ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

দুর্গাপুরের  সবচেয়ে  প্রাচীন  গ্রামগুলির  অন্যতম  বীরভানপুর। দামোদরের উত্তর তীরে গ্রামটির  গ্রামের নামকরন সম্পর্কে  দুটি  মত  পাওয়া  যায়। এই  ধারাবাহিকের  শুরুতেই  উল্লেখ করা হয়েছে  বর্মানের  শিল্পশহর দুর্গাপুরে দুর্গাপর  অতীতে  ছিল  শাল, মহুয়া, পলাশ শিমুল, পিয়ালের ঘন  অরণ্য।  আর  এই  অরণ্যে  যেমন  হিংস্র  জন্তুদের  বাস  ছিল  তেমনই  ছিল দুর্ধর্ষ  ডাকাত  তথা  বাগীদের  নিরাপদ  বিচরণ ভূমি।  
                ডাকাতি করত  মূলতঃ  বাগদী,ডোম ও কেওটরা, তবে  এদের  সর্দার  হতো  কোন  পন্ডিত  ব্রাক্ষন। এরা কয়েকটা অনুশাসন  কঠোর ভাবে  মানতো।  রাজা, ব্রাক্ষন, নারী  ও শিশুদের কখনো  আক্রমণ  করতো না।  কথিত আছে, বর্ধমানে। মহারাজ  ত্রিলোকচাঁদ  বাকুড়া অভিমুখে  যাওয়ার  পথে  দামোদরের  ধারে  ডাকাত দলের  দ্বারা  আক্রান্ত হ'ন। মহারাজের  পাইক  বরকন্দাজরা  কোন  প্রতিরোধ গড়ে তুলতে  ব্যর্থ  হয়। বাধ্য হয়ে  মহারাজ ত্রিলোকচাঁদ  ডাকাতদের  কাছে  আত্মসমর্পণ  করেন।  এই  সংবাদ  পেয়ে ডাকাত দলের নেতা  ভানুদেব  আচার্য  মহারাজার  কাছে  ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ভানুদেব  শুধু  ডাকাত  সর্দার  ছিলেন  না। তিনি  ছিলেন  প্রথিতযশা  পন্ভিত।  ভানুদেবের  ব্যবহারে  মুগ্ধ হয়ে  ত্রিলোকচাঁদ  গ্রামের  নামকরন  করেন 'বীর ভানুপুর ' ।অপভ্রংশ হয়ে  হয়েছে ' বীরভানপুর '।
            অন্য  মতটি  হ'ল ,এই  গ্রামের  দক্ষিণে  দামোদরের উত্তর   সীমানায় একটি  লতানে  বৃক্ষের  নীচে  ল্যটেরাইট  পাথরের  সূর্যমূর্তি  নিত্য  পূজিত হ'ন। তবে।   সূর্যদেব রূপে  নয়  মা
শঙ্খেশ্বররী। নামে।  প্রতি বছর  দুর্গা  নবমীতে  মহা। ধুমধাম  সহকারে  পূজা  ও ছাগ  বলি  হয়। জনশ্রুতি, প্রায়  দেড়'শ  বছর আগে  এক শাঁখা বিক্রেতা  মুর্তিটি  দামোদরের  তীরে  আবিস্কার করেন।শাঁখা বিক্রেতা মূর্তিটি  পান তাই  সূর্যদেব  এখানে  শঙ্খেশ্বরী  নামে  খ্যাত। মূর্তিটি  আনুমানিক  আড়াই  হাজার বছরের প্রাচীন। 
         'দুর্গাপুরের  ইতিহাস ' গ্রন্থের লেখক  প্রবোধ  কুমার  চট্টোপাধ্যায় তাঁর গ্রন্হে  উল্লেখ করেছেন,  এই  গ্রামে  তিনি  একটি  প্রাচীন  সূর্য  মন্দিরে।  সন্ধান   পেয়েছিলেন এবং সম্ভবতঃ ঐ মন্দিরেই    সূর্যদেবের  পাথরের  বিগ্রহটি  ছিল। 
তিনি আরও লিখেছেন, নরসিংহদেবের  রাজত্বকালে  কোনারকের সূর্যমন্দিরের  ধ্বংসস্তুপের  উপর  নতুন করে  মন্দির  নির্মিত  হয়। নরসিংহ দেবের  পুত্রের  নাম  ভানুদেব।  সূর্যের  নামে পুত্রের  নামকরন করেন নরসিংহ দেব। সম্ভবতঃ  ভানুদেব  সিংহ  এর  আমলে বীরভানপুরের  সূর্য মন্দির নির্মাণ  ও  বিগ্রহ  প্রতিষ্ঠিত হয়।  তাই তাঁর নামানুসারে  গ্রামের নাম হয়  বীরভানুপুর  অপভ্রংশ হয়ে  বীরভানপুর।(চলবে)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours