শ্রেয়া ঘোষ, ফিচার রাইটার, চুঁচুড়া, হুগলি:
শেষবারের মতো সিনেপর্দায় দেখা গেল সুশান্ত সিং রাজপুত্তুর। হ্যাঁ শেষবারের মতোই।
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর প্রায় অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। গত জুন মাসের ১৪ তারিখ নিজের ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেন অভিনেতা। তাঁর মৃত্যুর ঘটনার পেছনে কে আছে তা নিয়ে উঠে এসেছিল বড় বড় তারকার নাম। চলছে পুলিশি জেরা। এর মধ্যেই তাঁর শেষ ছবি ‘দিল বেচারা’ মুক্তি পেল শুক্রুবার ২৪শে জুলাই সন্ধ্যে ৭.৩০টা নাগাদ। সুশান্তকে শেষবারের মতো সিনেপর্দায় দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল দর্শকরা। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ডিজনি প্লাস হটস্টারে একেবারে বিনামূল্যে সিনেমা দেখার সুযোগ পেলেন দর্শকরা। মুক্তির তিনঘণ্টার মধ্যে আইএমডিবি তে ৯.৯/১০ রেটিং পেল ‘দিল বেচারা’। আজ পর্যন্ত কোনো বলিউড হলিউড সিনেমা এই রেটিং পায় নি। হয়তো সুশান্ত বেঁচে থাকতে এত ভালোবাসা পাননি।
জন গ্রিণের লেখা উপন্যাস ‘ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে পরিচালক মুকেশ ছাবরার এই ছবি। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা দুই তরুণ-তরুণী ম্যানি ও কিজির প্রেমের গল্প নিয়ে এই সিনেমা। ‘এক থা রাজা, এক থি রানি। দোনো মর গ্যায়ে, খতম কহানি’…নাহ এতটা সহজে শেষ হতে দেয়নি ‘দিল বেচারা’র ম্যানি। জানে মৃত্যু অপেক্ষা করছে। তাসত্ত্বেও দাপিয়ে বেড়িয়েছে। প্রেমে পড়েছে, সাহস করে সে মনের কথা বলেছে প্রেমিকাকে। অনেক বড়ো বড়ো স্বপ্ন দেখত ছবির নায়ক ম্যানি। কিন্তু তাঁর নিজের স্বপ্ন পূরণের ইচ্ছে বিন্দুমাত্র নেই। বরং প্রেমিকা কিজির সব স্বপ্ন পূরণ করতে ব্যস্ত সে। ম্যানির জীবনের সব আঁধারকে সরিয়ে রেখে কিজির জীবনকে আলোয় ভরিয়ে দেয়। ছবিতে ম্যানি বলে, “আমি একজন অ্যাস্ট্রোনট”। জীবনযুদ্ধে হেরে সে নিজেই তারাদের দেশে চলে যায়। তবে যাবার আগে কিজিকে জীবনযাপনের মন্ত্র শিখিয়ে দিয়ে যেতে পেরেছিল ইম্যানুয়েল রাজপাল জুনিয়র। ১ ঘণ্টা ৪১ মিনিট ২৬ সেকেন্ড দীর্ঘ সিনেমা যেন আধঘানা অধরা সুশান্তের জীবন। সিনেমাতে কোথাও যেন ম্যানির মধ্যে দিয়ে সুশান্তের জীবনই ফুটে উঠেছে।
সুশান্তের পাশাপাশি ‘দিল বেচারা’র অভিনেত্রী সঞ্জনা সঙ্ঘীর অভিনয়ও অনবদ্য। অভিনেত্রীর কেয়ারিং মা ও চিন্তাশীল বাবার ভূমিকায় স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় এবং শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের অভিনয়ও অসাধারণ। ছোট্ট দৃশ্যে অতিথী শিল্পী হিসেবে সইফ আলি খানের অভিনয়ও দর্শকদের নজর কেড়েছেন। তার সাথে এআর রহমানের মিউসিক নিয়ে কোনো কথাই হবে না। ছবির গান গুলো খুবই সুন্দর।
একটা মিষ্টি প্রেমের গল্প। পুরো সিনেমাতে মৃত্যুভয় তাড়া করে বেড়ালেও ক্ষণস্থায়ী জীবনের অন্যদিক দেখা গেল। ম্যানি কিজির রোম্যান্স, হাসিঠাট্টা, আবেগ সব নিয়ে এই সিনেমা। সিনেমার শেষে ম্যনির সংলাপ, “এক থা রাজা, এক থি রানি। রাজা মর গ্যয়ি। পর রাজা কে রানি আভি জিন্দা হ্যায়…”। সত্যি আর রাজা নেই আমাদের মধ্যে। হয়তো সবার মনে থাকবে। কিন্তু সুশান্তের ওই হাসি আর দেখা যাবে না। কিন্তু একটাই প্রশ্ন কেন এত তাড়াতাড়ি চলে গেলে?
Post A Comment:
0 comments so far,add yours