সুজিত দেবনাথ, ফিচার রাইটার ও শিক্ষক, মালদহ:

জীবনের প্রথম শিক্ষক তুমি মা। বড় লজ্জা জীবনে প্রথমবার ই তোমায় শিক্ষক দিবসের উইশ করলাম । এতোদিন করতে পারিনি। ভাবনাটাও আসেনি যে আমরা জীবনের প্রথম শিক্ষক কে এতোদিন শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করিনি। 

বইতে হাজার বার পড়েছিলাম। একটি শিক্ষিত মা একটি জাতির জন্ম দিতে পারে। এডুকেশন বইতে ও পড়েছিলাম মানুষের জীবনের প্রথম শিক্ষক পিতামাতা। কিন্ত শিক্ষক দিবসের দিন প্রাইভেটে স্কুলে হৈ হুল্লোড়ে কেটে গেছে সারাদিন। তোমায় শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করিনি মা। তবে আজ বলবো --হ্যা টিচার্স ডে মা, শুভ শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা তোমায়। 

আজ বুঝেছি, মা আমার ছোটবেলায় কিভাবে অ. আ শিখিয়েছিলো। দুটো শব্দ লিখতেই দু- ঘন্টা কাটাতাম। কতো বকে বকে মাকে বিরক্ত করে তুলতাম। কিন্তু মা আমার অধীর ধৈর্য্য নিয়ে আঙ্গুলে আঙ্গুল লাগিয়ে বসেই থাকতো, কতোবার মায়ের মুখে চক ছুড়ে মেরেছি ; সে হিসেব টা মা ই দিতে পারবে না। বহু কষ্ট করে বহুদিনের আঙ্গুলে আঙ্গুলে বন্ধনের ফলশ্রুতি হলো - প্রানের অ. আ. । তাইতো এটাকে বলি মায়ের ভাষা, মাতৃভাষা। এতো ধৈর্য্য ধরে একা আমাকে নিয়ে পারবে কোন শিক্ষক পড়াতে? আমি শিক্ষক হয়েই বলছি, এতো ধৈর্য্য কোন শিক্ষককুলের নেই। এখনো দেখবেন হোম টিউটর খুজতে গেলে বহুজন ই বাচ্ছাদের পড়াতে চান না। সবাই বড় স্টুডেন্ট খোঁজে। তাঁর মানে এই কঠিন কাজটা সবাই ই করতে ভয় পায়। অথচ মা একদম শুরুতে এর  থেকেও কঠিন অবস্থায় শিক্ষাদানের প্রথম কাজটা শুরু করেছিলেন। অনেক সময়  মা একটু বকে দিলে ,মায়ের মুখে খামচি ও কেটে দিতাম। তিন চার বছরের বাচ্চা তখন। আজ অনেক বড় হয়েছি তবে মা আমাকে আজো বাচ্চা ই ভাবে। মায়ের কোলে বসে গল্প শুনেছি রাজপুত্তুরের , প্রশ্নবানে জর্জরিত করেছি, দেশ দুনিয়ার সব নিয়ে। মা আমার না রেগে ভুল ঠিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে যেতো। এতো প্রশ্ন আজ পর্যন্ত নিজের কোন সাধারন শিক্ষক কে ও করিনি। তাই এমন পরম শিক্ষক কে জানাই আবারো --

হ্যাপি টিচার্স ডে। মা গো তুমি ই আমার প্রথম শিক্ষক। 

তবে বাবাও কম করেনি শিক্ষার জন্য। কতো সিলেট ভেঙ্গেছি, কতো চক জলে ফেলেছি। বিনা বকুনীতেই এনে দিতো। হয়তো বাবা তখন ছেঁড়া জুতাটা ৫ বার সেলাই করে পড়তো, তা আমি জানতাম না। তবুও অভাব বুঝতে দিতো না। মাঝে মাঝে  বাবাও পড়াতে বসাতো। তবে বাবার ধৈর্য্য কম তাই বকে ঝকে উঠে যেতো। মা এর কাছে হেরে যেতো বাবা র ধৈর্য্য। যে মা দশমাস দশদিন পেটে ভীষন বেদনা নিয়ে বহন করার ধৈর্য্য রাখে, সেই মা এর কাছে বাবা কি ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেখিয়ে জিততে পারে।

তবে 'বাবা' যেহেতু মায়ের পড়েই শিক্ষার কাজটা শুরু করেছিলো, তাই বাবাকে মেনেছি  জীবনের দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে। বাবা নেই , তবু বাবা আপনাকেও জানাই HAPPY TEACHERS DAY.

মা ই হলো আমাদের জীবন্ত সরস্বতী। তাই মা যে শিক্ষকদের হাতে তুলে দিয়েছিলে - অর্থাৎ জীবনের তৃতীয় শিক্ষক (teacher of different institution like school college etc.) উনাদের ও জানাই শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা ও প্রনাম। 

মনে আছে আমার এখনো অ ,আ , ক ,খ কিছুটা শেখানোর পরেই তুমি হাত ধরে প্রতিদিন নিয়ে পৌছে দিতে স্কুলের শিক্ষকের কাছে। তাই ওরা আমার শিক্ষাজীবনের তৃতীয় ও সর্বশেষ শিক্ষক।

সবাই কে শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা। 



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours