দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

দু'মাস আগে মুম্বাইয়ের ডংরি এলাকায় বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের কাজে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে গেছিলেন মুরারইয়ের পাইকর থানার ভাগাইলের বাসিন্দা ৪৯ বছর বয়স্ক গাওসাকিম সেখ। কিন্তু শনিবার ভোর চারটায় মুম্বাইয়ের সেন্ট জর্জ হসপিটালে তাঁর মৃত্যু হয়। দেহে কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ায়, কবরস্থ করা হলো মুম্বাইয়ের ডংরি এলাকার স্থানীয় কবরস্থানে।

জানা গেছে, মুম্বাইয়ের ডংরি এলাকায় বীরভূম জেলার বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিক আছেন। মাড় গ্রামের বাসিন্দা নাজিমুল সেখ জানান, গাওসাকিম সেখ মুম্বাইয়ের ডংরি এলাকায় এক বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের কাজে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যান। তাঁর তলপেটে ব্যথার কারণে স্থানীয় হাসপাতালে তাঁকে ৫ সেপ্টেম্বর  ভর্তি করা হয়। খুব অভাবী হওয়ায় চাঁদা তুলে তাঁর চিকিৎসা করা হয়। চিকিৎসার জন্য প্রথমে ১৬ হাজার, পরে যথাক্রমে ১১ হাজার, ১৫০০ ও ১২৫০০ টাকা খরচ করা হয়। বাঁচানো গেল না। স্থানীয় এলাকার কবরস্থানে দেহ কবরস্থ করা হয়েছে। কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ায় দেহ বাড়ি পাঠানোর অনুমতি পাওয়া যায় নি। আর দেহ পাঠানোর  সামর্থ্য আমাদের ছিল না। 

মৃত গাওসাকিম সেখের বাড়িতে আছেন দুই মেয়ে। বড় মেয়ে তাঞ্জিরা খাতুনের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ে মুসনিমা খাতুন ও বছর চোদ্দোর ছেলে আব্দুল খালেক বাড়িতে আছে। আব্দুল খালেক স্থানীয় স্কুলে নবম শ্রেণীর ছাত্র। তাঁরা তাঁদের বাবাকে শেষ দেখতে পেল না। 

মৃতের স্ত্রী রহিতুন্নেসা শোকে পাথর হয়ে গেছেন।  শ্যালিকা রহিমুন্নেসা জানান, দিদির সাথে কয়েক দিন আগেও কথা হয়েছে। জামাইবাবুর পেটে যন্ত্রণা হচ্ছিল। বলে ছিল অপারেশন হলে, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে। সেটা আর হলো না। শনিবার সকালে ফোন করে আমাদের জানানো হয়। ছোট্ট একটা মাটির বাড়ি ছাড়া কিছুই নেই। পঞ্চায়েতের প্রধান ও মেম্বার করে বলা হয়েছিল। কিন্তু দেহ তো ফিরলো না। মুম্বাইয়ে মাটি হলো। ছেলে ও আত্মীয় স্বজন কেউ মাটি দিতে পারলো না। বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চের সভাপতি সামিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্রামে দেহ আনার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু মৃতের কোভিড পজিটিভ ধরা পড়ায়, সেটা সম্ভব হলো না।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours