বিশ্বকর্মা পুজো ছিল গতকাল। এই দিনটা এলেই, ঘুড়ির সঙ্গে পুজোর গন্ধ ওড়ে আকাশে। আনন্দ আনন্দ গন্ধ পাই আমি। অন্যরকম আনন্দ, মানে স্পেশ্যাল। প্রজাপতির ডানার গন্ধের মতো নরম, ফুরফুরে। তবে এই আনন্দের ঠিকানা শুধু তাদেরই জানা, যাদের বাড়ির লোক কারখানায় কাজ করেছেন কখনও। আমার কাছে বিশ্বকর্মা পুজোর দিনটা বিস্ময়ের নামে লেখা আছে। এদিন অন্য একটা পৃথিবী দেখার দিন। যেন পাসওয়ার্ড পুট করে ঢুকে পড়া আরেকটা লেভেলে। এদিন বাবার সঙ্গে অফিস যাবার তিথি।
শৈশবের সেই আনন্দ-সুরভি এখনও কোথাও একটা লেগে আছে। ওদিন সাদা রংয়ের জামা পবিয়ে দিয়েছিল মা। প্রচুর ঘের দেওয়া সাদা জামা পরে উড়ে বেড়াচ্ছি চত্বর জুড়ে। প্রজাপতির মতন করে মনে। এইখানেই আসে বাবা প্রতিদিন? এইখানেই? খুব ভোরবেলা গরম জলে স্নান করে বেঙ্গল পটারির পাগলাডাঙা ইউনিটে যেত বাবা।
এই সেই কারখানা! প্রথম যখন fragrance শব্দটা শিখি, সারাদিন উচ্চারণ করেছিলাম। সেই শব্দটার মতো ছিল দিনটা। পুণ্য কাকু আর ধীরেন কাকু ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিল সব। একবার কাঠের বাস আর দমকল বানিয়ে দিয়েছিল ওরা। তারপর মিস্টার অনন্তনারায়নন বাক্স খুলে বললেন, মিঠাই লও। বাক্সের ভিতর থেকে মুখ বাড়ানো লুচির দিকে হাত বাড়াতেই উনি বললেন ,নো। মিঠাই লও। আমিও নেব না। মিষ্টি খেলে বমি পায় আমার। বাবা বলেছিলেন, উনি চিফ ইঞ্জিনিয়ার। তারপর যখন খুব ঘুম পেল তখন বাড়িতে দিয়ে গেলেন বাবা। আঙুলের করে হিসেব করে রেখেছিলাম সব। নতুন শেখা শব্দ আর মানুষজনের কথা। বাড়ি ফিরে গড়গড় করে মাকে বলে গেলাম সব। শেষে বললাম ,ফর্সা লোক মিঠাই লও বলে। তার নাম চিফ ইঞ্জিনিয়ার। অনন্তনারায়নন। মা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন , তুই ফর্সা কালো বুঝিস না?
Post A Comment:
0 comments so far,add yours