সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:

বর্ষার একটা নিজস্ব মিলন মূর্ছনা আছে। চিরকালের গভীরতম মন আত্মীয়তায়। তাই হয়তো ঝিঁঝি পোকার ডাকে ঝিরিঝিরি একাকী রাত আমাকে জাগিয়ে রাখে। শুধুই মনে করায় সেই গানটা। তুমি কি কেবলই ছবি, শুধু পটে লিখা। কি মনে পড়ছে তো? তোমার একটা ছবি দেখে এই গানটা উচ্চারণ করতেই সেকি অনুরাগ অভিমান। বাপরে। এমনই এক বর্ষার মিলন আবেশে তুমি তো বলেই ফেললে, হ্যাঁ আমি তো স্রেফ তোমার ভালোবাসার ক্যানভাসে শুধুমাত্র একটা ছবি। আমার তো আর রক্ত মাংসের শরীর নয়। তাই না?
জানো বড্ড মনে পড়ছে সেদিনের সেই শুরুটা। মনের জানালা খুলে সেই প্রথম পার্থিব দক্ষিণা বাতাস আমাদের নতুন জন্ম দিয়েছিল। শুধু একটা ছবি আমাকে শিখিয়ে ছিল তোমার উষ্ণতার স্বরবর্ণ। হ্যাঁ গো তোমার কি মনে পড়ে সেই ছবিটার কথা? 
কালের নিয়মে আরও একটা ছবির পোট্রেট নিজেই গুটিগুটি পায়ে হাজিরা দিয়েছিল জনান্তিকের একান্ত খেয়াল খুশিতে। এক উচ্ছ্বল দুর্বার উল্কাপাতের মতো। দিন কাটে মাস যায়। বছরও অতিক্রান্ত। সময় যতই চলমান হয় নদীর ওপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, আমি খেতে পারি না। ঘুমাতে পারি না। কি করি বলতো? আমি দিশেহারা যে।
একদিন নিবু নিবু বিকেলে সাঁঝের ডাকবাক্সে এলো অজানা লেফাফা। এক কর্দমাক্ত বৃষ্টি পিওনের হাত ধরে। তাতে লেখা, আর পাঁচ মাস পড়ে আমার বিয়ে। কিইবা আর করার আছে। অগত্যা আরও একটিবার ফিরে দেখা বিষন্ন পোট্রেটের হাসি হাসি মুখে। বিবর্ণতার কালো মেঘে তখন দিশেহারা নাবিক আমি। রবিকবির ঝুলি থেকে চুরি করে চুপিচুপি নিরুপায় স্বগোক্তি করে উঠলাম, রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে।
কি যে করি এই বর্ষা ঘনঘোরে। আসলে মন পাখি যে অদ্ভুত ছটপটে কোয়েল ডানার অবাধ্য ছন্দে। মন্দ কিন্তু লাগে না তাঁকে। মনে মনে যে ভালো লাগে না তাঁর উপস্থিতি এমন বিবেকহারা মিথ্যে বলি কি করে? কি যে নাম জানাও নেই। নিবাস যে কোথায় তাও অজানা। কেমন দেখতে? কে জানে। তাহলে বাকি পরিচিতি? তথৈ বচঃ। সেকি কিছুই জানা নেই? সত্যি বলছি কিছুই জানি না। না না না। বিশ্বাস করুন। তবু তাঁকে খুব খুবই ভালো লাগে। হৃদয় বেহালায় যে তাঁরই নীরব বেহাগ। ওঁর কৃপন উপস্থিতি আমার যে এক নীল নীল আকাশ প্রত্যাশা। যুগ পেড়িয়ে যাওয়া অবকাশে প্রত্যাশীনির হঠাৎ এক টুকরো কথায় আমি শুনতে পাই সাকিরার ওয়াকা ওয়াকা একটানা সুর। অবশেষে একদিন মিললো শুক্লপক্ষের একাদশী চাঁদের মতো মায়াবী অসমাপ্ত ছবি। চক্ষু চাতক তাতেই উড়ান খুশি। ও মা একি! এ যেন হিমালয়ের বুকে প্রশান্ত মহাসাগরের ঢেউ স্পন্দন। মাস খানেকের ব্যবধান মাত্র। কৃষ্ণপক্ষের একচিলতে একাদশী চন্দ্রকলার আংশিক হরিণী ছবি নিজেই হাজির সংগোপন অভিসারে। আবারও এক বৃষ্টি ভেজা ভেজা জেগে জেগে থাকা রাতে কৃষ্ণপক্ষের প্রতিচ্ছবি ও শুক্লপক্ষের ছায়াছবি পাশাপাশি। নুন চিনির মিশেল কোলাকুলিতে। আহা এ যে আলো আমার আলো। দারুচিনি পাতার চাঁদনী বাতাসে ওই উঁকি দেয় এক অপার নৈঃস্বর্গীয় চন্দ্রমুখ। ছবিটা দেখিয়ে তাঁকে বললাম, ছবিটা এখানে রাখতে পারি? অভিসারিনীর অস্ফূট উত্তর, আপনি ঠিক করুন!
ঘরের বাইরে তখন মিঠি টাপুর টুপুরের সঙ্গে লাজুক আদুরে হাওয়ার এক অন্তহীন টলটলে মাখামাখি...

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours