দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে তদানীন্তন গ্রন্থন বিভাগের অধিকর্তার পেনশেন বেনিফিট আটকে দিল বিশ্বভারতী। ৯ লক্ষ গুদামজাত  বইয়ের ভাড়া ৫০ হাজার টাকা। সেই গুদাম অবিলম্বে ফাঁকা করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্বভারতী। শেষমেষ বই ছাপার খরচ মূল্যায়ন করে ঐ সব বই কাগজের দরে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

বরাবর পশ্চিম বঙ্গ সরকারের মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বই ছাপত বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগ। বাম আমলে তার কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু রাজ্যে শাসকদলের পালা বদলের পর সেই পাঠ্যক্রমের আমুল পরিবর্তন হয়। কিন্তু কোন সরকারী অর্ডার ছাড়াই প্রচুর বই ছাপিয়ে ফেলে বিশ্ব বিদ্যালয়ের গ্রন্থন বিভাগ।  অথচ ৯ লক্ষ বই ছাপা হয়ে পড়ে আছে কোলকাতার একটি গুদাম ঘরে। 
২কোটি টাকা খরচ করে এই বই কোন অর্ডারের ভিত্তিতে ছাপা হয়েছিল তার তদন্তে নির্দেশ দেয় বিশ্বভারতী সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি - 'কর্ম সমিতি।' তদন্তে নেমে ছয় সদস্যের কমিটি তলব করেছিল তৎকালীন বিশ্বভারতীর একাধিক কর্তা কে।তদন্ত শেষে রিপোর্ট জমা পরতেই কমিটির সুপারিশ মেনে তৎকালীন গ্রন্থন বিভাগের অধিকর্তা কুমকুম ভট্টাচার্যের গাফিলতি প্রকাশ্যে আসে। এবং তার পেনশন বেনিফিট আটকে দেয় বিশ্বভারতী। 

    শুধু তাই নই। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী অবিলম্বে ঐ সমস্ত বই গুদাম থেকে "রাইট অফ" করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই মত লকডাউনের মাঝেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ গ্রন্থন বিভাগ কে চিঠি দিয়ে সমস্ত বই কাগজের মূল্যে বিক্রি করার কথা জানিয়েছে। গ্রন্থন বিভাগ পাল্টা একটি কমিটি করে যাতে টেন্ডার ডেকে ঐ সমস্ত বই বিক্রি করা যায তার জন্য কতৃপক্ষ কে চিঠি দিয়েছে। 
     বিশ্ব বিদ্যালয়ের এক আধিকারিক জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার পোষিত সারা রাজ্যের সমস্ত স্কুল গুলিতেই বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগ থেকে প্রকাশিত পাঠ সংকলন, পরিবেশ পরিচয়, সহজপাঠের মত মোট ১২ বই পড়ানো হত। সেই সমস্ত বই বিশ্বভারতীর কোলকাতাস্থিত গ্রন্থন বিভাগ থেকে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত ও বিতরিত হতে থাকে। সূত্রের খবর ২০১১ সালে পর রাজ্য সরকার ঐ সমস্ত বই এর জন্য বিশ্বভারতী কে আর কোন বরাত দেয় নি। এমনকি তার কোন লিখিত অর্ডার ও বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগের দপ্তরে নেই। যার জন্য বিশ্বভারতীর খরচ হয় ২কোটি টাকা। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গেছে, যেখানে ২০১২ সালেই রাজ্য সরকার বই নেওয়া বন্ধ করে দেয়, অথচ তার আগেই বই ছাপার জন্য নির্দেশ দিয়ে স্বাক্ষর করছিলেন তৎকালীন গ্রন্থন বিভাগের ডিরেক্টর কুমকুম ভট্টাচার্য। 

     ঐ ৯ লক্ষ বই ছাপা হযে যাবার পর গ্রন্থন বিভাগের তরফ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে বই নেবার জন্য আবেদন করা হলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি রাজ্য সরকার এই মর্মে কোন অর্ডার কপি দেখতে চাইলে তা দেখাতে পারে নি বিশ্বভারতী। এক কর্তার কথায়, " ঐ বই নেবার জন্য পরবর্তী সময়ে রাজ্য সরকারের কাছে দরবার করতে গিয়ে বার বার হোঁচট খেতে হযেছে। কারন আমরা কোন অর্ডার কপি দেখাতে পারি নি।"

    যদিও তৎকালীন গ্রন্থন বিভাগের অধিকর্তা কুমকুম ভট্টাচার্য বলেন, " আমি কোন কথা বলব না।" 
এই অবস্থায় ঐ ৯ লক্ষ বই রাখা নিয়ে চরম গলগ্রহে পড়ে বিশ্বভারতীর গ্রন্থন বিভাগ। অগত্যা কোলকাতা বড় বাজারের গুপ্ত লেন এ একটি গোডাউন ভাড়া করতে হয় কতৃপক্ষ কে। এমনকি গত পাঁচ বছর ধরে ঐ বই রাখার জন্য প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা করে গোডাউন ভাড়া গুনতে হচ্ছে বিশ্বভারতী কে।
    বর্তমান উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী কাছে এই তথ্য আসার পরেই বিষয় টি নিয়ে কর্ম সমিতির নজরে আনেন তিনি। এই নিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর কর্ম সমিতির বৈঠকে বই বিভ্রাট নিয়ে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। কর্ম সমিতির রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্য সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় কে চেয়ারম্যান করে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এছাড়াও ঐ কমিটি তে রয়েছেন কর্ম সমিতির  সদস্য দুলাল চন্দ্র ঘোষ, মঞ্জু মোহন মুখার্জি, বোধিরুপা সিনহা, পার্থ সারথি রায়, এবং কর্মসচিব আশা মুখোপাধ্যায়। 
      
 এই নিয়ে বিশ্বভারতী কর্ম সমিতির সদস্য তথা তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান সুশোভন ব্যানার্জি বলেন, "৯ লক্ষ বই কোন অর্ডার ছাড়া ছাপা হয়েছে তা প্রমানিত। এবং সেই কাজে গাফিলতির কারনে তৎকালীন গ্রন্থন বিভাগের অধিকর্তা কুমকুম ভট্টাচার্যের পেনশন বেনিফিট আটকে দেওয়া হয়েছে।"
 
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours