সুরঞ্জন কর, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

যে সময় সারা পৃথিবী তোলপাড় হচ্ছে মনে হয় নিচের কথা প্রাসঙ্গিক … মানুষ ভয় দেখানো একটা রীতি হয়ে গেছে……… তাই এই লেখা ।
করোনা না হবার চান্স তারই ,যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি)বেশি।এই ইমিউনিটি কার কতটা আছে তা মাপার কোনো যন্ত্র কিন্তু নেই।আর এটা হলো বাংলা গ্রামারের মতো,আজ চাইলেই বাড়ানো যাবে না।ছোটবেলার থেকে চর্চার বিষয়।তাই ছোটবেলার থেকে এর পেছনে যে নজর দিয়েছে,তারই ইমিউনিটি বেশী মানে করোনা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা কম।ইমিউনিটি কিন্তু সংঘর্ষে বাড়ে,প্রতিকূল পরিবেশে বাড়ে।রাস্তার কুকুরের ইমিউনিটি,বাড়ির কুকুরের থেকে অনেক বেশী।
এখন দেখা যাক আমরা যারা যৌবন আর প্রৌঢ়ত্ত্বের সীমানায় আছি তারা কেমন ভাবে ইমিউনিটি অর্জন করেছি।আমাদের ছোটবেলাটা অন্য রকম ছিল,আমরা প্রথম ইমিউনিটি অর্জন করি মায়ের দুধ থেকে।একটু বড়ো হয়ে টলটল পায়ে হাটতে হাটতে মাটিতে পড়ে থাকা মুড়ির দানা,বাদাম কুড়িয়ে খেতাম,পেট খারাপে ভুগতে ভুগতে ইমিউনিটি অর্জন করলাম। আস্তে আস্তে বাইরের জগতে পা রাখা,না আমাদের সময়ে স্কুলে আমরা হেঁটে হেঁটেই যেতাম,ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে,পকেটে পাঁচ দশ পয়সা নিয়ে।তিন পয়সা আর দুপয়সা  নিয়ে পাঁচ পয়সা হতো।নয়া পয়সা বলা হতো,দু নয়া পয়সা পকেটে থাকলে বলতাম আমার পকেটে দুনিয়া(দু নয়া পয়সা-দু নয়া-দুনিয়া) আছে।এই দিয়ে শুরু হতো আমাদের ইটিং আউট।আলু কাবলি, ছোলা মাখা,শসা কাটা ,বিভিন্ন চুরণ,হজমি,আচার,বাসী ঘুগনী ইত্যাদি ছিল আমাদের ইটিং আউটের মেন্যু।এত ভিন্নতার মধ্যেও এই সমস্ত খাবার ছিল আমাদের দেশের বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য মর্মার্থের অনুগামী-এদের মধ্যে একটাই কমন মসলা ছিল,ধুলোর মসলা-a great immunity booster.
আরেকটু বড়ো হতে গলি ক্রিকেটের কেউ কোকিলদেব,কেউ নারভাস্কার,তার না না নিয়ম,সে স্থানান্তরে লেখা যাবে।তবে ড্রেনে বল পড়লে দু আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে তুলে নেয়া হতো, কখনো কখনো আঙুলের ডগা টা একটু সিক্ত হতো বটে,তবে  খেলার উৎসাহে তা ছিল নগন্য।তবে বল তুলে সেটা কখনোই ধোয়া হতো না,ঘাসে মুছে নিয়ে আবার খেলা শুরু,আর বল এর ওর বাগানে গেলে বল ও বাগানে থাকা ফল পাকুড়  দুটোই উদ্ধার করা হতো,বলা বাহুল্য  উদ্ধারকৃত ফল আত্তিকরণের সময় হাত ধোয়ার বালাই ছিল না,যদিও একটু আগেই ওই হাত দিয়েই ড্রেন থেকে বল তোলা হয়েছিল।এক্ষেত্রে আমরা বাঘ সিংহের নীতি মানতাম,ওরা তো খাবার খাওয়ার সময় হাত ধুয়ে খায় না,দাঁত মাজে না।এটাও ছিল immunity booster।ঠেলা গাড়ির স্যাকারিন দেওয়া ক্রিম ছাড়া,রং দেওয়া আইসক্রিম ছিল হার্ড ইমিউনিটির বাহক। জল খেতাম যথায় তথায়,তেষ্টা যেখানে পেতো সেখানকার জলই খাওয়া হতো। স্কুলের বহুদিন পরিষ্কার না হওয়া ট্যাংকের জল ,চায়ের দোকানের শ্যাওলা ধরা হাড়ার(বড় হাঁড়ি)জল।আর একটু বড় হতে আরো লায়েক হলাম,তখন একটা সিগারেট ৩/৪ জন ভাগ করে খেতাম,1st counter ,second  counter book হতো,একজনের লালা সঙ্গে ভাইরাস,ব্যাক্টেরিয়া আরেকজনের ঠোঁটে সুন্দরভাবে স্থানান্তরিত হতো আর তার সঙ্গে অজান্তেই হতো হার্ড ইমিউনিটি।হার্ড ইমিউনিটির আরেকটা জায়গা ছিল চায়ের দোকান,ওখানে prime time এ খদ্দেরের চাপে গ্লাসগুলো ভালো করে কেন মন্দ করেও ধোয়া হতো না।তাই স্বল্প মাত্রায় নানা ভাইরাস ইত্যাদির প্রবেশ মাধ্যম  ছিল এই গ্লাস। হার্ড ইমিউনিটির আরেক মাধ্যম ছিল ফুটপাথের ধূপছাও হোটেল ,মানে খোলা ফুটপাথের উপর ছেঁড়া প্লাস্টিক টাঙানো আর তার ছেঁড়া দিয়ে রোদের প্রবেশ-রৌদ্র ছায়ার খেলা।ওখানে সকালে রাখা পৌনে এক কড়াই ঘুগনী বিকালে পথচলতি গাড়িবাহিত ধূলা ,ধোঁয়া খেয়ে এক কড়াই হয়ে যেত,তার পর বিক্রি হতো,ওই ঘুগনিতে মেশানো মাংসের টুকরো কিন্তু যেকোনো চীনা মাংসের দোকানকে চ্যালেঞ্জ করে দেবে।এখানের খাবার ফুটের নয় ,গজের। হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের আরেক আদর্শ স্থান মোড়ের মাথার ফুচকাওয়ালা।ওখানে দুদিক দিয়ে-ধুলোর মশলা আর ফুচকাওলার হাত ধোয়া টক জল।নানা মতবাদ প্রচলিত-হাতে হাজা,নাকঝাড়া, নামোছা হাত ইত্যাদি।
এছাড়াও  ব্যাক্তিগতভাবে হার্ড ইমিউনিটির জন্যে আমি অনেকের কাছে ঋণী, কয়েকটা উল্লেখ করছি-পুরুলিয়ার  রা...এর টিকিয়া, দইবড়া,ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের -ধোসা,লসসি, পাওভাজি,হাটের মোড়ের ঘুগনী,চা,ব্যারাকপুরের চিড়িয়ামোড়ের চা,স্টেশনের লসসি,দুর্লভপুর মোড়ের চা,বড়জোড়ার লাইনহোটেলের খাবার,পাত্রসায়ের কাকরডাঙ্গা মোড়ের খাবার,ইন্দপুর বাংলার চা চপ, নারায়নগড়ের চাতুরিভাড়ার চা,ডেবরা মোড়ের ফলের রস,গড়বেতার ময়রা কাটার লাইন হোটেলের খাবার,ওনদার বাসস্ট্যান্ডের চপ, ভবানী ভবনের পেছনের দিকের তেলেভাজার দোকান,জগদ্দলের লসসি,ডালবড়া,বোলপুর বাসস্ট্যান্ডের চা,যাদবপুর 8B আর স্টেশনরোডের ডালবড়া,ফুচকা,সোনারপুর স্টেশনের ডালবড়া ,আরো অনেক তালিকা ভুক্ত হবে।
তাই বলছিলাম,ঈশ্বর চাইলে আলাদা কথা,নতুবা করোনা হওয়া মুশকিল আছে।জয় হার্ড ইমিউনিটি জয়.... জয় মানবতার জয়……ভয় কে জয় করুন।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

1 comments so far,Add yours