সুব্রত দাম, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

"একেই বলে কপাল যদি দেয় সাথ তো দুনিয়া বলবে-ক্যায়া বাত ক্যায়া বাত" হ্যাঁ, এই দুনিয়াতে যার অর্থ যতো বেশি তার মানও ঠিক ততটাই বেশি। অর্থই সমাজে বড়ো পরিচয় এনে দেয় । আজ আমরা বিশ্বের এমনই এক ধনীর কথা জানবো। যে বিশ্বের ধনীদের তালিকায় তার নামকে সমসময়ে এক নম্বরে রেখেছে। মনে পড়ছে বিশ্বের কতকগুলো ধনী ব্যক্তির নাম। 

না চলুন, আজ আমরা এমনই এক ধনীর সাথে পরিচিত হই। আপনারা শুনলে হয়তো অবাক হবেন এই ধনী কোনো ব্যক্তি নয় এটি একটি জার্মান শেফার্ড কুকুর। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন। ইনি হলেন সেই বিখ্যাত সারমেয় যার নাম 'গুন্ঠার-ফোর'। নামটা নিশ্চয় এর আগে শোনেন নি কখনো, তাই তো। 

চলুন আজ আমরা জেনে নি কীভাবে এই সারমেয়টি এত এত টাকার মালিক হ'লো।

ঘটনাটির সূত্রপাত ১৯৯২ সালে। জার্মানির কাউন্টেস কার্লোটা লেইবনস্টাইনের প্রিয় পোষ্য ছিল গুন্ঠার-ফোরের বাবা গুন্ঠার-থ্রি। সে এতটাই বিশ্বস্ত আর প্রভুভক্ত ছিল যে মৃত্যুর আগে কাউন্টেস কার্লোটা তার নামে এক অবিশ্বাস্য উইল তৈরি করে গিয়েছিলেন। তাঁর ৫৭৩ কোটি টাকার সম্পত্তি দান করে দিয়েছিলেন তাঁর দীর্ঘদিনের ছায়া সঙ্গী গুন্ঠার-থ্রি'কে। তার এই দান করা অর্থ যাতে নয়ছয় না হয় তাই তিনি এই অর্থের দেখভাল করার ভার তুলে দিয়েছিলেন একটি ট্রাস্টের হাতে।

গুন্ঠার-থ্রির মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে তার এই বিশাল সম্পত্তির মালিক হয় তারই পুত্র গুন্ঠার-ফোর। তার বাবার ওই ৫৭৩ কোটি টাকার সম্পত্তি বর্তমানে সুদে-আসলে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৮৬৮ (দুই হাজার আট শত আটষট্টি) কোটি টাকায়। যে টাকার একমাত্র মালিক বর্তমানে গুন্ঠার-ফোর নামের এই কুকুরটি। ভাবা যায়।
এখানেই শেষ নয়। গুন্ঠার-ফোরের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার কথা শুনলে আপনাদের চক্ষু চড়কগাছ হবে এটা নিশ্চিত। তার নামে বাহামা, ইতালি ও জার্মানির বিভিন্ন জায়গায় কেনা হয়েছে বিশাল বিশাল এস্টেট। এমন কি ৫৩ কোটি ডলার খরচ করে আমেরিকার মিয়ামিতে তার নামে কেনা হয়েছে একটি বিলাসবহুল প্রাসাদ। যে প্রাসাদটিতে একসময় বসবাস করতেন সারা বিশ্বে খ্যাতনামা গায়িকা ও অভিনেত্রী ম্যাডোনা ।

আরো আছে, গুন্ঠার-ফোরের এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানোর জন্য কেনা হয়েছিলো একটি প্রাইভেট জেট। তাঁকে রক্ষা করার জন্য তাঁর সাথে সবসময়ের জন্য থাকতো একদল নিরাপত্তারক্ষী। কখনোই তাঁর পা মাটিতে পড়তো না কারণ সে যেখানেই যেত তার সাথে থাকতো দামি লিমুজিন। আর মাঝে মধ্যে সে যখন সমুদ্রযাত্রায় যায় তখন, সে তাঁর নিজস্ব বিলাসবহুল ইয়টে চড়ে ঘুরে বেড়ায়। গুন্ঠার-ফোরের প্রাসাদে তাঁর জন্য আছে ম্যাসাজ পার্লার, জিম এমন কি সুইমিং পুল ও।

সে কিন্তু বেশ খাদ্যরসিক। তাই কোন উল্টো পাল্টা খাবার কিন্তু তাঁর আবার মুখে রোচে না। তাই তাঁর খাবারের তালিকায় থাকে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় খাবার "ক্যাভিয়ার" মাছের ডিম যায় বাজার মূল্য আনুমানিক লক্ষ টাকা প্রতি কেজি।

তিনি আবার খালি চোখে রোদে বেড়ান না। যখনই বেড়ান না কেন তাঁর চোখে দামী রোদচশমা চাই ই চাই। একেই বলে ভাগ্য বুঝলেল। সেই হচ্ছে একমাত্র ভাগ্যবান কুকুর যার গলায় আজ পর্যন্ত চেন পরানোর ক্ষমতা কোনো মানুষেরই হয়নি।

ভাগ্যটা বোধ হয় এমনই হওয়া উচিত। সেটা মানুষেরই হোক বা এ রকম একটা সারমেয় এরই হোক। ভাগ্যটা তো ভাগ্যই। আসলে এই ভাগ্যটা তো ভাগ্যবিধাতাই লেখেন। তাই তিনি কখন কার উপর দয়ালু হবেন তা তো তিনি নিজেই জানেন। তা না হলে এই সারমেয়রেরও এমন বিলাসবহুল জীবন যাত্রা হতে পারতো না। এ যেন পুরো একটি সিনেমার গল্পের ফুল  'এন্টারটেনমেন্ট'। হতে পারে এটাই বাস্তব জীবনের এক মজাদার সত্য। একেই বলে বিলিয়নিয়ার জীবন যাপন।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours