মনের আকাশ কালো হলেও নামে স্মৃতির বৃষ্টি। ফিরে যাই ছোটবেলায়।
মাঝে মাঝেই আমার ছোটবেলা আমায় ডাকাডাকি করে।
"ওপারেতে বিষ্টি এল,
ঝাপসা গাছপালা।
এপারেতে মেঘের মাথায়
একশো মানিক জ্বালা।
বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে
ছেলেবেলার গান—
বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর,
নদেয় এল বান"
জলছপছপ পায়ে কেডস মোজা ভিজিয়ে স্কুলে আসা।
ছাতা না খুলে ইচ্ছে করে ভেজা। দু বিনুনি দুলিয়ে খোলা
আকাশের নীচে খুব করে ভিজে গোলগোল চোখে মেঘলা দিনের আনন্দ লুটেপুটে নেওয়া।
স্কুলে সেদিন খুব কম জন আসত। তাই দিদিরা তিন সেকশন এক করে ক্লাস করে দিতেন। সেকশন আলাদা হয়ে যেতে যে বন্ধুরা আলাদা হয়ে যেত, তারা মিলেমিশে এক হতাম এই দিনে। ভিজে সবাইকে দিদিরা অনেক গল্প বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একটু অংক করিয়ে নিয়ে ভুতের গল্পের আবদার মেটাতেন।
তারপর হয়ে যেত রেনি ডে।
রিকশা করে নিতে আসত গোপাল কাকা। তাকে বলতাম আমি আজ বন্ধুদের সাথে যাব। তারপর অনেক রাস্তা হেঁটে অনেক ঘুরপথে বাড়ি যেতাম আমরা। আসেপাশের স্কুলের ছেলেমেয়েরাও ছুটি পেয়ে আমাদেরই মত মজাতে বাড়ি ফিরছে। সবার পা জলে ভিজে সাদা। ভিজে চুল ভিজে শাড়ি জামা সেটাই ছিল মজা। এত কনশাস কেউ ছিলাম না।
জল জমা মানেই পা ডুবিয়ে মজা। জল ছিটিয়ে পাশ দিয়ে ছুটে যেত লরি বাস।. ওই ছিটকে আসা জল গায়ে লাগলেই হইহট্টগোল করে হাসির ফোয়ারা। তখন তো জমা জলে লন্ডন না ভেনিস বলে রাজনীতির মানসিক দূষণ এসে ছোঁয়নি আমাদের ওই মন গুলোকে আর আশেপাশের মানুষগুলোকে। তারাও ডেকে বলত বাড়ি যা সব। কেউ বলত দাঁড়া তোদের বাড়িতে বলছি। ধুর কে শোনে কার কথা।
আমরা তখন অন্য সুরে সাধা
"আমরা চঞ্চল আমরা অদ্ভুত" পাগলামি আর ভালোলাগা একসাথে নিয়ে পথ হাঁটতে থাকি।
হাঁটতে হাঁটতে আজ অনেক দূর চলে এসেছি সেই মেয়েবেলা থেকে। এখন ছাতা নিয়ে জল ডিঙিয়ে সাবধানে পা ফেলি।
কখনো মন সাথ দেয় না মনে হয় -
"ছই ছাপা ছই, ছাপ্পা কে ছই" করে পা ডুবিয়ে জল ছিটিয়ে ফিরিয়ে আনি আমার ওই দিনগুলো। আজ কিছুটা সাধ মিটিয়েছি জল ছপ ছপ করে।
আর খুব মনে করেছি সেই সঙ্গী সাথীদের। মন জুড়ে আজ মনে করার বৃষ্টি। আমি ভিজে চলেছি। আর ভালোলাগার নৌকা ভাসিয়ে দিচ্ছি জলে...
Post A Comment:
0 comments so far,add yours