দীপ্তেন্দু চক্রবর্তী, প্রবাসী লেখক, টরোন্টো, কানাডা:
আজ আপনাদের কিউবার কথা বলবো। বহুবার কিউবাতে গেছি, নানা শহরে। আমরা জানি কিউবা একেবারে দারুন উন্নত দেশ। ওখানে মানুষেরা খুব ভালো আছে, ফিদেল কাস্ত্রো কিউবাকে শ্রেষ্ঠ কমুইনিস্ট দেশে পরিণত করেছে। ফিদেল নিজেকে মার্কিস্ট লেনিনস্ট মনে করতো। ১৯২৬ সালে ফিদেল কিউবার সান্তিয়াগোতে জন্ম গ্রহণ করে। বাবা স্পেন থেকে এসেছিলেন। তার ছিল বিশাল চাষ বাসের ব্যবসা। খুব ধনী। ফিদেল হাভানা থেকে আইন পাশ করেছিল ১৯৫০ এ। তারপর নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিল কিন্তু অত্যাচারী বাতিস্তা সেই নির্বাচন করতে দেয়নি। কিউবার মানুষ ব্যাতিস্তার অত্যাচারে খেপে ছিল। কিন্তু নেতা কোথায় ঐক্যবোধ করে প্রতিবাদ করার? ঠিক যেন আমাদের রাজ্যের অসহায় মানুষ? মগের মুল্লুক চলছে, প্রাইভেট হাসপাতাল কি ভাবে জালিয়াতি করে চলেছে? সরকার এদের সাথে মিলে কাটমানি তুলছে। নেতা নেই। ফিদেল সেই করুন অবস্থা বুঝতে পেরেছিল। ১৯৫৩ সালে একদল বিপ্লবীদের গঠন করে আক্রমণ করলো মনকাদা জেল। সান্তিয়াগোতে। কিন্তু ধরা পরে গেলো। ওদের জেল হলো পনেরো বছরের। ১৯৫৫ এ ছাড়া পেলো, ব্যাটিস্টা করুণা দেখালো আমেরিকার চাপে পরে। ফিদেল চলে গেলো মেক্সিকোতে। সেখানে দেখা হলো আর্নেস্ট চে গুয়েভারার সাথে। আবার বিপ্লবের পরিকল্পনা। আবার আক্রমণ। এবারও বাতিস্তাকে হটাতে পারলো না।
একটা ছোট বোট নাম "গ্রান্ডমা" তাতে চেপে বিপ্লবীরা আক্রমণ করেছিল। সেই গ্রান্ডমা এখনো হাভানার মিউজিয়ামে আছে। এবার ফিদেল পালিয়েছিলো শিয়ারা মউন্টটেনে। আবার আক্রমণ করে ১৯৫৭তে বাতিস্তা আমেরিকাতে পালালো।
কিউবা কমুনিস্ট ফিদেল কাস্ত্রর হাতে চলে যাবে সেটা আমেরিকা একেবারে সহ্য করতে পারেনি। ১৯৬১ এ বহু কিউবান যারা পালিয়ে আমেরিকাতে এসেছিলো তারা ফিদেলকে তাড়াতে চাইছিলো কেননা তাদের সব ব্যবসা সম্পত্তি ফিদেল নিয়ে নিয়েছিল। তাই আমেরিকার ষড়যন্ত্রে এইসব কিউবানরা আমেরিকার সি আইএ'র ষড়যন্ত্রে কিউবা আক্রমণ করেছিল। কিন্তু এই আক্রমণের খবর ফিদেল আগেই পেয়ে গিয়েছিলো। তাই বহু আমেরিকান কিউবানকে সেই যুদ্ধে শুকরের মতো মেরে দেওয়া হয়। তাই এর নাম হয়েছিল 'বে অফ পিগস'। এইবার রাশিয়ার ক্রুচেভ ভেবেছিলো কিউবাতে রাশিয়ার ঘাঁটি করবে। ১৯৬২ অক্টোবর মাসে প্রেসিডেন্ট কেনেডি মিলিটারির তোলা ছবিতে দেখলো যে মারাত্মক সব মিসাইল রাশিয়া হাভানাতে বসাচ্ছে। তারমানে সেই মিসাইল যখন তখন আমেরিকার শহরকে ধ্বংস করে দিতে পারবে। মোট নব্বই মাইল দূর আমেরিকার ফ্লোরিদা শহর। প্রেসিডেন্ট কেনেডি সঙ্গে সঙ্গে কিউবা অবরোধ করে রাশিয়ার মিসাইল ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দিল আর কিউবাকে ঘিরে ফেললো। সে এক সাংঘাতিক তৃতীয় যুদ্ধের অবস্থা। এই সময় আবার একটা গুপ্তচর আমেরিকান বিমানকে রাশিয়া গুলি করে নামিয়ে দিলো। ক্রুশ্চেভ বুঝতে পেরেছিলো যে রাশিয়া থেকে এসে আমেরিকার সাথে যুদ্ধ করা মুশকিল। তাছাড়া এই মিসাইল কখনো আমেরিকা মেনে নেবে না। আমরা দেখেছি ইসরায়েল বহুবার ইরকি মিসাইল বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়েছে।বসাতে দেয়নি দেশের প্রতিরক্ষার জন্য। ক্রুশ্চেভ ঠান্ডা মাথায় নেগোসিয়েশন করে মিসাইল সরিয়ে নিলো।কেনেডিও চুক্তিতে মেনে নিলো যে আমেরিকা কিউবাকে আক্রমণ করবে না। ইচ্ছা করলে আমেরিকা যে কোনদিন কিউবাকে নিয়ে নিতে পারে। আমার আরেক ভয়াবহ যুদ্ধ থেকে রক্ষা পেলাম।
ইতিহাস পড়ে নেবেন কিউবার। আমি যা দেখে এসেছি কিউবার সামাজিক অবস্থা তা খুবই খারাপ।ফিদেল নাগরিকের ঘর বাড়ি সব নিয়ে নিল । কেউ সম্পত্তি রাখতে পারবে না বা কেউ কোনো ব্যবসা করতে পারবে না। বিশাল বিশাল বাড়িগুলো দখল করে নিলো সরকার। সেখানে গরিব বড়োলোক ভাগ করে থাকতে শুরু করলো। বাড়ির মালিক একটা ঘরে আর পাশে একজন রিকশাওয়ালা। আমেরিকার সাথে কোনো সম্পর্ক না রাখার দরুন সমস্ত ব্যবসা বানিজ্য একেবারে নষ্ট হয়ে গেলো। রেশন ব্যবস্থায় মানুষ খেতে পায় না ভালো করে। খাবার নেই বাজারে।কিনতে পারবেন না। হাসপাতাল ছাড়া কোনো চিকিৎসা নেই, ফ্রি।স্কুল সবাইকে যেতে হবে, ফ্রি। এসপিরিন পাবেন না বাজারে মাথা ধরলে। দেখেছি গরিব মানুষ রাস্তায় ভয়ে ভয়ে সামান্য জিনিস বিক্রির চেষ্টা করছে। ছবি বা হাতের কাজের কিছু। হার জির জিরে। কিউবার আয় এখন বহুদিন ধরে পর্যটন শিল্প, স্প্যানিশরা এসে নানা রিসর্ট করেছে। বহু সমুদ্রতট দারুন কিউবার। ওষুধের কারখানা প্রচুর, সারা ল্যাটিন আমেরিকার দেশে ওষুধ বিক্রি করে।এখন খানিকটা চার দিয়েছে, মানুষ বাড়ি কিনতে পারছে, কিছু ব্যবসা করছে। আমেরিকার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার কথা কিন্তু এখনো হয় নি। কোনো আমেরিকান কিউবাতে যেতে পারে না। বেড়াতেও না। ইউরোপে কানাডা থেকে হাজার ২ পর্যটক যায় প্রতি বছরে। আরো গল্প বলবো আগামী দিনে। (ক্রমশঃ)
(ছবি: কিউবার আম গাছ। সৌজন্যে: প্রতিবেদক)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours