তানজিন তিপিয়া, লেখক ও রন্ধন বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ:

বৈবাহিক জীবন কোন কল্পকাহিনী,  গালগল্প নয়, কোন সিনেমা, নাটক নয় যে ২-৩ ঘণ্টার মাঝেই শেষ হয়ে যাবে। নিজের পাশাপাশি নতুন আরো একটি পরিবার গঠনে ব্রত হয়ে পরার দায়িত্ব। রয়েছে বলিদান, কষ্ট, আত্মত্যাগ, খুব অল্পমাত্রায় সুখ, মূলমন্ত্র হলো বট বৃক্ষের মতো অতি ধৈর্যের সাথে সবকটা সামলে নেওয়া। 
স্বামী স্ত্রী একে অপরের বস্ত্র ন্যায়, চিন্তা করুন কতো সুন্দর উপমা দিয়ে আমাদের রব উনার গ্রন্থের অধ্যায় ২ এর ১৮৭ আয়াতে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন প্রায় ১৪৫০ বছর পূর্বে। আমরা উভয়ে অল্প একটু জ্ঞান খাটিয়ে উপলব্ধি করতে পারলেই সবকটার সমাধান সম্ভব।
আপনি বিয়ে করবেন আর আপনার স্বামী সিনেমা, সিরিয়ালের নায়কদের মতো আগামী ৪-৫ বছর আপনাকে ছোঁবে না, গায়ে হাত দেবে না। এমন চিন্তা মাথায় রাখলে বিয়ে করলেনই বা কেন? বিয়ে কি আপনার সম্মতিতে হয়নি? যৌন মিলনের বেলায় আবার নতুন করে সম্মতি কেন? 
বিজ্ঞানীদের মতে নারীদের মস্তিষ্ক জটিল প্রকৃতির। সদা একটি ধারণা থাকে যে, প্রকৃতি তাদের উপর বড় নিষ্ঠুরতা চাপিয়ে দিয়েছে অথচ এর বিশালতা বোঝার বুদ্ধি খুব কম নারীরই থাকে।
৪৫,০০০ এরও বেশি অধ্যয়নের তথ্য বিশ্লেষণ করে “ক্যালিফোর্নিয়ার আমেন ক্লিনিকের” গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, পুরুষের তুলনায় নারীর মস্তিষ্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি সক্রিয়। 
সুফলটির কারণেই নারীরা অনেকগুলো কাজ একত্রে দক্ষতার সাথে সম্পাদন করতে সক্ষম। আর এরই সুবাদে অতি চিন্তায় মগ্ন হন নারীরা। এটি হয় মস্তিষ্কের “লিম্বিক” সংবেদনশীল অঞ্চলে রক্তের প্রবাহ বেশি থাকার কারণে। বেশিরভাগ নাজুক সংবেদনশীল কোন ঘটনার ক্ষেত্রে তাদের সহানুভূতি, দুর্বলতা এবং উদ্বেগকে বাড়িয়ে তোলে। ফলে পুরুষের তুলনায় হতাশা খুব খারাপভাবে জুড়ে বসে নারীদের মাঝে। 
“পরমাত্মা প্রত্যেকেই একই রকম করেছেন, পার্থক্য তো শুধু আমাদের মস্তিস্কের ভেতর”।  বুদ্ধ’র এই বিখ্যাত উক্তিই আজ চিরন্তর সত্য।
সসম্মানে বিয়ে করে, আল্লাহ্‌র কলমা পরে, সাত পাক ঘুড়ে মন্ত্র পাঠ করে যার স্ত্রী হয়েছেন। সেই পুরুষকেই যদি ধর্ষক বলে আখ্যা দেন। তাহলে আসল ধর্ষকের নাম কি রাখবেন?
বিজ্ঞানীদের মতে, পুরুষের তুলনায় নারীর যৌন চাহিদা বেশি। তফাৎ হল নারীতে সুপ্ত থাকে আর পুরুষে দ্রুত প্রকাশ পায়। শারীরিক মিলনে কি শুধুই পুরুষ আনন্দ নেয়? আপনি নারী, আপনি আনন্দ পান না? এতো অবলা বুঝি আমরা? 
দ্যা জার্নাল অফ সেক্স প্রকাশিত, ওহিও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের  প্রভাষক টেরি ফিসার উনার গবেষণায় পান- পুরুষ যৌনসহবাস নিয়ে বেশি চিন্তা করেন ঠিক কিন্তু একদম বেশিও নয়। পুরুষ দিনে ১৯ বার চিন্তা করলে নারীও দিনে ১০ বার এই নিয়ে ভাবনা করেন। একই গবেষণায় পেলেন, উভয়ে দিনে ১০০ বার বা এর বেশি এই চিন্তায় বিভোর থাকেন। তিনি এমন ও নারী পেয়েছেন যিনি দিনে ১৪০ বার যৌনসহবাস নিয়ে ভাবেন। 
টেরি আরো জানতে পারেন- পুরুষ দুটি জৈবিক চাহিদা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকেন তা হল ঘুম আর খাওয়া। যে চিন্তাটি নারীদের মাঝে আছে কিন্তু খুব কম। 
একটু পর্যবেক্ষণ করলে ফলাফল পাবেন তাপোৎপাদী বিক্রিয়ার ন্যায়। অর্থাৎ যে ক্রিয়ায় তাপ উৎপন্ন স্বাভাবিক। যৌন সহবাসের বেলায় উভয়ে উভয়ের প্রতি দুর্বলতা আছে। তাই নারীর কম পুরুষের বেশি বলে তাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে তাকানোর কোন অজুহাত বৈজ্ঞানিকভাবে আর টেকে না।  
তবুও এক শ্রেণীর মানুষ বলেই বেড়াবেন যে, না পুরুষের মস্তিস্কের সারাক্ষণ বাজে চিন্তাই বসবাস করে। নারীকে শোষণ, নির্যাতন, ভক্ষণ তার একমাত্র কাজ। 
“সেই যুক্তিতে তো আপনার বাবাও ধর্ষক আর আপনি নারী ধর্ষণের প্রমাণ”।  
আসুন এবার- দুটো কষ্টকর উপায় বাতিয়ে দিই,
- নিজের স্বামীকে আবার বিয়ে দিন। এতে আপনার যন্ত্রণা কমে যাবে।
- নিজের স্বামীকে অন্য কোন নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়াতে উৎসাহিত করুন। 
রাগ লাগছে? নিজের স্বামীকে অন্য নারীর পাশে কল্পনা করে? আপনার পাশে না ঘুমোলে কার পাশে ঘুমোবে?  তাহলে উপায় কি? 
-আপনার সাথে যৌন মিলন করলে ধর্ষক, 
-অপর নারীর কাছে গেলে প্রতারক।
-পুরো বেতন খরচ করেও সে নেতিবাচক?
-নারী আমরা আসলেই জলজ্যান্ত নীরব ঘাতক। 
তাই প্রথমে একটি কথা বললাম জীবন বায়োস্কোপ নয়। জীবন্ত যন্ত্র যার জ্বালানি হলো আপনার মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা, চেনতা।
পুরুষ, তাঁর মাঝে নারীর প্রতি দুর্বলতা আছে বলেই সে স্বসম্মানে বৈধ পন্থায় বিয়ে করছে। দুর্বলতাটি পুরুষের মাঝে থাকতে দিন। এই দুর্বলতা শেষ হয়ে গেলে মনে রাখবেন, পৃথিবীতে নারী জাতির মূল্য আর থাকবে না। 
এসব কনসেন্ট-কনসেন্ট খেলা বন্ধ করুন। 
“বিয়ে পবিত্র বন্ধন” কলুষিত করা বন্ধ করুন।
নিঃস্ব নরনারীদের কথা কানে নেওয়া বন্ধ করুন 
সুখ আর শুধুই সুখের সংসার কল্পনা বন্ধ করুন
কাল্পনিক চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে বাস্তব জীবনে ফিরে আসুন অথবা গ্লাসভর্তি পানি নিজের মুখে খুব দ্রুত ছুড়ে মারুন ঘুম ভেঙ্গে শীগগির জেগে উঠবেন।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours