সুব্রত দাম, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

"বিজ্ঞাপন যা দেখায়, যা বলে, বাস্তবতায় কি তাই-ই ফলে"!! 

হ্যাঁ এমনই এক অদ্ভুত প্রশ্ন আমার মনেও ঘোরাঘুরি করতো একসময়। তারপর অবশ্য একদিন সেই ভুল ভাঙে আর এক অদ্ভুত বিজ্ঞাপন দেখে। 
আজকাল এই অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক মিডিয়ার যুগে হাতের ছোট্ট মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন অনলাইন শপিং সাইট থেকে আমরা মুড়িমুড়কির মতো জিনিস পত্র কেনাকাটা করি প্রত্যেকেই ।

কিন্তু কেউ কি কখনো কল্পনা করতে পেরেছেন  যে অনলাইনে কারো স্ত্রীকেও কেনা যায়!
অবাক হলেন তাই তো? হ্যাঁ অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমিও হয়েছিলাম।

চলুন আজ আমরা এমনই কিছু অদ্ভুত ঘটনার সামনাসামনি হই।

আমি ইন্টারনেটের মাধ্যমে জানতে পারি লন্ডনের এক ৩৩ বছর বয়সি টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার যার নাম সাইমন ওকেন তিনি তার স্ত্রীকে বিক্রি করতে ই-বে নামে এক অনলাইন শপিং প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপন দেন। তার স্ত্রীকে (যার নাম লিয়েন্ডার বয়স ২৭ বছর) বিক্রি করে দেয়ার জন্য। ক্রেতার যাতে সহজে সেটা দৃষ্টিগোচর হয় তার জন্য তিনি বড় বড় অক্ষরে লিখে দেন "ইউজড ওয়াইফ"। শুনলে অবাক হবেন মাত্র দুদিনে সেই স্ত্রীর বাজার মূল্য ওঠে ৫৬৮৮০(ছাপান্ন হাজার আট শত আশি) পাউন্ড।

অবাক হলেন?

দাঁড়ান অবাক হওয়া তো এখনো অনেক বাকি আছে। এ তো শুনলেন পাশ্চাত্য দেশের কথা। এবার শুনুন আমাদের সকলের জন্মভূমি এই ভারতবর্ষের কিছু কথা। 

আপনারা নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন যে মহাভারতে কেউ যখন পাশা খেলায তার নিজের সর্বস্ব হারিয়ে ফেলতো তখন তার নিজের স্ত্রীকে বাজি হিসেবে সেখানে রাখতে হতো। আপনারা হয়তো  হিন্দি বা বাংলা সিনেমায়ও কখনো কখনো এরকম ঘটনা দেখেছেন। কিন্তু এটা কি কখনো শুনেছেন যে সরকারি ১০ টাকার বা ১০০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে রীতিমতো চুক্তি করে কমপক্ষে এক বছরের জন্য কোন স্বামী তার স্ত্রীকে ভাড়া দিতে পারে?
হ্যাঁ এমনই কিছু কু প্রথা এখনো আমাদের ভারতবর্ষের কিছু এলাকায় আছে। এমন কি আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নিজ রাজ্য গুজরাটের কিছু কিছু স্থানে এমন ঘটনা এখনো ঘটে চলে।

চলুন আমরা এই কু প্রথা সম্পর্কে আজ কিছু জানি।

বর্তমানে অর্থনীতির যা অবস্থা তাতে সত্যিই সংসার চালানো দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে সকলের। তার উপর বিয়ে করা মানেই সংসারের সব দায় দায়িত্বের বোঝা এসে হাজির হয় মাথার উপর। তখন মনেহয় বিয়ে না করলেই হয়তো ভালো হোত। এর থেকে যদি লিভ টুগেদারে থাকা যায় তা হলে হয়তো মন্দ হোত না। তা ছাড়া কারো সাথে ভালো না লাগলে অন্যজনকে তো আবার পাওয়া যেতো তা হলে ক্ষতি কোথায়!

হ্যাঁ ক্ষতি তো আছেই । যেখানে আজ আমরা নারী জাতিকে প্রাধান্য দিচ্ছি । যেখানে  কোন নারীর সহাতায় আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ছি। যেখানে  বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী একদা ছিলেন মহিলা। যেখানে নারীরা বিমান চালাচ্ছে মহাকাশে যাচ্ছে এমন কি যুদ্ধ বিমান ও চালাচ্ছে সেই ভারতবর্ষেই আবার মধ্যপ্রদেশের শিবপুরি জেলার গোয়ালিয়র ডিভিশনে নারীকে সরকারি স্ট্যাম্প পেপারে লিখিত ভাবে ভাড়া হিসেবে তুলে দেয়া হচ্ছে অন্য পুরুষের হাতে সামান্য কটা অর্থের বিনিময়ে। এ নিয়ে কারো কোন প্রতিবাদ বা মাথাব্যথা নেই। রীতিমতো খোলা বাজারে দাঁড় করিয়ে নিলাম করা হয় মহিলাদের আর ধনী ব্যক্তিরা নিলামে বেশি অর্থ দিয়ে ভাড়া করে নিয়ে যায় ওই মহিলাদের। এটাই নাকি ওখানকার প্রথা। এটা 'ধাদিচা' প্রথা খ্যাত সেই সমাজে। 

মধ্যপ্রদেশের এমনই একটি ঘটনা প্রথম প্রকাশ্যে আসে ২০১৭ সালে। ইন্দোরের এক ব্যক্তি তার এক আত্মীয়ের বিয়ে বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে বিক্রি করে দেন এক ধনী ব্যবসায়ীর কাছে মাত্র ৩০০০০ (ত্রিশ হাজার) টাকায়। ওই ব্যক্তি ওই মহিলাকে কিনে নেয়ার পর তাকে অসংখ্য বার ধর্ষণ করে তাকে আবার বিক্রি করে দেয় শিবপুরিতে। তারপর তিনি সেখান থেকে পালিয়ে এসে তার এই কুকর্মের কথা পুলিশকে জানায়। তার ওই বয়ানের ভিত্তিতে শেষমেশ ওই মহিলার স্বামীকে গ্রেফতার করেন শিবপুরির পুলিশ। তবে এই ঘটনা শুধুমাত্র মধ্যপ্রদেশেই ঘটেছে তা নয়। ২০০৬ সালে গুজরাটের এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে মাসিক ৮০০০(আট হাজার) টাকার বিনিময়ে এক ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়েছিলেন।

এটাই কি আমাদের সমাজ? যার ভিত্তিতেই আমরা ভিত গড়ি! সত্যিই অবাক লাগে, এটাই বুঝি আমাদের ডিজিটাল যুগ।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours