দীপ্তেন্দু চক্রবর্তী, প্রবাসী লেখক, টরোন্টো, কানাডা:

বাঙালিরা বেড়াতে খুব ভালোবাসি। এদেশের মানুষরা খুব বেড়াতে যায়। পর্যটন ব্যবসা এদেশে একটা বিরাট ব্যবসা। আমার মনে হয় বা আমার ধারণায় আমেরিকা থেকে ইউরোপ অনেক বেশি সুন্দর।অনেক বেশি ঐতিহাসিক। তবুও উত্তর আমেরিকার মতো এতো নদী, লেক, পাহাড়, আর পর্যটকদের বেড়ানোর ব্যবস্থা এত সুন্দর ভাবা যায় না। গাড়ি নিয়ে কোথায় না গেছি? ক্যালিফোর্নিয়া চার হাজার মাইল দূরে। লাগলো ছ দিন । দেখে শুনে, মোটেলে কাটিয়ে ঘোরা। চলে গেছি তিউয়ানাতে, সানদিয়েগো মেক্সিকান সীমানা। সারা সীমানাটা খোলা। বাংলাদেশিদের মত মেক্সিকানরা সীমানা পেরিয়ে চলে আসছে আমেরিকাতে। সারা ক্যালিফোর্নিয়াতে মেক্সিকানরা কাজ করছেন। আর চলছে সমানে ধর পাকড়। আমাকেই রাত্রিবেলা ধরে সেকি প্রশ্ন আর ধমক পুলিশ অফিসে নিয়ে গিয়ে? পরে হোটেলে নিয়ে গিয়ে কানাডিয়ান পাসপোর্ট দেখিয়ে ছাড়া পাই। আমি মেক্সিকান সীমান্ত থেকে ফিরছিলাম। যা বলছিলাম, শীতকালে কানাডিয়ানরা চললো মেক্সিকোতে, ক্যারাবিয়ান দেশে, কিউবাতে বা সাউথ আমেরিকার দেশগুলোতে।আমেরিকানরা কিউবাতে যেতে পারে না। আমাদের অন্টারিও খুব সুন্দর। লেকে ভর্তি, জঙ্গলে ভর্তি, জন্তু জানোয়ারে ভর্তি। শহর থেকে একটু বেরোলেই নানা জঙ্গল আর পার্ক। আমরা উইকেন্ডে কটেজ ভাড়া করি তিনদিনের জন বা আরো কয়েকদিনের জন্য। লেকের পাড়ে। সেই কটেজে সবই আছে। স্টোভ, ফ্রিজ, বারবি কি, বোট, সব পাওয়া যায়। বন্ধুরা মিলে খুব মজা হুজ্জতি হয়। লেকে মাছ ভর্তি, পারছ, স্যামন, পাইক, রুই, ব্যাস, পরগি, নানা রকমের মাছ।আমাদের পরেশদা খুব মাছ ধরতে যেতেন। ছেলে বাবুনের সাথে বকাবকি।-"হালায় ছিপটা পর্যন্ত ফালাইতে পারোস না?"- বাবুন রেগে যা, ড্যাড ডনট স্পিক্ খারাপ কথা। হালা ইস এ ব্যাড ওয়ার্ড।- বাবুন এখন নাম করা ডেন্টিস্ট। পরেশদা চুরানব্বই।-হালার পুলিশ আর লাইসেন্স রিনিউ করলো না।- নব্বই অবধি গাড়ি চালিয়েছেন পরেশদা। এতদিন এদেশে কিন্তু এখনো ঢাকাইয়া উচ্চারণ। ট্যাক্স অফিসে বড় কাজ করতেন সরকারে। সেক্রেটারি সুসানকে ডাকতেন সুজন বলে।- সুজন হয়ার ইজ মাই হালার প্রিন্ট আউট? সুসান এখন বঝে হালা কথাটা। - হালার প্রিন্টার ইজ নট ওয়ার্কিং। সুসান জানায়।
নায়াগ্রা ফলস আমাদের টরোন্টো থেকে একশো মাইল। সারা পৃথিবী থেকে পর্যটক আসে ঝেটিয়ে। ওপারে আমেরিয়াকর বাফেলো শহর। কিন্তু ফলস ভালো করে দেখা যায় আমাদের দিক থেকে। এপার ওপর ব্রিজ আছে সীমানা পার হয়ে আসার জন্য।আমেরিকাদের কোনো ভিসা লাগে না সীমানা পার হতে। দেশ থেকে কেউ এলেই তাদের নিয়ে যাই নায়াগ্রা দেখতে। এবার মন্ট্রিয়ল এর পথে থাউসেন্ড আইল্যানড। ওখানে বিবেকানন্দ এসে থেকেছিলেন। সেই বাড়িটা আছে। খুব একটা কেউ জানে না। মন্ট্রিয়ল খুব সুন্দর, ফরাসিদের জায়গা। একবার আলাদা হবার খুব চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পিয়ের ট্রুডো (জাস্টিনের বাবা) পিটিয়ে আলাদা হবার ব্যাপারটা বন্ধ করে দিয়েছিলো। আমরা গাড়ি নিয়ে যাই বেড়াতে। বাফেলো থেকে সোজা নিউ ইয়র্ক, বোস্টন। ওয়াসিংটন পাঁচশো মাইলের মধ্য। একদিনে চলে যাই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ছাড়া এমন কিছু দেখার নেই আমেরিকাতে। তবে ওরা জানে কি করে ইতিহাসকে দেখতে হয়? আবার ইউরোপে গেলে দেখতে পাবেন ইতিহাস। লন্ডন, রোম প্যারিস, পূর্ব ইউরোপ, দেখার মতো। সুইৎজারল্যান্ড। রাইন, সেইন, দানিউব, ওদিকে ক্যাস্পিয়ান, বলকান, কি সেই সুন্দর ঐতিহাসিক জায়গা? আমাদেরও আছে দেশে। পর্যটদের জন্য অবস্থা খুব একটা ভালো না দেশে। বেজিং এ দেখলাম ফরবিডেন সিটিতে দুশো মতো টয়লেট, হাজার লোকেদের ভিড়। পরিষ্কার ঝক ঝকে টয়লেট, জল, চিন্তা করা যায় না। আর ভিক্তোরিয়া মেমোরিয়ালে গিয়ে দেখুন? কোথায় টয়লেট? কে যাবে নোংরা  টয়লেটে? কটা টয়লেট? কোমড় নেই। বিদেশিরা আসতে  চায় না। দশটা টয়লেট করতে কি বা খরচ? আরে দূর।                  
ত্রাণ চুরি, চাল চুরির রাজ্য টয়লেটে থাকবে কিন্তু বানাবে না।
ভালো থাকবেন। (ক্রমশঃ) 

(ছবি সৌজন্যেঃ প্রতিবেদক)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours