অসীম সাহা, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রতিষ্ঠিত কবি, বাংলাদেশ:

আলেয়া চৌধুরী। ডাক নাম হীরা। আমরা যারা ওর কাছের ছিলাম, তারা সকলেই ওকে হীরা বলেই ডাকতাম। সেই কিশোরী বয়স থেকে ওকে চিনি।  কুমিল্লার এক অজপাড়াগাঁ থেকে ঢাকায় এসেছিলো জীবিকার সন্ধানে। সে এক দুঃসহ কষ্টকর জীবন।অচেনা..অজানা ঢাকা শহরে আপন কেউ ছিলো না। কবিতা লিখতো। সেই সূত্রে আমাদের সঙ্গে পরিচয়। বেঁচে থাকার জন্যে বাসের কন্ডাক্টরি করেছে, ট্রাক চালিয়েছে, সংবাদপত্রের হকার হিসেবে কাজ করেছে। রাতে ঘুমিয়েছে কমলাপুর স্টেশনে। জীবনসংগ্রাম করতে করতেই একদিন সমুদ্রপথে কিউবা হয়ে আমেরিকার নিউইয়র্কে চলে গেছে। সেখানেও কষ্টের জীবন অতিবাহিত করে জীবনে থিতু হয়েছে। নিজের গ্রামের বাড়িতে দালান তুলে দিয়েছে, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনদের সচ্ছল করেছে। নিজে অমেরিকায় দুটে বাড়ি করেছে; কিন্তু ঘর করা হয়নি তার। নিজের ফ্লাটে একাকীই নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতো। কয়েক বছর আগে হীরা বাংলাদেশে এসেছিলো। আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলো ওর ‘কবিতাসমগ্র’ বের করে দেয়ার। আমি যত্ন নিয়ে বের করে দিয়েছিলাম। খুব খুশি হয়েছিলো হীরা। ওর কথা অজস্র মানুষের কাছে বলেছি আমি। ওর জীবনসংগ্রামের কথা শুনে অনেকেই বিস্মিত হয়েছে, অনেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। কবি ও প্রাবন্ধিক ড. মোহাম্মদ আলী খান ওকে নিয়ে ‘আমেরিকায় আনারকলি’ নামে উপন্যাস লিখেছে। হীরা খুব খুশি হয়েছে। 
ওর এবছর দেশে আসার কথা ছিলো। কিন্তু দুরারোগ্য ক্যান্সার ওকে কুরে কুরে খাচ্ছিলো বলে শরীরটা একেবারেই ভালো যাচ্ছিলো না। তাই আসতে পারেনি। তার ওপর করোনা সেই না আসতে পারাটাকে দীর্ঘ করেছে। ১০/১২ দিন আগে কল করে বললো, “অসীমদা, শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। কখন কী হয়?” আশ্বাস দিয়ে বলেছিলাম, “কিছু্ হবে না হীরা।” কিন্তু কিছু হলো। হীরা আমাদের কাঁদিয়ে চলে গেলো। আর কোনোদিন তার সঙ্গে দেখা হবে না, ভাবতেই বুকটায় মোচড় দিয়ে উঠছে। চোখ থেকে ঝরে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু। কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না!
হীরা, তোমাকে মনে থাকবে বোন!

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours