সুব্রত দাম, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

রাস্তার বখাটে ছেলেদের হাতে মার খাওয়া থেকে রক্ষা পেতে যার জীবনের দিক পরিবর্তন হয়ে যায়। যার হাত ধরে বিশ্ববিখ্যাত মার্শাল আর্ট আজ মানুষের কাছে পরিচিত, তাকে তো আমরা প্রত্যেকেই চিনি। হ্যাঁ, ব্রুস লি'কে চেনেন না এমন কেউ নেই।তার কথা উঠতেই, যেন চোখের সামনে ভেসে উঠে তার সেই বিখ্যাত আর্ট ফর্ম গুলো।

চলুন আজ আমরা সেই স্বনামধন্য ব্যক্তিটির জীবন যাত্রা সম্পর্কে কিছু কথা জানি। তবে আজ শুধু তার স্বাভাবিক জীবন সম্পর্কেই জানব না। আজ আমরা জানার চেষ্টা করবো তার ও তার পুত্রের মৃত্যু রহস্য নিয়েও। কারণ তার জীবনের রহস্য থেকে মৃত্যুর রহস্যটা মনে হয় বেশিই রোমাঞ্চকর।

পুরো নাম ব্রুস ইয়ুন ফান লি। জন্ম ২৭ শে নভেম্বর ১৯৪০ চায়না হাসপাতাল,  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সানফ্রান্সিসকোতে। পিতার নাম লি হোই-চুয়েন মা গ্রেস হো। তার স্ত্রীর নাম লিন্ডা এমেরি। ছেলের নাম ব্র্যান্ডন লি আর মেয়ের নাম শান্নোন লি। উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি।

ব্রুস লি যেমন একাধারে ছিলেন চায়না মার্শাল আর্ট শিল্পী তেমনি অন্যদিকে ছিলেন শিক্ষক, দার্শনিক, পরিচালক, প্রোযোজক, এবং অভিনেতা। তাছাড়া তিনি 'জিৎ কুন দো' নামে এক মার্শাল আর্টেরও প্রতিষ্ঠা করেন।

লোকে তাকে চাইনিজ ভাবলেও তিনি মূলত ছিলেন হংকংয়ের বাসিন্দা।তার বয়স যখন মাত্র তেরো বছর তখন তিনি "উইন-চুন" নামে একটি মার্শাল আর্ট শিখতে চিনে যান। তার পরিবার তাকে সাই-ফোন বলে ডাকতেন। যার অর্থ ছোট্ট ফিনিক্স।

ব্রুস লির নানান কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমরা অনেকেই পরিচিত। আমরা যেমন জানি যে তিনি ৩০০ পাউন্ড ওজনের কিক ব্যাগে কিক মেরে অনুশীলন করতেন। তেমনই দেখেছি শূন্যে ভেসে চপার স্টিক দিয়ে একটি চালের দানাকে ধরতে। তিনি তার জীবনে কখনো কোন ফাইটেই পরাজিত হন নি অথচ জীবনের আসল যুদ্ধে তিনি হেরে গিয়েছিলেন। "ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস" এই প্রবাদটা মনে হয় ব্রুস লির সাথেই যায়। যিনি হলিউডে একের পর এক বক্স অফিস কাঁপানো ছবি দিয়ে গেছেন। তিনি মাত্র ৩২ বছর বয়সেই তার জীবনে হার মেনে নিলেন।

২০ শে জুলাই ১৯৭৩ সালে ব্রুস লির মৃত্যু হয় হংকংয়ে। তার পর থেকেই তার এই মৃত্যুকে ঘিরে নানান বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে । ১৯৭৩ সালের মে মাসে ব্রুস লি যখন নিজের একটি ছবিতে ডাবিং করছিলেন ঠিক সেই সময় হঠাৎ করে তার মস্তিষ্ক ফুলে উঠতে শুরু করে, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় অসহ্য মাথা যন্ত্রণা।   চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় সেরিব্রাল এডেমা। ডাক্তারদের সার্বিক প্রচেষ্টায় সে বারের মতো তিনি রক্ষা পেলেও তা কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসকরা তার মস্তিষ্কের ফোলাটা কমাতে সক্ষম হলেও তা কিন্তু  আবার ফিরে আসে ছয় সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে তাও আবার মারাত্মক আকার ধারণ করে।

১৯৭৩ সালের ২০ শে জুলাই ব্রুস লি গিয়েছিলেন তার সহ অভিনেত্রী বেটি টিং পেইর কাউলুন টংয়ের বাড়িতে। উদ্দেশ্য ছিল তার আগামী ছবির একটি চরিত্র নিয়ে নায়িকার সাথে আলোচনা করা। সেই আলোচনা চলাকালীন হঠাৎই ব্রুস লির মাথায় আবার যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। তখন বেটি টিং তাকে "ইকুয়াজেসিক" নামে একটি পেইন কিলার খেতে দেন। সেই ওষুধটি খাওয়ার পর ব্রুস লি শোয়ার ঘরে চলে যান বিশ্রাম নিতে। এরপর বেশ কিছুটা সময় কেটে যাওয়ার পর যখন দেখা গেল তিনি আর ঘুম থেকে উঠছেন না তখন তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে। সেখানকার ডাক্তাররা অনেক চেষ্টা করেও ব্রুস লির জ্ঞান ফেরাতে পারেন নি। এর কয়েক ঘন্টা পর এলিজাবেথ হাসপাতালের পক্ষ তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এরপর তার অকালমৃত্যুকে ঘিরে সবার মনে যে রহস্যের দানা বেঁধেছিল তা আজও অব্যাহত রয়েছে। 

ব্রুস লির মৃত্যুকে ঘিরে নানান জনকে নানান কথা বলতে শোনা গেছে। কেউ কেউ বলেন তিনি নাকি অতিরিক্ত ড্রাগ নিতেন তাই তার মৃত্যু হয়েছে। আবার কেউ বলেন মস্তিষ্কের আঘাত জনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে । কারো কারো আবার মন্তব্য তিনি নাকি অস্বাভাবিক ডায়েট করতেন তাই তার মৃত্যু হয়েছে। কেউ আবার বলেন মার্শাল আর্টের কড়া অনুশাসনের জন্য তার মৃত্যু হয়েছে। কেউ আবার বলেন তিনি নাকি অদ্ভুত ধরনের খাবার খেতেন বলেই তার মৃত্যু হয়েছে। তার সেই অদ্ভুত খাদ্য তালিকার নাকি কাঁচা মাংস, কাঁচা ডিম, দুধ ও হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ পানীয় থাকতো। 

প্রাথমিক ময়নাতদন্তের রির্পোট অনুযায়ী ব্যাথা নিবারণ কারি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দরুন এলার্জির কারণে ব্রুস লির মৃত্যু হয়েছে। লি এই ওষুধ তার মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে সেবন করতেন।তবে সরকারি রির্পোটে বলা হয়েছে তার মৃত্যু আকস্মিক দুর্ঘটনায় জন্য হয়েছে।

কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালের ডাক্তার ডঃ আর আর লিসেট, ব্রুস লি'র ময়না তদন্ত করেন। তিনি তার প্রাথমিক রির্পোটে বলেন যে দৃশ্যমান কোন আঘাতই নাকি দেখা যায় নি ব্রুস লি'র গায়ে। তবে লি'র ব্রেনের ১৩ শতাংশ ফুলে গিয়েছিল। তার রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ লেখা ছিল ইডিমা।

কিন্তু কিছু কিছু ডাক্তারের অভিমতে তার মৃত্যু হয়েছে ক্যানাবিস নামক বিষক্রিয়ায়। এই ক্যানাবিস হল মারিজুয়ানা ও হাশিসের মতো ড্রাগ, যা সেবনের কারণে লি'র মস্তিষ্ক ফুলে উঠেছিল। তবে ডঃ মিলটন হালপার্ন নামে নিউইয়র্কের একজন ডাক্তারের মতে ক্যানাবিসে নাকি কোন বিষাক্ত কিছু থাকতে পারে না।তবে খুব বেশি মাত্রায় ক্যানাবিসের প্রয়োগে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণত বেশি মাত্রার ক্যানাবিস গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

অনেক ডাক্তারের আবার ধারনা ছিল ব্রুস লি'র মস্তিষ্ক ইকুয়াজোসিক অথবা ডোলানেক্সের প্রতিক্রিয়ায় ফুলে উঠতে পারে।  

এমন ও গুজব শোনা গিয়েছিল যে চলচ্চিত্র পরিচালক ও মাফিয়াদের নির্মম লোভের শিকার হতে হয়েছিল লি কে। আর তারাই নাকি লি এর মৃত্যুর জন্য দায়ী।কারণ তার জনপ্রিয়তা ও বক্স অফিসে লি এর বিপুল চাহিদা দেখে তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে পথের কাঁটা সরাতে নাকি ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করেছিলেন।

কখনো আবার এও ধারনা করা হয়েছিল যে বেটি টিং পে,যার অ্যাপার্টমেন্টে ব্রুস লি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনিই নাকি ব্রুস লির মৃত্যুর জন্য দায়ী। যদিও তার কোন তথ্যপ্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

ব্রুস লির মৃত্যুর কারণ নিয়ে সবচেয়ে জোরালো ব্যাখ্যা দেওয়া হয় মার্শাল আর্টের 'দ্য আয়রন ফিস্ট' নামে একটি আচার অনুষ্ঠানে। এই  আয়রন ফিস্ট হল মার্শাল আর্টের পুরোনো এক কৌশল যার আঘাতে একজন মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখে চলে যায়। অনেকে এটিকে আবার ডেথ চার্চও বলে থাকেন।

মার্শাল আর্টের অভিজ্ঞ ও বৃদ্ধ পন্ডিতরা মনে করেন লি নাকি তার প্রতিটি সিনেমায় মার্শাল আর্টের অনেক গুপ্ত ও গোপন তথ্য ফাঁস করে দিচ্ছিলেন। তাই তারা লি'র সিনেমায় সেই সব গোপন তথ্য ফাঁস করতে বারণ করার জন্য একজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন ব্রুস লি'র কাছে। কিন্তু সেই প্রতিনিধির কোন কথায় ব্রুস লি আমল দেন নি। ঐ প্রতিনিধিও ছিলেন মার্শাল আর্টের একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক। তিনি ফিরে যাওয়ার সময় ব্রুস লি'র কাঁধে হাত রেখে প্রয়োগ করেন 'দ্য আয়রন ফিস্ট'। শোনা যায় এর পর থেকেই ব্রুস লি'র শরীরটা খারাপ হতে থাকে। অনেকে মনে করেন ব্রুস লি ওই 'দ্য আয়রন ফিস্ট' এর শিকার হয়েছেন।

তরুণ এই অভিনেতার অকাল মৃত্যুতে সারা বিশ্ব জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। তার ফ্যানেরা মন থেকে এই ব্যাপারটা ঠিক মেনে নিতে পারেন নি। ব্রুস লি'র মৃত্যু নাড়া দিয়েছিল হংকং থেকে হলিউড পর্যন্ত। শোকার্ত ভক্তরা তাদের প্রিয় অভিনেতার কফিন একবার দেখার জন্য রাস্তার দু ধারে প্রচুর ভিড় জমিয়েছিল। ব্রুস লি'র অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল দু জায়গায়। আগে হংকং এ তারপর সিয়াটেল এ, এই দু জায়গাতেই অন্তেষ্টিক্রিয়ার সময়েও প্রায় ত্রিশ হাজার ভক্ত ভিড় করে। ব্রুস লি'কে কবর দেওয়ার সময় বাজানো হয় 'দ্য ইমপসিবল ড্রিম' ও 'মাই ওয়ে' নামে গান দুটি।

ব্রুস লি'র মৃত্যু নিয়ে আর একটি কাহিনী খুবই প্রচলিত। তার পরিবারের অনেক সদস্যেরই ধারণা তার মৃত্যুর সাথে পরিবারের অভিশাপ লুকিয়ে আছে। এই অভিশাপের সূত্রপাত লি'র বাবাকে ঘিরে। ব্রুস লি'র বাবা নাকি কিছু চিনা ব্যবসায়ী কে ক্ষুব্ধ করে তোলেন যার ফলে ঐ চিনা ব্যবসায়ীরা ব্রুস লি'র বাবাকে এই হলে অভিশাপ দেন যে তাদের পরিবারে যতজন পুরুষ জন্মগ্রহণ করবে, তারা প্রত্যেকেই অকালে মৃত্যুবরণ করবে। শুরুতে ব্রুস লি'র পরিবার এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয় নি। কিন্তু ব্রুস লি'র বড় ভাইয়ের জন্মের পরপরই মৃত্যু তার পরিবারকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছিল। ব্রুস লি ও তার পুত্র  ব্রানডনের অকাল মৃত্যুর জন্য ব্রুসের পরিবারের সদস্যরা এই অভিশাপের কথাই বলেন।

ব্রুস লি'র মৃত্যুর পর তার ছবি গুলো লাখ লাখ ডলার সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল। মৃত্যুর আগে তিনি 'এন্টার দ্য ড্রাগন' ছবিটি শেষ করে গেছিলেন। যা ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সর্বকালের সেরা একটি ছবি বলে মানা হয়।

ব্রুস লি'র মৃত্যুকে ঘিরে কয়েকটা ধোঁয়াশা রয়েই  গেল। যেমন :--

১) কোন ড্রাগের বিষক্রিয়ায় ব্রুস লির মৃত্যু হলো তা কিন্তু কোন রির্পোটে খোলসা করে বলা হয় নি।

২) পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসার আগেই কি করে বলে দেওয়া হয়েছিল যে পেনকিলারের অ্যালার্জিক রিয়েকশনে ব্রুস লির মৃত্যু হয়।

৩) সেরিব্রাল ইডিমার পেশেন্টের ইকুয়াজেসিক খেলে আবার সেরিব্রাল ইডিমা হতে পারে তা কি আগে থেকেই কেউ জানতো? তাই কি বেটি তাকে সেই ওষুধটি দিয়েছিলেন?

৪) কেন কোন পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আজ পর্যন্ত প্রকাশ করা গেল না? সেই রির্পোট বেরলে কি বিষ্ফোরণ ঘটতো যে তা চেপে দেয়া হলো? 

৫) সারা বিশ্ব যেখানে বুঝতে পেরেছিল ব্রুস লির শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। সেখানে যে ডাক্তার তাকে পোস্টমর্টেম করলেন থিনি কেন কোন আঘাত দেখতে পেলেন না?

৬) সেরিব্রাল ইডিমায় মলদ্বারের ভিতরে কি ফ্লুইড জমে? যদি তা না হয় তবে ব্রুস লির শরীরে সেই ফ্লুইড এল কোথা থেকে?

৭) জীবনের শেষ দিকে ব্রুস লি কেন মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরেছিলেন? তার এই মনসিক অবস্থার জন্য তবে দায়ী কে?

জানি না এই সব ধোঁয়াশার উদঘাটন আর কোন দিন হবে কিনা। তবে ব্রুস লি সকলের অন্তরে চিরদিন একি রকম থেকে যাবে তা আমি নিশ্চিত।

যাক, এর পর আসি ব্রুস লি'র সন্তান ব্রানডন লি'র মৃত্যু প্রসঙ্গে।বাবার মতোই তারও মাত্র ২৮ বছর বয়সেই অকালমৃত্যু ঘটে। অনেকে তার এই মৃত্যুর ঘটনাকে পুর্বলিখিত ও পরিকল্পিত বলে মনে করেন।

পারিবারিক অভিশাপের সাথে সাথে ব্রানডনের মৃত্যুর পূর্বাভাস দিয়ে গিয়েছিল ব্রুস লিরই একটি ছবি যার নাম "Game of Death"। ব্রানডনের মৃত্যুর ১৫ বছর আগে নির্মিত ব্রুস লি'র চরিত্রটি ছিল এক অভিনেতার। যেখানে ব্রুস লি একটি ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পায়। সেই ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে ভিলেন ওই নায়ককে নকল পিস্তল দিয়ে গুলি করার কথা ছিল,  কিন্তু যেকোনভাবে ঐ ভিলেনের কাছে সত্যিকারের কার্তুজ ভরা বন্দুক চলে  আসে। আর তার আঘাতেই নায়কের মৃত্যু হয়।  ঠিক ১৫ বছর পর হুবহু এই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ব্রানডনের জীবনে।

ব্রুস লি'র একমাত্র সন্তান ব্রানডন লি কৈশোরে বাবার মতোই ছিল একগুঁয়ে স্বভাবের। দু-বার দুটি হাই স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয় তাকে। ফ্লিমে ক্যারিয়ার গড়তে বাবার মতোই পথ বেচে নিয়েছিলেন তিনি। তাই প্রথমে তিনি এশিয়ায় চলে আসেন। পরে অবশ্য তিনি আবার আমেরিকায় ফিরে যান। ব্রানডন চেয়েছিল তার বাবার মৃত্যু রহস্যটা উদঘাটন করার জন্যে ব্রুস লি'র কেশ ফাইলটা আবার রি ওপেন করতে। 

নব্বইয়ের দশকের প্রথমভাগে ইউনিভার্সল পিকচার ব্রুস লি'র জীবন নিয়ে 'ড্রাগন দ্য ব্রুস লি স্টোরি' নামে একটি ছবি নির্মাণ করে। এই ছবিতে ব্রুস লি'র ছেলে ব্রানডনের অভিনয় করার কথা ছিল। কিন্তু ২৫ বছর বয়সে ব্রানডন ব্রুস লি'র  পিতার ভূমিকায় অভিনয় করতে রাজি হননি। অবশেষে হাওয়াইয়ান অভিনেতা জেসন স্কট সেই চরিত্রটি অভিনয় করেন।

১৯৯১ সালে ব্রানডনের প্রথম হলিউড ছবি "শো ডাউন ইন লিটিল কো" মুক্তি পায়। এই ছবিটি ভীষণ প্রশংসিত হয় সেই সময়। এর পর বিভিন্ন ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ আসতে থাকে ব্রানডনের।

১৯৯৩ সালে "দ্য ক্র" নামে একটা বড় বাজেটের ছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পায় ব্রানডন। ছবির কাহিনী ছিল একজন খুন হয়ে যাওয়া স্টার কে নিয়ে।যিনি অতিপ্রাকৃত শক্তির সাহায্যে পাখি হয়ে ফিরে এসে নিজের ও বান্ধবীর হত্যার প্রতিশোধ নেবে। কিন্তু এই ছবিটা শেষ হওয়ার আগেই ঘটতে থাকে  নানান ধরনের অদ্ভুত ঘটনা । ওই ছবির একজন টেকনিশিয়ান হঠাৎ আগুনে পুড়ে সাংঘাতিক ভাবে আহত হন। একজনের আবার হাত কেটে যায় স্ক্র ড্রাইভারে। উত্তর ক্যারোলিনার লিমিংটনে ছবিটা চলাকালীন সেখানে নাকি হঠাৎই ঠান্ডা পড়তে শুরু করে দেয়। সঙ্গে চলতে থাকে প্রবল  ঝড় বৃষ্টি। ছবিটি যখন প্রায় শেষ পর্যায় তখনই ঘটে সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। ছবির সুটিং শেষ হতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। একটি দৃশ্যে ব্রানডনকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার কথা ছিল। সাধারণত এ সকল দৃশ্যে খালি বন্দুক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেদিন ঐ বন্দুকে পয়েন্ট ৪৪ ক্যালিবার গুলি ভরা ছিল। সেই বুলেট-ই এসে বিদ্ধ করে ব্রানডনকে। কে বা কারা সত্যিকারে বুলেট ভরে রেখে গিয়েছিল ঐ পিস্তলে তার উত্তর এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। লস এঞ্জেলসে অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করার পর ব্রুসের সমাধির পাশেই ব্রানডনকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

ব্রুস লি'র মৃত্যু রহস্যের মতোই তার সন্তান ব্রানডনের মৃত্যুও রহস্যের আড়ালেই রয়ে গেল। জানি না তার রহস্যটা ভবিষ্যতে জানা যাবে না যাবে না। আজ পর্যন্ত রহস্যটা রহস্যই রয়ে গেল এক সময়ের সেরা দুই অভিনেতার মৃত্যুকে ঘিরে। 


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours