মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, লেখিকা, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর:

লকডাউন কথাটি আজ আপামর বিশ্বের জনজীবনের সাথে জড়িয়ে গেছে। শিক্ষিত অশিক্ষিত সকলেই লকডাউনের নানাবিধ ফলাফল নিয়ে আলাপ আলোচনা করে নিজেদের গৃহবন্দী দশাকে খানিকটা মুক্তির হাওয়া দিচ্ছেন।নিত্য যাত্রীরা এই সময় তাদের রোজকার বাদুড়ঝোলা, ঘর্মাক্ত বাধ্যতামূলক ভ্রমণের স্মৃতি রোমন্থন করেছেন।ভ্রমণ পিপাসুরা পুরনো ছবি দেখে বেড়াতে যাওয়ার জন্য হা হুতাশ করছেন। যাদের অর্থ আছে তারা লকডাউন সেলিব্রেট করতে নিত্যদিন নানা রকম খাবার বানাচ্ছেন। যারা সৃষ্টিশীল তারা কবিতা, গান, গল্প , ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজার মানুষের সাথে জুড়ে থাকছেন। তাদের মানসিক চাপ মুক্তির এইটাই পথ। 
আবার গৃহবধুরা কর্মসহায়িকা হীন হয়ে কাজের চাপে নিজের দিকে তাকানোর সময়ও পাননি। পুরুষেরা কেউ কেউ গৃহকর্মে হাত লাগিয়ে বাড়ির বৌটি আসলে সারাদিন কত কাজ করে তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন। ফলত কথায় কথায় 'সারাদিন তো ঘরে থেকে আরামে আছো, চাকরী করলে বুঝতে' এই মিথ্যে অপবাদের হাত থেকে হয়ত কিছুটা মুক্তি পাবে সেই সব বধূরা। এটা লকডাউনের একটা ভালো দিক।
কিন্তু যেমন প্রদীপের তলার অন্ধকার সবচেয়ে গাঢ় হয় তেমনি এই সব ভালোর মাঝে লকডাউনের ক্ষতিকর দিকটি আমরা দেখেও না দেখার ভান করছি। গৃহবন্দী দশায় ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অত্যন্ত বেড়েছে। যে মেয়েটি তার স্বামী কাজে গেলে কিছুক্ষন শারীরিক অত্যাচার থেকে মুক্তিলাভ করত সে এখন সারদিন অত্যাচারিত হচ্ছে। দেশে, বিদেশে এই লকডাউন পিরিয়ডে সব থেকে অত্যাচারিত হচ্ছে শিশু ও মেয়েরা। একটি শিশু সে খেলতে বেরতে পারছে না, বন্ধুদের পাচ্ছে না এবং তার কথা শোনার সময় বড়দের নেই। স্বভাবতই সে বায়না করছে। কিন্তু ফলস্বরূপ জুটছে শাস্তি। বাবা মায়ের নিজেদের মনের ভয়, হতাশা, আগামী জীবনের অনিশ্চয়তা তাদের শিশুটির ওপর নেগেটিভ প্রভাব বিস্তার করছে। কিশোর কিশোরী বা ছাত্রছাত্রীরাও তাদের অ্যাকাডেমিক কেরিয়ার নিয়ে দিশাহীন। এই ফ্রাস্টেশনে তারা মোবাইলে আরো বেশী অ্যডিক্টেট হয়ে পড়ছে, কেউ বেছে নিচ্ছে আত্মহননের পথ। বেসরকারি কর্মী ও শিল্পীদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। কর্মহীন আয়হীন জীবন কোনমতে টেনে নিয়ে চলেছেন।
অনেকেই বিকল্প পেশা জুটিয়ে কোনমতে জীবনধারণের পথ পেয়েছেন। আবার অনেকে সেই বিকল্প পথটুকুও দেখতে পাননি। মধ্যবিত্তের আত্মসম্মান তাদের অন্যের সাহায্য থেকে দুরে রেখেছে। তাদের অবস্থা আরও শোচনীয়।
 সরকার, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো যদিও এদের জন্য অনেকটাই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন। মানুষ এগিয়ে এসেছে মানুষের জন‍্য। তবুও এভাবে বেশী দিন চলা সম্ভব নয়। এই লকডাউন মানুষকে একটা জিনিষ শিখিয়ে দিল, তা হোল জাত ধর্ম না দেখে এই দুঃসময়ে সবাইকে মানসিক ভাবে পরস্পরের পাশে থাকতে হবে। মনোবল না হারানোটাই এখন একমাত্র চ্যালেঞ্জ। তবেই আমরা এ কঠিন সময় পেরিয়ে যেতে পারবো।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours