দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

সুন্দর মুখ সর্বত্র বিজয়িনী। আর তাতে চওড়া হাসি হলে তো কথাই নেই। যাঁরা স্বাস্থ্য সচেতন, তাঁরা এই হাসিকে স্যাকারিন স্মাইল বা সুগার ফ্রি  হাসি হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন! যদিও তা একেবারে ঝড়ো ইনিংসয়ের মতো। মাভৈঃ। তবে কবি হলে বলবেন,  Was this face that launched a thousand ships/ And burnt the topless towers of Ilium--  হাসি নিয়ে কথা হচ্ছিল, ফাঁসি নিয়ে নয়। এই হাসির গুণ কীর্তন সমঝদার দের জন্য, তা অবশ্যই কোন সমঝোতার কথা বলে না। 

হাসি যে এক ধরণের ডিপ্লোম্যাসি, তা কে জানতো! 

আজকের দিনে কেউ এমনি এমনি হাসে না! আপনি যতটা মেপে হাসবেন, অন্যপক্ষ ঠিক ততটুকুই মেপে হাসবেন। এই হলো হাস্য বিনিময়! 

এখন আমরা সবাই ডিপ্লোম্যাটিক রিলেশনশীপে বিশ্বাস রাখি! খুব ছোট খাটো বিষয় দিয়ে শুরু করি। ধরুন, কোন কারণে আপনি কাউকে খুব একটা পছন্দ না করলেও, তার বিরাগভাজন হতে চাইছেন না, তবে ছেরদ্দাটা দেখাতে হবে। সেটা কোন ওপেন ফোরামে জানালে, অন্যপক্ষ চটতে পারে! তাই স্রেফ হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে গোপনে ছেরদ্দা জানানো হয়। আবার যেখানে অন্যপক্ষকে এটি প্রকাশ্যে জানানো জরুরী, সেটাও হলো। এটাই ডিপ্লোম্যাসি। রাইকুল ও শ্যাম কুল দুই রক্ষা পেল! 

কেউ কেউ দেখবেন, ঘাপটি মেরে থাকে। মাখনটা, ঘিটা তারা চেটে চেটে খেতে ভালো বাসে। তাই কিচ্ছুটি না বলে, সব কিছু পিটপিট করে দেখতে থাকে। ভাবে, কি দরকার! পেনশন, ট্রান্সফার -- কত কোপ! কুপিত হওয়ার আশঙ্কা! শুধু হেসে যান! 

তবে মেপে! 

যারা হো হো করে হাসেন, তাদের হার্ট হয়তো ভালো থাকে, প্রশ্ন জাগে তাদের হাসিটাও কী মাপা? সে শুভশ্রী হোক বা কঙ্গনা রানাউত! সেটা অবশ্যই ভবিষ্যত বলবে! কিন্তু যারা না হেসে শুধু চৌকিদারী করেন, তাঁরা হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন, খুব প্রতিভাবান শিল্পী আমির খান তাঁর স্ত্রী বা শাহারুক খান তাঁর স্ত্রীকে অসহিষ্ণু ভারত নিয়ে কি বললেন, সেটা জনসমক্ষে এল কেন? এমনি এমনি? জনমানসে তার কী প্রতিক্রিয়া হবে তা তাঁরা জানতেন না? না শুধু মাত্র স্পষ্ট ভাষণ? এক্ষেত্রে ভুল করার জন্য কিছু   মানুষ, যারা প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্য প্রস্তুত, তাঁদের আমি প্রতিক্রিয়াশীল বলবো, হাজির হলেন। বললেন এমন অনেক কিছু। তার ফলে, যা শিল্পীরা বললেন, সেটাই পাকাপোক্ত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো! 

কঙ্গনা রানাউত যা বললেন, তার প্রতিক্রিয়ায় শিবসেনার নেতারা যা যা বললেন, তাতে অনেকাংশে কঙ্গনার বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া হলো। ৯ সেপ্টেম্বর কঙ্গনা মুম্বাইয়ে পা রাখার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। সবাই সেই দিকে তাকিয়ে। কঙ্গনা আরও অনেক কিছু বললেন, হাসলেন! 

স্মাইল ডিপ্লোম্যাসির কথা শোনা গেছিল ২০১১ সালে সাইনো ইউ এস দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সময়। ২০১০ সালে মিডিয়ায় এর ঢালাও প্রচার হয়েছিল। হাসি হাসি মুখ করে চিনের রাষ্ট্র প্রধান  হু জিনটাও  এবং বারাক ওবামা এমন পোজ দিলেন, যেন‌ অতীতের সব তিক্ততা চলে গেল। গলে জল হলো, তাইওয়ানকে দেওয়া আর্মস ডিল বা দলাই লামার সাথে বৈঠকে চিনের দলাইমলাই। 

তিন বছর আগেও জাপানের সঙ্গে যে চিনের জিন পিঙের এই স্মাইল ডিপ্লোম্যাসি হয় নি, তা নয়। তার অর্থ এই নয় যে জাপানের সেনকাকু দ্বীপ সহ অতীতের সব তিক্ততা মিটে গেছে বা যাবে! 

তবে, এই হাসি চলতে থাকবে! স্মাইল ডিপ্লোম্যাসি তো শত্রুপক্ষ চেঞ্জ করে! হ্যাণ্ডসেক হয়, তারপর স্মাইল! হাওডি বা হেলো কিম্বা নমস্তে!- এসব চলতে থাকে। চলতে থাকে ক্যামেরার ফ্লাশ!



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours