মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, লেখিকা, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর:

শরতের নীল আকাশ জানান দিচ্ছে মা আসছেন। সেই মতোই প্রথম পুজ্য সিদ্ধিদাতা গনেশ ঠাকুরের পুজো দিয়ে আমাদের বারো মাসে তের পার্বণের সুচনা হোল। কিন্তু সেই আনন্দের মাঝেই একটা বিষয়ে বড় অবাক হলাম। তা হোল দেবদেবীদের মেরুকরণ।

ফেসবুকের সেকুলার বাঙালি কবিদের দৌলতে জানলাম গনেশ, কৃষ্ণ অবাঙ্গালী। তাই তার পুজো কেন করা হবে? রাম বহিরাগত। বাঙালিরা কেন রাম ভক্ত হবে ইত্যাদি। সত্যি বলছি সব দেখে শুনে কেমন ভেবলে যাচ্ছি। আজন্মকাল বাঙালিরা যাদের ঈশ্বরের নানা রূপ হিসেবে শুদ্ধাচারে পুজো করে এসেছে আজকাল এই অতি শিক্ষিত আত্মঘাতী বাঙালির জন্য সেইসব ঠাকুর দেবতাদের নতুন করে চিনতে হচ্ছে। আসলে  আমরা যারা আস্তিক তারা আসলে মুর্খ। প্রকৃত শিক্ষিত ঐ ফেসবুকীয় কবি, আঁতেলগন যারা নিজ ধর্মের সব খারাপ  আর পর ধর্মের সব ভালো বলে নিজের ঘরেই আগুন লাগায়।  

আমি সেই ছোট থেকে খড়গপুরে সব পুজো দেখে আসছি। পীরবাবার মাজারেও পুজো দিতে গেছি। আবার মাতা পুজোর জলুসে আনন্দে সামিল হয়েছি। কখনো ভেদাভেদ আসেনি। সবাই নিজের মত করে নিজ ধর্মাচরণ করে এসেছে। কারো কোন সমস্যা হয় না তো। কত আনন্দ করতাম পুজোয়।

গনেশ থেকে শীতলা সব। বিভিন্ন ধরনের পুজো। কখনো এসব শুনিনি। তবে এবারে দেখছি আঁতলামোর ঢল নেমেছে। রাম বহিরাগত। গনেশ অবাঙালিদের ইত্যাদি। সেদিক থেকে দেখতে গেলে মা দুগ্গাও তো হিমালয়ে জন্মেছিলেন। তবে বাঙালি তাঁর পুজোও করবে না বোধহয় এবার। কি আঁতলামো রে বাবা।

এদিকে অবাঙালিদের ঘৃণা করছো অথচ রুজির টানে বাংলা ছেড়ে অন্য রাজ্যে দৌড়তে হচ্ছে। তখন বাধছে না? এমনকি ছেলেমেয়েদের ট্যাঁশ বাঙালী বানিয়ে রেখেছ। ওয়ান পাইস ফাদার মাদার তাদের। আবার পুজোর সময় গুলো এলেই তাদের মনে গরীবের জন্য দুঃখের বান ডাকে। দুধ শিবের মাথায় ঢেলে নষ্ট করবেন না, পুজোয় খরচ না করে গরীবকে সাহায্য করুন, আমার দুর্গা তোমার দুর্গা ইত্যাদি। অথচ এরাই সারা বছর জোম্যাটো, সুইগি কেএফসি, সাউথ সিটিতে টাকা ওড়ায়। তখন গরীবদের দেখতেও পায় না।

বলি আপনাদের যত দরদ হিন্দুদের পুজোর সময় উথলে ওঠে। কই 25ডিসেম্বর বা নিউ ইয়ারে পার্ক স্ট্রীটের মোচ্ছবে মাল খেয়ে, পরের বৌ মেয়েদের হাত ধরে টানাটানি করে মস্তি করার সময় মনে পড়ে নাতো!ইদের দিন বিরিয়ানির গন্ধ শুঁকতে শুঁকতেও তো কোন এ জাতীয় দরদ ভরা পোস্ট দেন না।

আমি আজ এত বছর অবাঙলিদের সাথে আছি কখনো তাদের দেখিনি আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে। বরং আমি হিন্দি বললে তারা বাংলায় কথা বলে আমার সাথে। আমার পাড়ায় মিলেমিশে সব উৎসবে সামিল হই। হিন্দুদের দেবদেবীদের হিন্দু মতেই পুজো করি। বাঙালি অবাঙালি প্রসঙ্গ সেখানে আসে না। আসলে কিছু মুখোশধারী অমানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে এই বিভাজন করে ভারতের হিন্দুদের মধ্যে ভেদ আনতে  চাইছে। নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে। কিন্তু তাতে ভারতবর্ষের আত্মার কোন ক্ষয় হবে না। বাঙালী অবাঙালি নিয়েই আমাদের এই ভারত। আমরা সকলে একসাথেই উৎসবের আনন্দে মেতে উঠবো। যারা এর বিরোধিতা করবে সময় তাদের জবাব দেবে। তারা নিজেরাই একদিন কালের স্রোতে হারিয়ে যাবে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours