সুব্রত দাম, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

আপনারা প্রত্যেকেই স্পাইডারম্যান, শক্তিমান, ও আরো নানান কাল্পনিক চরিত্র গুলোর নাম তো শুনেছেন নিশ্চয়ই । কিন্তু কখনো কি শুনেছেন, আমাদের ভারতবর্ষেও এমন এক জন মানুষ আছেন যিনি কিনা ওই কাল্পনিক চরিত্র গুলোর মতো নয়। তার চারিত্রিকটা পুরোটাই বাস্তব।

চলুন, আজ আমরা এই মানুষটির সম্পর্কে কিছু কথা জানি।

বর্তমানে ৪৫ বছর বয়সী 'নরেশ কুমার' নামে এই মানুষটি উত্তরপ্রদেশের মুজাফ্ফর নগরে বসবাস করেন। তিনি পেশাদারিত্বে ডোম। পাঁচ সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। এই নরেশ কুমারকে তার আসল নামে খুব কম লোকই চেনে। তিনি তার এলাকায় "হিউম্যান লাইট বাল্ব" নামেই বেশি পরিচিত। এবার ভাবছেন, কি অদ্ভুত এই নাম, তাই না !!, ভাবছেন, এমন নাম কি আবার কারো হয় নাকি!!

দেখুন, মানুষ ভেদে প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু শখ থেকে থাকে। স্বাভাবিক ভাবে এই মানুষটিরও তাই আছে। তবে, এই মানুষটির শখটা একটু অন্য ধরনের। এই মানুষটি ইলেকট্রিকের শক নেওয়া কে নিজের শখে রূপান্তরিত করেছেন।

ঘরে যদি কোন খাবার না থাকে তবে তিনি নাকি  ইলেকট্রিকের শক খেয়েই তার পেট ভরিয়ে নেন। ভাবুন..., যে ইলেকট্রিক তারের অতি সামান্য শকে আমাদের মাথা ভিরমি খেয়ে পরে সেখানে এই ব্যক্তিটি খালি হাতেই হাই ভোল্টেজ তার ছুঁতে কোন ভয় পান না।

নরেশ কুমার যে এই অদ্ভুত ক্ষমতার অধিকারী এই ব্যাপারটা তিনিও আগে কখনো জানতেন না। তার কর্মস্থলে একদিন ভুল বশত ১১০০ ভোল্টের খোলা ইলেকট্রিক তারে তার হাত লেগে যায়। তখন তিনি লক্ষ্য করেন যে ইলেকট্রিক শক লাগার পরও তিনি সেই ব্যাপারটা বিন্দু মাত্রও বুঝতে পারেন নি। এর পর থেকেই তিনি তার এই অলৌকিক ক্ষমতাকে নিজের নেশায় রূপান্তরিত করেন। এরপর তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে থাকেন। ফ্রিজ, টেলিভিশন,ওয়াশিং মেশিন এমন কি হিটারের খালি কয়েলেও তিনি হাত দিয়েছেন। তা ছাড়া তিনি তার শরীরের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রিক পাশ করে বাল্বও জ্বালিয়েছেন। ইলেকট্রিকের খালি তারকে তিনি নিজের জিভের মাঝে ঠেকিয়ে রেখেও দেখেছেন তাতে তার কোন অসুবিধা হয় না।

যার খাবারের তালিকায় দশ থেকে বারোটা চাপাটি ছিল প্রতিদিনের রুটিনে। সেই রুটিন খানিকটা কমিয়ে এখন তিনি তার বাকি পেটটা ভরেন ইলেকট্রিক শক খেয়ে। তিনি বলেন তিনি নাকি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তারকে যদি ৩০মিনিট ধরে বসে থাকেন তা হলে নাকি তার পেট ভরে যায়।

তিনি বলেন "আমি বিদ্যুতের মত খাবার খাই"।

আসলে তিনি মনে করেন তার শরীরের ৮০ শতাংশই নাকি বিদ্যুৎ দিয়ে তৈরি।

পরীক্ষকেরা তার এই দাবির সত্যতা যাচাই করার জন্য বিদ্যুত দিয়ে তাকে চার্জ করেছিলেন। তাতে অবশ্য নরেশ কুমার তার শরীরে কোন ব্যথা অনুভব করেন নি বরং তিনি সেই পরীক্ষায় স্ব-সন্মানে উতরে গিয়েছিলেন।

তার স্ত্রী শর্মিষ্ঠা, যার বয়স ৪২ বছর,  তিনি ও তার স্বামীর এই অদ্ভুত শখ দেখে নিজেই শকট্। তিনি বলেন তাদের বাড়িতে সব সরঞ্জাম মেরামতির জন্যই নাকি তিনি তাকে রেখেছেন। তিনি এও বলেন যে তাদের ঘরের সুইচ বোর্ডে নাকি কোন সুইচ-ই নেই। তাই তিনি সবসময়  ছেলেদের নিয়ে খুবই আতঙ্কিত থাকেন। এদিকে, নরেশ মনে করেন, তিনি অনন্য, তিনি যেটা পারেন সবাই সেটা পারেন না তাতে তার স্ত্রী তার এই কাজে মুগ্ধ না হলেও বাকি সকলেই তার পাশে থাকবে এ বিশ্বাস তার মনে আছে।

এই অদ্ভুত ক্ষমতা নিয়ে তা হলে চিকিৎসা বিজ্ঞান কি মনে করছেন?

চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু কিছু মানুষের নাকি ঘর্মগ্রন্থি থাকে না। তাছাড়া শক সহ্য করার ক্ষমতা সবার সমান হয় না।নরেশের শরীরে এমনই কিছু অজানা ফর্মুলা কাজ করছে। যার ফলে ইলেকট্রিকের শক না খেয়ে সেই শকে নরেশ কুমার তার পেট ভরাচ্ছেন। 

যেখানে দশ মিলি এম্পায়ার কারেন্ট প্রবাহিত হলেই মানুষের মৃত্যু অবধারিত সেখানে নরেশ কুমার কি ভাবে ওই হাই ভোল্টেজ তার ছুঁয়েও বেঁচে থাকছেন। সে রহস্যটা কি রহস্যই রয়ে যাবে নাকি সেই রহস্য উদঘাটন করা যাবে তা সময়ই বলবে।

সে যাই হোক না কেন, নরেশ কুমার তার এই প্রতিভার জন্য একদিন যেন খ্যাতি অর্জন করে এবং তার এই অলৌকিক প্রতিভা দিয়ে যে কোন ধরনের প্রতিযোগিতায় যাতে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন এই কামনাই করি।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours