''পৃথিবী... জনশূন্যা।...আর ধন জন্মে না। যে যাহার পায়, কাড়িয়া খায়।''
প্রায় দেড়শ বছর আগে 'আনন্দমঠ' এ বঙ্কিমচন্দ্র যে ছবি এঁকেছিলেন, পৃথিবী আবর্তিত হতে হতে যেন আবার সেই প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে। Bio -weapon হোক বা অজানা ভাইরাস, করোনার আক্রমণে এক কঠিন সঙ্কটকালের মুখোমুখি আমরা। তারই মধ্যে জাতীয় উৎসব- স্বাধীনতা দিবস পালনে মেতে উঠবে ভারত। পাঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট থেকে শুরু করে আসমুদ্রহিমাচল ধ্বনিত হবে -
'তুমি বিদ্যা তুমি ভক্তি
তুমি মা বাহুতে শক্তি
ত্বং হি প্রাণাঃ শরীরে।
বন্দে মাতরম্। '
ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকার দিকে তাকিয়ে ভারতবাসী কি এই গানের কথার অর্থ ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সঠিক অনুধাবন করতে পারবে?
২০১৯র ১৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করেছিলেন - প্রথমতঃ একবিংশ শতাব্দীর ভারত গঠন - কী ভাবে তা এগোবে, কাজ করবে ও ভাববে। দ্বিতীয়তঃ প্রত্যেক ভারতীয়র উন্নতি প্রয়োজন যাতে দেশ দ্রুত এগোতে পারে। দরিদ্রদের হাত ধরা আমাদের দায়িত্ব।
কিন্তু এই লক্ষ্যপূরণে সাফল্য কি এসেছে? যাদের পরিশ্রমের ফসলে নবান্ন উৎসবে মাতি, তারা কি যথার্থ প্রাপ্য পায়? তারাশঙ্করের 'ইমারত ' গল্পের জনাব আলির মতো সারাজীবন মন্দির, মসজিদ, গির্জা, গম্বুজ, মিনার গড়ে তোলে তারা ,সেই ছাদের নিচে নিশ্চিন্ত আরামে ঘুমোই আমরা আর শেষ জীবনে আশ্রয়হীন মূূমূর্ষু জনাব আলিরা বৃষ্টিতে স্বস্তি পায় বুড়ো বটগাছের পাতায় পাতায় ঢাকা গোল গম্বুজের মতো মাথার তলায়। ' খোদাতালার নিজের হাতে গড়া ইমারত। ' ভেবে দেখি না, কেন পরিযায়ী শ্রমিকরা তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে? বরং মেতে উঠছি ইঁটকাঠ পাথরের মন্দির আর মসজিদের দ্বন্দ্বে।
নিজেরা লড়াই করিনি বলেই হয়তো সেই সর্বস্ব পণ করা ও তার ফলশ্রুতিতে প্রাপ্ত স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্য দিতে শিখিনি আমরা -- এই আত্মজিজ্ঞাসার সম্মুখীন হওয়ার সময় কি এখনো আসেনি? 'বন্দেমাতরম' উচ্চারিত হলে জনগণমনের নিথর জীবনে আর কবে তরঙ্গ উঠবে, বানের জলে ভেসে যাবে সংস্কার আর ভ্রান্ত বিশ্বাসের বাঁধ, শবরীর মতো শ্রেষ্ঠ ভিক্ষা অবলীলায় তুলে দিতে পারবো ভারতমাতার আঁচলে - সেই নিষ্ফল অপেক্ষাতে কেটে যাচ্ছে একের পর এক স্বাধীনতা দিবস।'' স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী...
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শাণিত কথার ঝলসানি লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি ......
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা। ''
লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে যে সুখের স্পর্শ অর্জন করেছিলেন বিপ্লবীরা, আজও যাকে প্রাণ দিয়ে রক্ষা করছেন সীমান্তের শহীদ সেনারা, ক্যালেন্ডারে লাল কালিতে দাগ দেওয়া বছরের একটি ছুটির দিন ছাড়াও তার যে অন্যতর কোনো তাৎপর্য আছে, তা অনুভব করা ও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে সেই বোধকে চারিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করার শিক্ষা, করোনাকালের সঙ্কট যদি না আমাদের শেখাতে পারে, তবে ১৫ই অগস্টের সঙ্গে অন্য আর পাঁচটা ছুটির দিনের কোনো পার্থক্য থাকবে না।
সংবিধান অনুযায়ী ভারতবর্ষ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, কিন্তু ভারতভূমির অন্তর্নিহিত আদর্শে ধর্মকে অস্বীকার করা যায় না। প্রাচীন সার্বভৌম ভারতের ছায়ায় বাস করে ধর্মকে শ্যাওলা মুক্ত করাই হোক ভারতবাসীর দায়িত্ব। মহামতি মৈত্রেয় বুদ্ধের সত্যধর্মের প্রতিনিধি হওয়ার স্বপ্ন দেখুক নতুন ভারত। সেই আদর্শ ভারত গঠনে নিজের শরণ নিজেকেই হতে হবে :
"আত্মদীপো ভব।"
Post A Comment:
0 comments so far,add yours