প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:

যুদ্ধের যে বীজ বপন করেছিলেন শকুনি, তা অঙ্কুরোদগমেই সীমাবদ্ধ। মহীরুহ তো দূরস্থ, সে বিটপ স্থান পেলো না প্রথিত জয়ে। আসলে নিজের মধ্যে ধর্মকে প্রতিস্থাপন করতে হয়। আর তার জন্য পাঁচটি আধার থাকে..  জ্ঞান, প্রেম, সমর্পণ, ন্যায় ও ধৈর্য।  জ্ঞান বুদ্ধিকে স্থির করে ; প্রেম হৃদয়কে স্থির করে ; সমর্পণ শরীরের আবেগকে স্থির করে; ন্যায়, আত্মাকে স্থির করে এবং ধৈর্য্য মনকে স্থির করে ; তবেই তো ধর্মের প্রতিষ্ঠা হবে। আর ধর্মের প্রতিস্থাপন নিজের মধ্যে করতে পারলে ব্যক্তি নিজেকে চিনতে পারে। কিন্তু এখানে অপেক্ষা তো সুযোগের ; ভ্রাতৃদ্বন্দ্বের ষড়যন্ত্র ভূমি তৈরি করতেই তো এই যাদুনগরী বেছে নিলেন তিনি..  উৎপীড়নের আধার গড়েই তো দুর্যোধনের ভূমি গড়ে নিলেন শকুনি৷ 

শকুনি ছিলেন কালের প্রবাহবিন্দু। অনুচিত প্রলোভনকে কুক্ষিগত করে দূর্যোধনের বুকে জাগিয়ে তুলেছেন পৃথিবীর রাজত্ব৷ নিশানার তীর দেখিয়েছেন শকুনি ; দূর্যোধনের রণতূর্য হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন অশ্বত্থমা, দ্রোণ, অঙ্গরাজকে..  ভূমণ্ডলে জয় কেবল তার৷ মামা তিনি, একান্ত অনুগতের সম্বন্ধ, তাই প্রজাবৎসল রাজা কি আঘাতের তীরে রক্ত রাঙা হাত আঁকতে পারেন! তাছাড়া কূল বধূ টান কি একাই কাঁদে নাকি তছনছ করে রাজত্ব। আর যেখানে তুরুপের তাস করে আঁকা যায় দ্রৌপদীকে, সেখানে 
ধ্বংস তো অবশ্যম্ভাবী। 
 যুধিষ্ঠির  তো ব্রাহ্মণ্যবাদের মূর্ত প্রতীক। ভীমের মধ্যে অনার্যভাবের প্রাধান্য আর অর্জুনের মধ্যে ক্ষত্রিয়ভাব। শকুনির মনে এবার প্রহর গোনার পালা। আজ মনে পড়ছে, রাজা সুবলের কথা। পিতার চরণস্পর্শ করতে মৃত্যুশয্যায় তিনি বলেছিলেন, " তুমি আর্যসমাজের রথীর নীতি অনুসারে একরথ। কিন্তু পুত্র এই পাশা, এ- ই তোমার খড়গ, চর্ম, বাণ, ধনু, গদা। তুমি একে সম্বল করেই একদিন ভীষ্মের দর্পচূর্ণ করবে। সামলে রেখ।" 

শকুনি বুঝেছিলেন এমন ব্রাহ্মণ্যবাদের মূর্ত প্রতীকীকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আহ্বান বৃথা। তিনি জানতেন অক্ষক্রীড়াজ্ঞানে শকুনি একনিষ্ঠ।  প্রজ্ঞার উপর নির্ভর করতেন রাজমাতা সত্যবতীও। বিদুরের পরামর্শে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, " কপট পাপক্রীড়া পাপাচার ; বিন্দুমাত্র ক্ষাত্র পরাক্রম নেই। এ অসৎ পথ ; ধূর্তের পাপাচার প্রশংসা পায় না। " এলো পুষ্কর ও নলের কথা ; রাজ্যজয়, ধূর্ততা কি নেই এই সমাজে। শকুনি বললেন, তিনি শতপুত্রের প্রতিনিধি। দূর্যোধন স্বীকারোক্তি দিলেন, আনুগত্যের বলে বলে পণ তাঁকে মানায় না, তাই যুদ্ধ হবেই৷ আজ তাই তোরণস্ফোটিকায় নির্ধারিত হবে ভ্রাতৃত্বের মূল্য, আনুগত্যের মূল্য। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours