মোনালিসা মুখোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার, হুগলি:

আজ যে খবরটি বলিউড এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এক বিরাট আলোড়ন তুলেছে তা হল স্বনামধন্য অভিনেতা স্টাইল আইকন এম এস ধোনি খ্যাত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যার সংবাদ। খ্যাতি র শীর্ষে থাকা এই অভিনেতা মাত্র ৩৪ বছর বয়েসে কেন পৃথিবীকে আলবিদা জানালেন?বহু বিতর্ক বহু অনুসন্ধান হবে। তার বান্ধবী ও কিছু দিন আগে বহুতল থেকে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে শেষ করলে। 
নানা কারণ উঠে আসবে। কিন্তু কোন পর্যায়ে গেলে আসে এই অবসাদ তা অনেকেই বোঝেন না। চায়ের কাপে তুফান তুলবেন কিছু মানুষ।
অনেকে খুব জ্ঞানের কথা বলছেন। কেউ বলছেন এত টাকা আর সাক্সেস তাহলে ডিপ্রেশন কেন?
কেউ বলছেন ছিছোরের মত সিনেমায় সুইসাইডের বিরুদ্ধে কথা বলে নিজে কেন এই পথ বেছে নিলেন।
কিছুই বোঝেন না আপনারা। একটা পোস্ট দিতে হবে নাহয় কমেন্ট করতে হবে তাই যা খুশী লিখে দিচ্ছেন। 
জানেন কি সংবেদনশীল মন যাদের তারা সর্ব প্রথমে ডিপ্রেশনের শিকার হয়। যারা বেইমানি করতে পারে না তারা ডিপ্রেশনের শিকার হয়। টাকা পয়সা প্রতিপত্তি তুচ্ছ হয়ে যায় মন সব কিছু থেকে দুরে একা থাকতে চায়। তার সাথে ঘটে যাওয়া কত ঘটনা সে হয়তো মানতে পারে না। প্রতিবাদ ও করতে পাতে না। সবার আড়ালে
নিজের সাথে নিজের কথোপকথন চলে অবিরাম। প্রশ্নের ঝড় আসে মনে যার উত্তর নেই। সে বলতে পারে না তার যন্ত্রণা । কিছু ব্যথা হয় একান্তই নিজের। সমাজের মেকী মানুষের সাথে ভালো থাকার অভিনয় করে সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ভীড়েও সে মানুষ একা অনুভব করতে থাকে। কেউ বেশী কথা বলে তো কেউ চুপ হয়ে যায় তো কেউ অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে। এদের বোঝে খুব কম মানুষ। আপনাদের এই লড়াই করতে হবে, পৃথিবী খুব সুন্দর, এসব কথা গুলো না বিষ লাগে বিষ্ তাদের কাছে।কারণ আপনার আমার মত কোন মানুষের সযত্নে দেওয়া আঘাতে সে হয় ডিপ্রেশনের শিকার। কেউ সামলে ওঠে কেউ পারে না। যে যত বড় মহারথী বা অভিনেতা, ,বিত্তবান, আপাতদৃষ্টিতে সুখী যেই হোন না কেন মন কিন্তু সে সবের পরোয়া করেনা। মনের চোরাগর্ত গুলোতে অনেক কথা পড়ে থাকে যা নিয়ে চলে যায় সে মানুষ গুলো। কাউকে কোনদিন বলে না বা বলার মত মানসিকতার মানুষ পায় না। সুশান্ত সিং রাজপুত মানিসিক অবসাদে ভুগছিলেন। বিগত তিন মাস তিনি সবার নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। চিকিৎসা চলছিল।কিন্তু সব কিছুই হার মানল। তিনি বিদায় জানিয়ে দিলেন পৃথিবীকে।
এই যে অনেকে বলছেন এফ বি তে গাল ভরা কথা বলছেন। বলছেন আমার সাথে কথা বলবে ডিপ্রেশন হলে আমি আছি। কে আপনি? কিস্যু করতে পারবেন না। নিজে সুখের চাদর মুড়ি দিয়ে ন্যাকামি মার্কা মন ভোলানো কথা বলেন কেন জানেন তার কষ্ট জেনে নিয়ে সেটাকে চাটনি করে খাবেন বলে। স্বার্থে ঘা,লাগলে তার ওই কষ্ট গুলো নিয়ে খেলবেন আপনারা। বেশীরভাগ মানুষ এটাই করেন। আপনারা এক প্রকার খুনী কিন্তু। এইসব মানুষের থেকে নিজেকে বাঁচাতে বাঁচাতে একসময় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায়। কান্নাও আসে না না আসে শান্তি। তখন আর কিচ্ছু চাইবার থাকে না মৃত্যু ছাড়া। আজ কিছু মানুষের জ্ঞান বিতরণ দেখে মাথায় আগুন জ্বলে গেল কারণ কিছু জন কে আমি চিনি যারা আত্মসুখ ছাড়া কিছু চেনে না। তারা আমার আপনার খুব বন্ধু কিন্তু আমি জানি আমি বা আপনি মরে গেলেও এরা একটা পোস্ট করে জ্ঞান দিয়ে শোক জানিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে পপকর্ন খাবে। তাই এরা যখন ফেসবুকে জ্ঞান বিতরণ করে গা জ্ব্বলে বৈকি। আরে আপনারা কাছের মানুষের মন বোঝেন না চলে আসছেন দুনিয়াদারী করতে। একটা সুযোগ পেলে হয় নিজেকে জাহির করার।
হ্যাঁ কিছু মানুষ আছেন যারা সত্যি এই ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষকে বোঝেন সে সংখ্যা কম যদিও। তারা এগিয়ে যান ভালো রাখতে তাদের। নিঃশব্দে মানুষকে অন্তিমদশায় নিয়ে যাওয়া এই অসুখ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অত সহজ নয় । কারণ আসল মানুষ টা মরে যায় অনেক দিন আগেই অনেক মানসিক যন্ত্রণায়। বাকি।খোলসটা শেষ হয়ে যায় কোন এক দিন কোন এক মুহূর্তে অনেক অভিমান নিয়ে।
তবুও বলব সামনে তাকাতে হবে আলোয় আনতে হবে মনকে নিজেকে। এ লড়াই নিজের সাথে নিজের। হোক শক্ত কাজ সেটা তবুও। হেরে গেলে আপাত মুক্তি আর জিতে গেলে তুমি তোমার মত অন্যকে জিতিয়ে এনো। 
"যো জিতা ওহি সিকন্দর "
জিতে ফেরার শুভকামনা রইল সবার জন্য যারা এরকম লড়াই লড়ছেন ডিপ্রেশনের সাথে।
একদিন ভোর হবে সব কষ্ট গুলো আস্তে আস্তে সরে গিয়ে প্রাণখোলা হাসিতে ভরে উঠবে অন্ধকার অতীত পেরিয়ে আসা ওই গুলোর প্রতিদিন। ভালো থাকুক সবাই।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours