেলপমেন্ট এন্ড পিস (এমডিপি)।

জন্মদিন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।  হাসিনার সুস্বাস্থ্য এবং মঙ্গল কামনা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লেখেন, ‘আপনার (শেখ হাসিনা) দূরদর্শী নেতৃত্ব বাংলাদেশকে ব্যাপক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে সহায়তা করেছে এবং সমানভাবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনার অবদান অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল।’

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা।

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর দীর্ঘ যাত্রায় পার করেছেন নানা চড়াই-উতরাই। কারাভোগ করেছেন, একাধিকবার গৃহবন্দী ছিলেন। চারবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। প্রায় তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। 

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন শেখ হাসিনা। ওই বছর দলের সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরপর ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফেরেন তিনি। ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে। প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসএসসি পাস করেন ঢাকার আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে। এরপর ভর্তি হন তৎকালীন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজে (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়)। স্নাতক পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কারাবন্দী পিতার আগ্রহে ১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে গৃহবন্দী থাকা অবস্থায় ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হয়। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর জন্ম নেন তাঁর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours