মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়, লেখিকা, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর:

ভারতবর্ষ এক জনবহুল দেশ। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মিলনক্ষেত্র। তারা মানসিক ভাবেও একে অপরের থেকে আলাদা। প্রতিটা মানুষের কাজ, পরিবার এবং সমস্যাগুলোও আলাদা আলাদা। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে জীবনের বিভিন্ন সমস্যার কারণ যাই হোক না কেন তার সমাধান হিসেবে আত্মহত্যাকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সত্যি বলুন তো আত্মহনন কি সত্যিই কোন সমস্যার সমাধান করে? 
আমি বলবো করে না। একজন মানুষ সমস্যার মুখোমুখি না হয়ে যখন পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেয় তখনও কিন্তু সেই সমস্যাটি রয়ে যায়। যেমন ধরুন , মানসিক ও সামাজিক নিপীড়নের শিকার হয়ে কেউ আত্মহত্যা করলো। তাতে কি সামাজিক নিপীড়ন বন্ধ হয়ে যায়? যদি যেত তাহলে আজ সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে বিভিন্ন কারনে একে অপরের প্রতি কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি বন্ধ হয়ে যেত চিরতরে। অথচ বাস্তবে দেখছি একটি সেলেব্রিটির আত্মহননকে কেন্দ্র করে গোটা মিডিয়ায় নানা ভাবে হাজার হাজার মানুষ কিছু মানুষকে তীব্র ভাবে আক্রমণ করছেন। ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ ভাষায় তাদের গালিগালাজ করছেন। এবার বলুন তো এটা মানসিক নিপীড়ন নয়? যে মানুষটি নিজে মানসিক নিপীড়নের শিকার হয়ে নিজেকে শেষ করে দিল বলে একাংশের ধারনা তাঁঁর ফলোয়াররা  নিজেরাই অপরকে এই কারনে অন্য ভাবে মানসিক নিপীড়ন করছেন। অর্থাৎ কি দাঁড়ালো ব্যপারটা? মানুষ নিজেকে শেষ করে দিল যে কারনে সেই কারণটা কিন্তু রয়ে গেল এবং উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেল।   
অথচ সেই মানুষটি যদি এপথ বেছে না নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতো তাহলে কিন্তু যোগ‍্য জবাব দিতে পারত।মানসিক অবসাদ এমন একটা জিনিস, যাদের হয় তারা সেই অবসাদ থেকে বেরোতে পারে না। সত্যিই তাই। তার জন্য মনোবিদ রয়েছেন। কিন্তু সবার ওপরে অবসাদগ্ৰস্ত মানুটির সহযোগিতা প্রয়োজন।
আপনি নিজেই একমাত্র নিজেকে সাহায্য করতে পারেন। নিজের মানসিক জোর নিজেকেই বাড়াতে হয়। কেউ পাশে থাকে না। ভারচুয়াল জগত তো থাকবেই না পাশে। আজকাল অবসাদগ্ৰস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তার প্রধান কারন হলো লোভ, ইর্ষা আর উচ্চাকাঙ্ক্ষা। ক্রমাগত প্রাপ্তি পাওয়ার আকাঙ্খা বাড়িয়ে দেয় । তারপর একদিন  হঠাৎই না পাওয়ার যন্ত্রণা মেনে নিতে না পেরে অবসাদ ঘিরে ধরে। আবার অনেকে অন্যের উন্নতিতে, সাফল্যে ইর্ষান্বিত হতে হতে মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলেন। নিজের যোগ্যতা আছে কিনা সেটা বিচার না করেই অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী হন। এবং সফল না হলেই হতাশাগ্ৰস্ত হয়ে পড়েন।
এইভাবে অবসাদে ডুবতে ডুবতে আত্মহননের পথ বেছে নেন। আবার অভাবের তাড়নায় বা অপবাদে যে নিজেকে শেষ করে দেয় তাদের পরিবারের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। যে মানুষটি বেঁচে থাকলে কোন না কোন ভাবে পরিবারের সাথে সমস্যার সমাধানের উপায় বের করতে পারতেন মরে গিয়ে তিনি তাঁর পরিবারকে ঠেলে দেন এক কঠিন জীবনযুদ্ধে। 
আজকাল সামান্য মোবাইল না দিলেও ছেলেমেয়েরা আত্মহত্যা করে। এটা একেবারেই সমর্থন যোগ্য নয়। এটা স্বার্থপরতা।
সমস্যা থেকে পালিয়ে না গিয়ে সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে। জানি বলা যতটা সহজ তা বাস্তবায়িত করে দেখানো অনেক কঠিন। বিশেষ করে অবসাদগ্ৰস্ত মানুষদের পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। তবুও সেই কঠিন কাজটা করে ফেলুন। প্রাণভরে বাঁচুন।যখনই মনে হবে আপনি খারাপ আছেন তখন আপনার থেকেও খারাপ থাকা মানুষের দিকে তাকান। লড়াই করার রসদ পেয়ে যাবেন। মরে গেলেই যদি সব ঠিক হয়ে যেত তাহলে দেহপসারিনীরা, ফুটপাতবাসীরা কবেই আত্মহত্যা করতো। কিন্তু তারা তা না করে বাঁচার লড়াই করে যাচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকেরা কত কষ্ট সহ্য করেও জীবনকে চিনে নিচ্ছে। তাই আত্মহত্যা নয়, জীবনে ফিরুন। মনকে বাঁচতে শেখান। আসুন না সবাই মিলে বেঁচে থাকাটাকে উদযাপন করি।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours