এপ্রিল ফুল হয়ে গেলো বিজ্ঞানীরা? প্রায় ৩৪২ বছর ধরে বিজ্ঞানীদের বোকা বানিয়ে আসছে পুংজনন কোষ থেকে নিঃসরণ শুক্রাণু বা স্পার্ম।
যাকে বলে রাম ঠকান ঠকেছেন।
তার সাথে বিশ্ববাসী ঠকেছেন সবাই... আসলে প্রকৃতি রচয়িতার মধ্যেই ঘোল খেলো চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এই শুক্রানুর দল কি করে ঠকালো?
তাহলে তো চোখ সরালে হবে না।
এতদিন ধরে বিজ্ঞানীরা জানতেন লেজ নাড়াতে নাড়াতে শুক্রাণুরা বুঝি সাঁতার কাটতে পারে। পাক্কা অলিম্পিকের ফ্রী স্টাইল সাঁতারু। লম্বা লেজ দুলিয়ে দু’পাশে নাড়াচাড়া করতে করতে ঠিক মাছের মতো সাঁতরে ডিম্বানুর দিকে এগিয়ে যায়। ধারণা তো তাই ছিলো কোটি কোটি শুক্রাণু সাঁতরেই ধেয়ে যায় ডিম্বানুর দিকে। আর সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীই করে বাজিমাৎ। অভিজ্ঞ সাঁতারু শুক্রাণুকে কাছে ডেকে নেয় ডিম্বানু। এটাই ছিল পাকাপোক্ত ধারণা। তবে এই ধারণা বিশ্বাসকে কার্যতঃ ভুল প্রমাণ করে ভিরমি খাওয়ালেন বিজ্ঞানীদের। শুক্রাণুরা সাঁতার কাটতে তো পারেই না ওই ভাবে দু’পাশে লেজ নাড়াতেও পারে না।
এবার প্রশ্ন হলো, তাহলে ডিম্বানু অবধি পৌঁছতে এতো পথ পাড় হয় কি করে? আর এটাই এখন লক্ষ টাকার বিষয়।
সেটি নিয়েই বিস্তারিত জানানো হয়েছে লাইভ-সাইন্স.কম এর একটি গবেষণায়। অ্যান্থনি ভন লিউয়েনহুক বলেছিলেন, শুক্রাণুরা পাক্কা সাঁতারু। ১৬৭৮ সালের ১৮ মার্চ এই তত্ত্ব সঠিক মনে করেছিল বিজ্ঞানী।
প্রথম অণুবীক্ষণযন্ত্র (মাইক্রোস্কোপ) আবিষ্কার করে লিউয়েনহুক। তখন অতিসূক্ষ্ম রক্তজালক, রক্ত কণিকা, স্নায়ুকোষের কথা বলেছেন। ১৬৭৭ সালে তিনি টু-ডি মাইক্রোস্কোপে দেখান মানুষের শরীরে গোল মাথা ও লম্বা লেজওয়ালা ঠিক প্রাণীর মতোই জিনিস আছে যা সাঁতার কাটতে পারে। আর সেই জীবন তৈরির রহস্যের ইঙ্গিত ছিলো। তাহলে ওটাই নতুন জীবনের আধার। আর তার নাম হয় শুক্রাণু যাকে বিজ্ঞানী বলেছিলেন ‘লিভিং অ্যানিমাকিউল’।
প্রায় ৩৪২ বছর আগে লিউয়েনহুক টু-ডি মাইক্রোস্কোপে যা দেখেছিলেন এখন বাস্তবে সেটা নয়। ইংল্যান্ডের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা থ্রি-ডি মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করে বলেছেন, একেবারেই সাঁতার কাটে না শুক্রাণু।
যা তাহলে? কৌতুহল বাড়ছে, তাহলে? তাহলে?
না সাঁতার কাটেনা বরং তারা চড়কির মতো ঘুরপাক খায়। আর পাক খেতে খেতেই ডিম্বাণুর দিকে ছুটে যায়। লেজ নড়ে না তাদের। ইউনিভার্সিটি অব ন্যাশনাল অটোনোমা দে মেক্সিকোর বিজ্ঞানীরা ‘ব্লু-স্কাই এক্সপ্লোরেশন’ পদ্ধতিতে শুক্রাণুদের এই পাক খাওয়া ফ্রেমবন্দি করেছেন।
এই মাইক্রোস্কোপি টেকনিকে প্রতি সেকেন্ডে ৫৫ হাজার ছবি তোলা যায়। শুক্রাণুরা ঠিক কী পদ্ধতিতে ছুটে যায় তার ছবি তোলা হয়েছে এই পদ্ধতিতে।
দেখা গেছে, লেজ-সমেত পাক খেতে থাকে শুক্রাণু। প্রায় ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে থাকে। অনেকটা চাকার মতো। তবে মাথার ঘূর্ণন আর লেজের ঘূর্ণন কিছুটা অন্যরকমের। থ্রি-ডি মাইক্রোস্কোপে দেখলে মনে হয় ঠিক বলের মতো স্পিন করে সরে যাচ্ছে। এর ফলে যে গতি তৈরি হয় তাতেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারে শুক্রাণু। এভাবেই ঘুরতে ঘুরতেই ডিম্বাণুর ফ্লুয়িডে গিয়ে পৌঁছে যায়।
আর তার পরেরটা হলো জন্মের সূচনা। নতুন সৃষ্টির নতুন অধ্যায়। আসলে পৃথিবীর সব কিছুই বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে পরিবর্তনশীল... আর তার থেকেই নতুন উদ্ভাবনী সত্যের পথে আরও নতুন দিক উন্মোচিত হবে তার অপেক্ষায় রইলাম।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours