প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
 
"গোশাঞ্চি মহান্ত যত চোপালা এ চড়িয়া। 
বোচকা বুচকি লয়ে জা এ বাহুকে করিয়া।"

না, শুধু গোঁসাই নয়, মহান্ত নয়  বর্গিহানা থেকে দেববিগ্রহও রেহাই পায় নি। আসলে বৈরাগ্য ও মহান্ত পদবিধারী বৈষ্ণবসম্প্রদায়ের মানুষেরা বারে বারে নির্যাতিত হয়েছেন। কিংবদন্তী বলে মোগল আমলে বৈষ্ণব পাটবাড়ি বা আখড়াগুলি নিশ্চিন্তে ধর্মচর্চা শুরু করে। আর এই ধর্মচর্চার সাথে সাথে তারা  প্রভূত ভূসম্পত্তির মালিক হয়ে ওঠে। বর্গিরা ছিলো প্রবল বৈষ্ণব বিরোধী। এমনকি তারা বৈষ্ণবকে পুড়িয়ে মারে ও বিষ্ণু মণ্ডপ ধ্বংস করে দেয়। ইতিহাস সালার এর কথা ও সুপুরের আনন্দ চাঁদের কথাতেই বর্গিদের বৈষ্ণব বিদ্বেষমূলক আচরণের প্রামাণ্য দলিল রেখে যায়। কিন্তু, মানুষের সহ্যের যখন সীমা লঙ্ঘন হয়ে যায়, তখন মানুষের অসি ধরে, অনুরূপে এমনটাই করেছিলো বৈষ্ণব সমাজ৷ 

আজ বলবো দেববিগ্রহের স্থানান্তরের কাহিনি। নদিয়া জেলার আড়ংঘাটার যুগলকিশোর ছিলেন বর্ধমান জেলার সমুদ্রগড়ে। তথ্যসূত্র বলে, বৈষ্ণব মহান্ত গঙ্গারাম দাস কিশোর গোপিনাথের মূর্তি এনে সমুদ্রগড়ে পূজার্চনা করে। বর্গিরা আক্রমণ করলে, গোপিনাথকে নিয়ে গঙ্গারাম, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সিপাই রামপ্রসাদের কাছে আশ্রয় নেয়৷ রামপ্রসাদ অবশ্য চালার ঘর তৈরি করে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে। একদিন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নাদেশ পান, যে, তাঁর রাধিকা বাড়ির ভূগর্ভে অবস্থান করছেন; এবার সেই রাধিকাকে কৃষ্ণচন্দ্র তুলে গঙ্গারামকে সমর্পণ করেন। গা ঘেঁষে চূর্ণি নদী বেয়ে,  বজরা করে রাধিকাকে কৃষ্ণচন্দ্র  এনেছিলেন। শোনা যায়, এক প্রাচীন বকুল তলায় রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রাধিকা ও গোপীনাথ মূর্তির মিলন ঘটান ; তিনি প্রথমে ২০ বিঘা ভূসম্পত্তি প্রদান করেন।  
১১৭০ সালে গঙ্গারাম প্রয়াত হন ; পরে আখড়ায় মহান্ত হন যশোদানন্দ, চরণদাস মহান্ত, হরিদাস মহান্ত, শুকারাম, রঘুনাথ, অনন্ত দাস, রামদাস অনিরুদ্ধ দাস এবং বর্তমানে শ্যামদাস৷ কিংবদন্তি বলে, বর্গিরা সমুদ্রগড় পুড়িয়ে দেয় ; জমিদার বাড়ি পুড়ে ছারখার হয়ে যায়৷ অনেকে গঙ্গা পেরিয়ে পালাতে থাকে ; ঠিক তখনই এই মূর্তি স্থানান্তর। কিন্তু কি ছিলো এই কিশোর কিশোরী প্রেক্ষাপট!  আসলে নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের যে কৃষ্ণবিগ্রহ পুজো করতেন, তা ছিলো চিরকিশোর ; বর্ধমানের রাজা তিলোকচাঁদ দাঁইহাটেতে কিশোর কিশোরীর মন্দির স্থাপন করেন।

উল্লেখ্য যে, সপ্তদশ শতকে দুই গোষ্ঠীর কৃষ্ণ সাধক ছিলেন। এক, স্বকীয় এবং দুই হলো পরকীয়া পন্থী। শোনা যায় যে, স্বকীয়রা কেবল কৃষ্ণমূর্তি পুজো করবে ; আবার পরকীয়া পন্থী মতে, 
"পরকিয়া বিনা নাহি রসের উল্লেস। 
ব্রজবিনা ইহার অন্যত্র নাহি বাস "। স্বকীয়রা তর্কে পরকিয়া পন্থীদের কাছে হেরে যায়। যেমন বর্ধমানের রাজাদের জামাই হলেন কালনার সুপ্রসিদ্ধ লালাজি বিগ্রহ।  কথিত আছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র নাকি পাঁচ ফল সোনা রুপা তামা প্রভৃতি ধাতুর চুবড়ি আলতা সাজিয়ে রাধিকা ও গোপীনাথ মূর্তির বিবাহ দেন ;প্রথা ও বিবর্তন সময়ের হাত ধরে পালটানো গেলেও বিশ্বাস এখনও অটুট। 

 j.H.E Garrett সাহেব এর মতে, "Among the Visitors females predominate, owing to the belief that any women who visits the Temple will escape widowhood or she be already a widow, will be spared from the fate in her next birth." 

ঋণস্বীকার -
১) বঙ্গে বর্গিহাঙ্গামা ইতিহাস ও কিংবদন্তি.. 
 স্বপনকুমার ঠাকুর 
২) কৃতজ্ঞতা স্বীকার " ব্লগ " অদিতি ভট্টাচার্য
https://blogs.eisamay.indiatimes.com/aditibhattacharya/a-story-of-forgotten-history/
৩) ভক্তিরত্নাকর " শ্রী নরহরি চক্রবর্তী "
৪) "গিরিয়ার প্রথমযুদ্ধের গ্রাম্যকবিতা " মুর্শিদাবাদ কাহিনি, নিখিলনাথ রায়
৫)  ইন্টারনেট  উইকিপিডিয়া 
৬) বর্ধমান সহায়িকা 
৭) অন্নদামঙ্গল কাব্য 
৮)  প্রচলিত লোকগাথা 
৯) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 
১০) "মহারাষ্ট্র পুরাণ" 
১১) "বণিক বার্তা " ( ইন্টারনেট)  
১২) "বঙ্গদর্শন " ( ইন্টারনেট)  
১৩) ইতিহাস অভিধান 
১৪) পলাশির অজানা কাহিনি,  সুশীল চৌধুরি
১৫) "বঙ্গদর্শন ইতিবাচক বাংলা" 
১৬)  bengali koulal.com
১৭) অন্যান্য 
১৮) আইন-ই- আকবরী
১৯) গড়পঞ্চকোট ( ajanapathe.com)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours