সুবীর পাল, এডিটর, দ্য অফনিউজ:
অধুনা নিখিল বঙ্গ নেতি রাজনৈতিক সার্কাসের খুঁটি পুজো ইভেন্ট শুরু হবো হবো। হ্যাঁ হবো হবো করছে যে। সেকি রাজনৈতিক খুঁটি পুজো আবার কি? এ বাবা ভুলে গেলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আর এক বছরও নেই তো বাংলার নির্বাচনী পঞ্চবার্ষিকী শারদোৎসবের!
আসলে অকালবোধন করোনাকালে খুঁটি পুজোতেও যেন কেমন একটা ম্যারম্যারে ভাব। বয়োজেষ্ঠ ভীষ্মজেঠু সিপিএম তো আলিমুদ্দিনে শীতের কাঁথা ছেড়ে এখনও শয্যা ত্যাগ করতে পারলো না। দোষই বা কি? পক্কচুল বানপ্রস্থ বয়সে এত কি আর ধকল সামলানো সম্ভব নাকি? তা সুজন সূর্য সেলিম আছে। দরকারে না হয় একটু প্রেস ব্রিফ দেবে ক্ষণ তাঁরা।
আর প্রাগ ঐতিহাসিক যুগের কংগ্রেস তো ভারেও পেষে না ধারেও কাটে না। অশীতিপর সোমেন মিত্র থেকে অতীতের রবিনহুডের ছায়ামাত্র অধীর চৌধুরী তো 'আমরা আক্রান্ত' করতে করতেই ঢোঁক গিলে কুপোকাৎ। লড়াইয়ে ইতি গজঃ বিধানভবণ।
ওরে বাবা গেরুয়া শিবির। রাজ্য রাজনীতির আপগ্রোয়িং জেনারেশন ক্লাসের সেকেন্ড বয় বলে কথা! ধরি মাছ না ছুঁই পানি মার্কা হোমওয়ার্কে তো বেজায় খুশি দিলীপ ঘোষ শিবির। কুভাষ্যের খিলাড়ীর ভাবখানা এমন, '২১এর নয়া সরকারে তাঁর গাড়ি নবান্নে যাচ্ছেই লাল বাতি জ্বালিয়ে। অতি নিশ্চিন্তের স্বপ্নময় কালো ঘোড়ার পিঠে চেপে তাই 'চাটনি' মুকুল রায়কে 'টাইট' করতেই ব্যস্ত বং সভাপতি। তাঁর একটাই বর্তমান এজেন্ডা, জিতছি আমরাই। অতএব ঝেড়ে ফেলো গলার কাঁটা মুকুল আর বেমালুম মমতায় মায়া বাড়িয়ে লাভ কি। কিন্তু দিলীপবাবুর এই নক্সি বোনার হামবড়ি আচরণ জলের ওপর আলপনা আঁকা হচ্ছে নাতো?
এদিকে সততায় অনুপ্রাণিত শাসক তৃণমূলের সুনামের বহর স্যোসাল মিডিয়াতে বিতর্কের পারদ চড়িয়ে চলেছে নিত্যদিন। আজ আম্ফানের ত্রাণ চুরি তো, কাল করোনায় চাল সাফাই। দুপুরে গোষ্ঠীবাজির রক্তাক্ত সংঘর্ষ তো সন্ধ্যায় তোলাবাজীর দাম্ভিক কোটা ট্রিপিল ট্যাক্সের জিগির। তবে এসব ভার্চুয়াল ট্রোলের মুখে ছাই ঘষে দিয়ে কালিঘাটের সদর্প ঘোষনা, এসব বিরোধীদের অপকর্ম। জনগন আমাদের পাশে আছে ও থাকবে।
হিহিহি, হাহাহা, হোহোহো। খুব হাসি পাচ্ছে যে। কেমন যেন নির্বাচনী আগাম রেজাল্ট সব দলগুলি আগেই পেয়ে গেছে নিজেদের হাতে হাতে। তাদেরকে যে ওয়াকওভার দিতেই হবে ভোট ময়দানে তা সিপিএম ও কংগ্রেসের একটা বড় অংশের নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই বুঝে গেছেন অভিজ্ঞতার আতস প্রতিচ্ছবি থেকে। আসলে মসনদ দখলের চতুর পাশা খেলার দৌড়ে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় তৃণমূল। পুলিশ ও প্রশাসনের দলতান্ত্রিক ব্যবহার যে তারা বাম জমানার কপিবুক থেকেই রপ্ত করেছে মেধাবী ছাত্রীর মতো তা কি বলার অপেক্ষা রাখে। একইসঙ্গে গত লোকসভা নির্বাচনের সিলভার রানার বিজেপি সামনের বিধানসভা ভোটে ড্রেসিংরুমে বসে শুধু চায়ে পে চর্চা করবে এটা ভাবা ঐতিহাসিক ভুল হবে নিশ্চিত ভাবে। সোনা জেতার লক্ষ্যে অমিত শাহের কাস্তেতে শান দেবার ব্লুপ্রিন্ট কিন্তু প্রায় তৈরি। দিল্লির অন্দরমহলে সেরকমই তো গুঞ্জন। রাজনীতির একাংশ হিসাবীদের মতে তাই মাসখানেক পরেই সারদা নারদার ইস্যুতে চুড়ান্ত আয়লা ঝড় উঠলো বলে। এতে ঘাসফুল বাগানের বেড়াটাই না তছনছ হয়ে যায়? গ্রেফতারও হতে পারেন শীর্ষস্তরের রাঘব বোয়াল থেকে কিংফিস। তবু টিএমসির প্রধান স্থপতির নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি একাই বিপক্ষের সমস্ত চাল বানচাল করে দেবার অসীম প্রতিভার পরীক্ষিত কারিগর। এটাও মানতে হবে মমতার সম উচ্চতার কোনও নেতা পশ্চিম বাংলায় এই মূহুর্তে দ্বিতীয়টি নেই। ভোট যুদ্ধে বঙ্গ বিজেপি এই সবুজ রেখাটি অনুধাবন করতে না পারলেও লালকেল্লার পদ্ম থিঙ্কট্যাংক কিন্তু তৃণমূল সুপ্রিম এহেন মুন্সীয়ানাকে যথেষ্টই সমীহ করে তলে তলে। তাই মমতার হাতের রাশ থেকে পুলিশ ও প্রশাসনকে মুক্ত করার লক্ষ্যে রামদল দিলীপ মুকুলকে স্লগওভারে মাঠে নামাবে ঠিক করেছে। বরং পুলিশ ও প্রশাসনের বরুণ তিরের পাল্টা রাজভবণ নামক অগ্নিবানকেই ফরওয়ার্ড লাইনে ইত্যিমধ্যে ওয়ার্মআপ করার সবুজ নির্দেশ দিয়েছে। রাজ্যপাল ধনকড়ও তাই অনুগত খেলোয়াড়ের মতো প্রায়ই গোলপোস্ট লক্ষ্য করে লম্বা লম্বা ডিবলিং করেই চলেছেন। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ইতিমধ্যেই আবার রাজ্যের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার জল মাপার জন্য অতিসম্প্রতি হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছেন একটি কথা, রাজ্য নির্বাচন শুরুর আগেই বাংলায় জারি হতে চলেছে রাষ্ট্রপতি শাসন।
এতো রাজনৈতিক খাতায় নানা পাটিগণিত জ্যামিতি ও বীজগণিতের কেতাবী হিসেবনিকেশের রিহার্সাল। কিন্তু সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর সেই জনতা জনার্দনের ভোটদানপর্ব। আর এখানেই সিপিএম হল আগামীদিনের কিং মেকার। রাজ্যের ভোট রাজনীতিতে একটা বিরাট বড় অংশের আবেগ ভোট এখনও অবশিষ্ট লাল লাল লাল সেলামের পক্ষে। এরসঙ্গে যৌথ নির্বাচনী সাথী কংগ্রেসের ঘরানা কেন্দ্রিক সমর্থক যুক্ত যদি হয় তবে কিন্তু সিপিএম নেতৃত্বাধীন এই ব্লক হবে বাজির আসলি কালো ঘোড়া। এই ব্লক যে কিং হবার অবস্থানে এখনও নেই তা নিজেদের ক্রাইসিস ম্যানেজাররা ভালোই জানেন। তাই ক্ষমতার বৃত্তে প্রবেশ আপাতত সুদূর পরাহত হলেও কিংমেকারের ভুমিকায় যে তারাই থাকছে সেটা ভেবেই তারা এখন মশগুল। কিছুটা পুলকিতও। এক্স ফ্যাক্টর ভীতি ভোট ও সিন্ডিকেট শিল্পের চ্যালাচামুন্ডার সমর্থন যে বিশ্ববাংলার মস্তিষ্কের পিছনে দৌড়বেই এনিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী সবুজ গালিচার চাঁইরা। গেরুয়া তাঁবুতে ওয়াই ফ্যাক্টরের ফ্লাইং নয়া ভোটার কাস্টমারের সঙ্গে অতি দেশভক্তের ককটেল যে ফোয়ারা তুলবেই তা ভেবে গোঁফে তা দিতে শুরু করেছেন নাড্ডা সাহেব। কিন্তু এক্স বা ওয়াই ফ্যাক্টরের যে আস্ফালনই চলুক না কেন, ভোটের লাইনে সিপিএম-কংগ্রেস ব্লকই হলো আসল ওভারি।
মমতা মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যদি পুলিশ ও প্রশাসন সঙ্গে নিয়ে ভোট যুদ্ধে নামতে পারেন আর সিপিএমের সব ভোট লাল বোতামেই চিহ্নিত হয় তবে কাটাকুটি খেলায় অবশ্যই অ্যাডভান্টেজ টিএমসি। অন্যদিকে কৈলাসের কথা অনুসারে, মমতার সরকার উল্টে দিয়ে রাজভবণ যদি ক্ষমতায়ণের রাজদন্ড তুলে নেয় তখন কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসন বেনামে বিজেপির সম্পদ। এই অবস্থাতেও যদি কমরেড ভোট নিজেদের স্বস্থানে প্রয়োগ হয় তবে কিন্তু নবান্নের রং গেরুয়া হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আসন্ন ভোটে পুলিশ ও প্রশাসন তুমি কার? আর তার দোসর সিপিএমের ভোট কোথায় গিয়ে পড়বে? এই দুটি মাত্র উপপাদ্যই মসৃণ করে দেবে আগামী পাঁচ বছর কোন দল শাসন ক্ষমতায় বিরাজ করবে। তাই সিপিএমকেই ভেবে নিতে হবে, কোন দলকে তারা মুখ্যমন্ত্রীত্ব উপহার দিতে চলেছে? রাজনৈতিক শত্রু তৃণমূল নাকি আদর্শগত শত্রু বিজেপি। কে তাদের কম বা বেশি শত্রু? এবার বোধ হয় এই প্রথম সিপিএমের কাছে কড়া চ্যালেঞ্জ। সমদূরত্ব বলার মতো আর মেকি রাজনীতির কোনও সুযোগ নেই তাদের কাছে। দুই শত্রুর মধ্যে একজনকে বুকে টানতেই হবে, হয় নিজের ভোট স্বস্থানে দিয়ে বা অন্যত্র প্রয়োগ করে। ঘোষণা প্রকাশ্য করে বা ফিসফিসিয়ে প্রচার করে।
কিং নাই বা হলেন কমরেডগণ। কিং মেকার কিন্তু এবার আপনারাই। সর্বহারা, সাম্রাজ্যবাদী তাত্ত্বিক স্লোগানে ভরপুর ভুলভুলাইয়াতে এবার আর চিড়ে ভিজবে না। সোজা কথায় সামনের বিধানসভা ভোটে এক পক্ষের গালে আপনাদের চুমু খেতেই হবে। ভাগমভাগের সমস্ত রাস্তা বন্ধ রক্তিম বিপ্লবীদের কাছে। আপনাদের স্পষ্ট অবস্থান নিতেই হবে, বাংলায় আগামী পাঁচ বছরের শাসনভার কার হাতে তুলে দেবেন আপনারা? নাকি শরম বাঁচাতে জেনে বুঝে ফের ধোঁকাবাজির রাজনীতি করবেন, আমরাই ক্ষমতায় আসছি। জানবেন বদ্ধ পাগলের কাছেও বিশ্বাসহীন এই অতি চর্চিত বস্তাপচা স্লোগান। ধোঁকাবাজির ফল কি নিদারুণ হতে পারে তা আপনাদের থেকে এখন কে আর ভালো জানে বলুন? তাই নিরুপায় ভীষ্মের শীত বিছানা ত্যাগ করে দয়া করে বাংলার স্বার্থে একটু উঠুন, জাগুন আর ঠিক করে ফেলুন, কোন ফুলের গন্ধ গোপনে শুকবেন? ঘাসফুলের না পদ্মফুলের?
Post A Comment:
0 comments so far,add yours