সুপর্ণা ভট্টাচার্য, নাট্যকর্মী, বজবজ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা:

এক সংবেদনশীল বন্ধুর কাতর অনুরোধ 'বাঙালি নারী' দের ওপর ঘৃণা বর্ষণ হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করার জন্য। এ পুঞ্জীভূত ঘৃণার পরিপ্রেক্ষিতে রয়েছেন সদ্য প্রয়াত এক উজ্জ্বল  অভিনেতার বাঙালি বান্ধবী (অবশ্য তিনি বাঙালি কিনা, এ বিষয়টিতেও মতবিরোধ, বিভিন্ন বক্তব্য পড়ে তাই মনে হয়েছে)। যার বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার অভিযোগ উঠেছে, প্রয়াত অভিনেতার মৃত্যুর নেপথ্যে তিনিও দায়ী, এই মর্মে। অপরাধ প্রমাণিত হয়নি এখনো। তবু আমরা তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তীর নিক্ষেপ আরম্ভ করে দিয়েছি। এই প্রবণতা পূর্বেও ছিলো। অধুনা বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কোন একজনের, সে নারী, পুরুষ নির্বিশেষে, তার‌ একটি সামান্যতম ছিদ্র আবিষ্কার হলেই, সে ছিদ্র গভীর করতে থাকি, নির্মম ভাবে। তাতে আবর্জনার স্তূপ জমতে শুরু করে। তবে নারী হলে সুবিধা বেশী। অবধারিত রূপে শরীর আশ্রিত বাক্য গঠন হয়, এবং তা অবশ্যই পূতিগন্ধময় ।

ভারতবর্ষের ঐশ্বর্য যে ঠিক কোথায়, আমরা ক্রমশ তা বিস্মৃত হচ্ছি। আমাদের পূর্বপুরুষদের বিচার করার যে মানদণ্ড ছিলো, যে দূরদৃষ্টি ছিলো, তা আমাদের নেই। আমরা বর্তমানে মানুষের সঙ্গে আত্মীয়ভাবে মিশে পরস্পরকে অন্তর থেকে গ্রহণ করতে পারি না বলেই আমার উপলব্ধি। এক্ষেত্রে আমরা পরস্পরের নিরানন্দের বিষয় অন্বেষণ করে চলেছি। জাতিধর্ম নির্বিশেষে।

তাহলে কি আমরা শিক্ষাকে গ্রাস করছি, তাকে জারিত করছি না? আন্তরিক অনুরাগের সঙ্গে জ্ঞানকে গ্রহণ করছি না? চিত্তকে সিঞ্চিত করছি না অর্জিত অভিজ্ঞতায়?

পুঁথিগত শিক্ষা ব্যতীত দিনযাপনের শিক্ষা, প্রকৃতি থেকে অধীত শিক্ষা কি আমাদের মস্তিষ্ক ধারণ করছে না?

প্রবল পক্ষ, দুর্বল পক্ষকে পদানত করেই রাখে, এ সনাতন রীতি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করাও তো এক অমোঘ সত্য।  আমরা তার পরিবর্তে শাস্ত্র, সমাজ, ধর্ম সকল ক্ষেত্রেই এক ধূসর ধারণার বশবর্তী হয়ে নিজেরাই নিজেদের বঞ্চনা করছি, অহরহ।

আলো আসার সমস্ত বাতায়ন রুদ্ধ করেছি। ধীরে ধীরে বিষ মিশছে আমাদের চেতনায়। তাহলে চিন্তার বিদ্যুৎশিখা কে জ্বালাবে অন্তরে? অদৃশ্য বিবেক ব্যতীত? কিন্তু আমরা নিজেরাই যে  প্রবেশ করছি এক কৃষ্ণগহ্বরে। জ্ঞানে? অথবা অজ্ঞানে?

পিরামিড দৃশ্যত সুন্দর, কিন্তু তা বাসযোগ্য কি? আমাদের মৃতবৎ করে আমাদের মননকে ক্রমাগত হনন করছে কোন শক্তি? যার থেকে জন্ম নিচ্ছে এমন অশ্লীল যুক্তিহীন আক্রমণ? এমন নির্মম উল্লাস, অস্ত্রহীন প্রতিপক্ষর প্রতি?

বিশুদ্ধ তর্ক করার প্রয়াস নেই। ক্ষুদ্র পরিবারে, গৃহকোণে বসে বিশাল মানবসমাজের বিচার করছি! কোন মূর্খামিতে?

প্রকৃত কোনো কাজে, কল্যাণকর কোনো কাজে মুষ্টিমেয় কয়েকজন নিমগ্ন। আর আমরা যারা আদতে জড়ভরত, তারা হিসাব করতে বসছি পরস্পর, পরস্পরের দোষের। অন্তরালে থেকে নিদান দিতেই থাকছি, 'এমন করে বলবে, এমন করে চলবে, এমন করে বসবে, এমন করে উঠবে'। 

আমাদের জীবনের কি এটিই উদ্দেশ্য? দর্পণকে, সাক্ষী না রাখা?

প্রতিটি দিন রাগ, দ্বেষ, লোভ, মোহ, মিথ্যাচার আমাদের ভিত্তিমূল জীর্ণ করছে। কিন্তু বিশ্বাস করতে চাইছি না সে সত্য। কেনো?

মানসিক স্বাধীনতা না থাকলে পাপপূণ্যর অর্থই তো থাকে না। নিখুঁত সম্পূর্ণ মানুষ তো হয়নি কখনো।আঘাত সংঘাতের মধ্যে থেকেই তো উত্তরণ।

আমরা কি 'সুন্দর' হবো না আর?

এ প্রশ্ন নিজের কাছেই।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours