রিয়া সরকার, ফিচার রাইটার, জলপাইগুড়ি:

করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯, যাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তথা ভারতের মতো প্রায় 138 কোটি জনসংখ্যার মতো জনবহুল দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা খুব দ্রুত গতিতে বাড়ছে। দীর্ঘ লকডাউনের পরেও আক্রান্তের সংখ্যা  ঊর্ধ্বমুখী। আক্রান্তের বিশ্ব তালিকায় ভারতের স্থান যেখানে তৃতীয় সেখানে অন্য নজির গড়ল আরব সাগরে অবস্থিত, ভারতীয় উপমহাদেশের একটি অংশ এবং ভারতের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপ।
   
    এই লাক্ষাদ্বীপ হলো ৩৬টি দ্বীপপুঞ্জের সমষ্টি এবং যার মোট আয়তন হল প্রায় ৩২ বর্গ কিলোমিটার। এটি ভারতের একমাত্র অঞ্চল, যেখানে এখনও পর্যন্ত একটিও কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা সামনে আসেনি।
    
     এই সাফল্যের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রায় প্রথম থেকেই যাতায়াতের কড়াকড়ি নিয়ম আরোপ করা হয়েছে এবং এই মারণ ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে নেওয়ার ফলেই এই দ্বীপপুঞ্জটি এইপ্রকার সাফল্য পেয়েছে।
     
     এখনও পর্যন্ত ভারতে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যখন দশ লক্ষেরও অধিক এবং এই সংখ্যা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী তখন কেবলমাত্র লাক্ষাদ্বীপ এই ভাইরাসের প্রকোপ থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত আছে।
    
     প্রতিদিনের কোভিড আপডেটে ভারতের বিভিন্ন স্থানের নাম বারে বারে উঠে আসছে শিরোনামে। এই তালিকায় লাক্ষাদ্বীপের নামটি আজ পর্যন্ত আসেনি।

    সম্পূর্ণ ভারতে এই মহামারির কারণে স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর দরজায় তালা ঝুলছে বহুদিন হলো। বর্তমানে লাক্ষাদ্বীপে করোনা পজেটিভ কোনো কেস না থাকার জন্য সেখানকার সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে আবার স্কুলমুখী করার জন্যও সম্প্রতি অনুমোদন চেয়েছে কেন্দ্রের কাছে।

     এই অঞ্চলের এমপি মহম্মদ ফয়জল জানিয়েছেন, প্রথম থেকেই লাক্ষাদ্বীপের প্রশাসন খুব কড়া ও সতর্কতা মূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে বহিরাগতদের এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশ আটকে দেওয়া হয়।
    লকডাউনের সময় ১৪৪ ধারা বা কারফিউ খুব কঠোর ভাবে বলবৎ করা হয়েছিল এবং সেখানকার নাগরিকেরাও অযথা বাড়ির বাইরে বের হয়নি। করোনা ভাইরাস ঠেকাতে সরকারি বিধি-নিষেধগুলোকে অত্যন্ত সচেতন ভাবে পালন করেছে।

    ১৯৬৭ সালের নির্ধারিত আইন, রেস্টিকশন অফ এন্ট্রি এন্ড রেসিডেন্ট অনুযায়ী যাত্রীদের দ্বীপে প্রবেশের জন্য কোচি থেকে যে এন্ট্রি পারমিট নিতে হয়, তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
 
    বিশেষ কোনো প্রয়োজনে বা চিকিৎসা জনিত কোনো কারণে যাদের বাইরে যেতে হয়েছে তাদের জন্য কোচিতে কোয়ারেন্টিন সেন্টার চালু করা হয়েছে। সেখানে সাত দিন থেকে কোভিড টেস্ট নেগেটিভ এলে তবেই ফিরে আসার অনুমতি পেয়েছে।

    লাক্ষাদ্বীপের যে সমস্ত স্থানীয়রা অন্য দেশে থেকে ফিরে এসেছেন তাদের প্রথমে কোচিতে ১৪দিন এবং দ্বীপে ফিরে এসেও আরও ১৪দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে।

    লাক্ষাদ্বীপের বাড়তি সুবিধা ছিল তার ভৌগোলিক অবস্থান অর্থাৎ এটি একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপপুঞ্জ যা ৩৬টি দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত। আবার এই ৩৬টি দ্বীপের মধ্যে মাত্র ১০টিতে লোকজন বসবাস করে এবং জনসংখ্যাও খুব কম। ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখারও আলাদা করে কোনো প্রয়োজন পড়েনি।

    ভারতের অন্যান্য স্থানে যেখানে কঠোরভাবে লকডাউন প্রয়োগ করা যায়নি এবং অসচেতন ভাবে মানুষ সরকার প্রদত্ত নিয়মের ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। লাক্ষাদ্বীপ সেখানে ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত রাখে।

   প্রথম থেকেই আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রচন্ড কড়াকড়ি ব্যবস্থা নিয়েছে সেখানকার প্রশাসন। তারপর নির্দিষ্ট শর্ত মেনে কোয়ারেন্টিনে থেকে তবে দ্বীপে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাকি দেশে যখন কোয়ারেন্টিনে থাকার প্রায় সমস্ত খরচ নিজেদেরকেই বহন করতে হচ্ছে লাক্ষাদ্বীপের ক্ষেত্রে সেখানকার সরকার সেই ব্যয়টি বহন করছে। ফলে দীর্ঘ কোয়ারেন্টিনে থাকার খরচ বহন করতে হচ্ছে না বলে সেখানকার জনগণ কোয়ারেন্টিনে থাকার সমস্ত নিয়মকে মেনে নিয়েছে সহজভাবে।

   এমপি মহম্মদ ফয়জল অবশ্য একথা অস্বীকার করেননি যে, পর্যটন নির্ভর এই দ্বীপটিতে নানা কড়াকড়ির কারণে অর্থনীতিতে বিরাট ধাক্কা খেয়েছে। তিনি জানান, সেই মার্চ মাস থেকে পর্যটন ব্যবস্থা যেহেতু পুরোপুরি বন্ধ ফলে লাক্ষাদ্বীপের উপার্জনেও বিরাট টান পড়েছে। তবে বর্তমানে দ্বীপের অভ্যন্তরীণ স্থানীয় শিল্পগুলোই ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

    কোচি থেকে বিমান পরিষেবা, যাত্রীবাহী জাহাজের সার্ভিস এবং প্রথম থেকেই দ্বীপের অভ্যন্তরে যাতায়াতে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা থাকার ফলে লাক্ষাদ্বীপ এখনও করোনা মুক্ত।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours