সাজিয়া আক্তার, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:
বর্ষা মৌসুমে বিল-ঝিলের বিস্তীর্ণ জলাভূমি জুড়ে প্রচুর শাপলা ফোটে। আর এই শাপলা বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করেন কয়েকশ দরিদ্র পরিবার। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে জীবিকার তাগিদে মানুষগুলো ছুটে যান জলাভূমিতে থেকে শাপলা তোলার জন্য। শাপলা তুলে ভরদুপুরে সব শাপলা একসঙ্গে করে বাজারে বিক্রি করেন। আর এই আয় থেকেই চলে তাদের সংসার।
বছরের অন্যান্য সময় কৃষি কাজে ব্যস্ত থাকলেও বর্ষার সময়টাতে এসব মানুষের হাতে কোনো কাজ থাকে না। তখন জীবন ধারণ করা কার্যত অনেক কষ্টকর হয়ে পড়ে। এই সময়টাতে শাপলা বিক্রি করে পরিবারের মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিন কাটায় দরিদ্র মানুষগুলো।
আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত বিলে প্রচুর শাপলা ফোটে। আর এ সময়টাতে তারা অন্যান্য সময় থেকে বেশি শাপলা তুলতে পারেন। পানি যত গভীর সেখানকার শাপলা তত ভালো হয়।
সদর উপজেলার বিভিন্ন বিল-ঝিল ঘুরে দেখা যায়, চারপাশে এখন অথৈ পানি। ডিঙি নৌকা দিয়ে কেউ বিলে মাছ ধরছে কেউবা আগাছা পরিষ্কার করে নৌকা নিয়ে বিলের গহীনে যাচ্ছেন শাপলা তুলতে। আবার কেউ বিল থেকে শাপলা তুলে জমা করছেন নৌকায়। নৌকায় করে শাপলা এনে বাজারে বিক্রি করার জন্য মহাসড়কের পাশে স্তূপ করে রাখছেন তারা।
কয়েক বছর ধরে শাপলা তুলে জীবিকা নির্বাহ করা আমিন উদ্দীন জানান, বর্ষা মৌসুমে কাজ না থাকাই শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করি। অন্য সময় থেকে এ সময়টাতে খুব স্বচ্ছলভাবে চলতে পারি। বর্ষার মৌসুমে প্রতিদিন সকালে আমরা কয়েকটা দলে ভাগ হয়ে শাপলা তুলতে যাই। প্রতিটি দলে ১০-১২ জন সদস্য থাকে। প্রতি দল মিলে দুই আড়াইশ কুড়ি (প্রতি কুড়িতে ৮০-১০০টি) শাপলা তুলতে পারি। আর এতে আমাদের জনপ্রতি দৈনিক ৮শ-১ হাজার টাকা আয় হয়, যা বছরের অন্য সময় থেকে বেশি। বছরের অন্য সময়টাতে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়, কিন্তু এ সময়টা আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে।
এ প্রসঙ্গে মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জাহিদুল আমিন বলেন, শাপলা প্রাকৃতিকভাবে পুরাতন বিল-ঝিলে জন্মে। এর চাষ পদ্ধতি এখনো প্রচলিত হয়নি। শাপলা ফুল সাধারণ সবজি থেকে অনেক বেশি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি ক্যালসিয়াম থাকে। এ্যালার্জি, চর্মরোগ, আমাশয়, অ্যাসিডিটিতেও এটা বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মানসিক রোগেও এর ব্যবহার করা হয়। ফলে সবজী হিসেবে বাজারে এর চাহিদাও রয়েছে অনেক।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours