দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

পৌষ মেলায় কাটমানি খাওয়া বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায়, ভাঙচুর বিশ্ব ভারতীতে, অভিযোগ বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পালের।  উপাচার্যের সাথে দেখা করে উপাচার্যের হয়ে এদিন ব্যাট ধরলেন বিজেপি মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল। তিনি সাংবাদিকদের সামনে বিশ্ব ভারতী ভাঙচুর কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, "পৌষমেলাতে ১২০০ স্টল বসতো। বিশ্ব ভারতী থেকে ২ হাজার টাকায় কিনে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো শাসকদলের নেতা কর্মীরা। তাছাড়াও, ১২০০ স্টলের বাইরেও মেলার মাঠে বাইরের লোক ঢুকিয়ে কাটমানি খাওয়া হতো। মাঠ ঘিরলে, সেই অসাধু ব্যবসা বন্ধ হবে তাই, বিশ্ব ভারতীতে ভাঙচুর হয়। 

পাশাপাশি, এদিন তিনি প্রশ্ন তোলেন, বিশ্ব বাংলা বিশ্ব বিদ্যালয় ও ডাকবাংলো মাঠ শাসকদল পাঁচিল দিয়ে ঘিরেছে। সেটাও তো শান্তি নিকেতনে! ডাকবাংলো মাঠে তো মানুষ হাঁটতো! এই প্রশ্ন আমি করতে চাই ফিরহাদ হাকিম সাহেবকে। তিনি বলছেন, খোলা মাঠে প্রকৃতির মুক্ত অঙ্গন বিশ্ব ভারতীর পরিবেশ। আজকে সেই পরিবেশ আছে? বোলপুর বাসী জানেন, সন্ধ্যা লাগলে মেলার মাঠে সেক্স র‌্যাকেট চলে। তাই অন্যান্য কেন্দ্রীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের মত নিজস্ব জায়গা ঘেরার প্রয়োজনীয়তা আছে। যদিও, কেন বিশ্ব ভারতী এযাবৎ মেলার মাঠে সেক্স র‌্যাকেট নিয়ে থানায় কেন অভিযোগ দায়ের করেনি। তার উত্তর না দিয়ে, তিনি বলেন, ১৫, ১৬, ১৭ তারিখের মধ্যে তিন তিনটে অভিযোগ দায়ের করা হয়, এই ভাঙচুরের ঘটনার আশঙ্কা করেই। ১৭ তারিখ ঘটনার দিন ৪৬ বার পুলিশ প্রশাসনকে ফোন করা হয়। পুলিশ হাত গুটিয়ে বসেছিল। পুলিশ মন্ত্রীর নির্দেশেই পুলিশ সুপার শ্যাম সিং কিছু করেননি। 

তবে, পাঁচিল নিয়ে আশ্রমিকদের ক্ষোভকে গুটি কয়েক আশ্রমিকদের ক্ষোভ বলেন তিনি। এটা সবার নয়। যাঁরা বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে ভাঙচুর করেছেন তাঁরা জানেন, ওই গেটের স্থাপত্যের ইতিহাস? প্রশ্ন তোলেন তিনি। 

তবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধর সুপ্রিয় ঠাকুর কেন শান্তি নিকেতনে পাঁচিলের বিরোধী? তার সদুত্তর তিনি দিতে না পেরে, অগ্নিমিত্র বলেন, তা আমার জানা নেই। পাশাপাশি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কেন উপাচার্য বহিরাগত বলেন? সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, উপাচার্য কি বলেছেন, তা আমার জানা নেই। আমি এসেছি, শান্তি নিকেতনে যা ঘটেছে, তা বাঙালির বুকে আঘাত লেগেছে। সেই জন্য এখানে আসা। বিশ্ব ভারতীতে পরিবেশ দূষণ জনিত মামলার কারণে লক্ষ লক্ষ টাকা ফাইন গুনতে হচ্ছে, তাই পাঁচিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ইউজিসি ও পরিবেশ আদালতের নির্দেশে এই পাঁচিল দিচ্ছিল বিশ্ব ভারতী। যদিও, এব্যাপারে পরিবেশ বিদ আগেই বলে গেছেন, আদালত কোথাও পাঁচিল দিতে হবে এমন কথা কোথাও বলে নি। আর ইউজিস নির্দেশ প্রসঙ্গে এক প্রাক্তন স্থায়ী উপাচার্য বলেন, ইউ জিসির নির্দেশে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছে ঠিকই। সেখানে বিভিন্ন মতামত সেই কমিটি দিতে পারে। কিন্তু তার অর্থ এই নয়, যে সবগুলো মানতে হবে। অতীতে যতবার অতি উচ্চ পাঁচিল তোলা হয়েছে, আশ্রমিক থেকে সাধারণ মানুষ আপত্তি তুলেছেন। কিন্তু ছোট পাঁচিল দিয়ে ঘেরার ক্ষেত্রে কোন আপত্তি কোন দিন হয়নি। 

মেলার কাটমানি কাণ্ডে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ সিনহা বলেন,    আগের মেলা তো অন লাইনে বুক হয়েছে। তাহলে কাটমানি কে খাবে?  তাছাড়া, যিনি ডাকবাংলো বা বিশ্ব বাংলা পাঁচিল নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তিনি ভুলে যাচ্ছেন বিশ্ব ভারতী কি? সেটা যে সমস্ত কেন্দ্রীয় বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে স্বতন্ত্র। সেটা তাঁদের বোঝার কথাও নয়।  স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, বিশ্ব ভারতীর হয়ে যারা আজ বলছেন মেলা হবে। তাহলে উপাচার্য কেন জেলা শাসককে জানালেন, পৌষ মেলা করতে চায় না বিশ্ব ভারতী। শুধু মেলা নয়, বসন্ত উৎসব তুলে দিতে চাইছেন তিনি।



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours