প্রিয়াঙ্কা সরকার, লেখিকা, বর্ধমান:
সবুজের হাতে হাত মিলিয়ে, পুষ্প ও ফলের সাথে ৫০০০ লি বিস্তৃত, এই অযোধ্যা রাজ্য। নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু ছুঁয়ে আছে অধিবাসী দেহ, তাই পরম্পরায় তাঁরা ভদ্র ও ধার্মিক৷ নিত্য ধর্মানুশীলনের আকাঙ্খা ও বিদ্যাভাসের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। এখানে এক শত সঙ্ঘারামে তিন সহস্র যতি বসবাস করতেন। তাই নিত্য পাঠের বিষয় ছিলো হীন ও মহাযানভুক্ত পুস্তকাদি। পুরাতন ভারতে মাত্র দশটি মন্দির ভূমি স্পর্শ করে আছে। কিন্তু এই রাজ্য যুগল নয়, বহু সম্প্রদায়ের আবাস ভূমি৷
রাজধানীতে একটি পুরাতন সঙ্ঘারাম দেখতে পাওয়া যায়৷ কথকতা বলে বসুবন্ধু বোধিসত্ত্ব এই স্থলেই নাকি বেশ কিছু যুগলে হীন ও মহাযানীদের পুস্তক রচনা করেছিলেন। কিন্তু শ্রমণ ও ব্রাহ্মণদের ধর্মের ব্যাখ্যার কথাও শোনা যায়৷ নগরের ৪০ লি উত্তরে বৃহৎ সঙ্ঘরামে রাজা অশোক নির্মিত ২০০ ফুট উচ্চ স্তূপ দেখা যায়৷ তথাগত সেই স্থানেই তিন মাস অবধি দেবতাদিগের কাছে ধর্ম প্রচার করেছিলেন। পূর্ব চারিজন বুদ্ধ উপবেশন ও ভ্রমণের চিহ্ন চিরস্থায়ী করতেই এই স্তূপ নির্মাণ করা হয়।
সঙ্ঘারামের ৪|৫ লি পশ্চিমে একটি স্তূপে তথাগতের চুল ও নখ চিহ্ন রক্ষিত হয়েছে৷ আজও সঙ্ঘারামের ভগ্নাবশেষে দেখা যায়৷ এই স্থানেই সৌত্রান্তিক সম্প্রদায়ান্তর্গত সুপন্ডিত শ্রীলবোধ বিভাগ শাস্ত্র প্রণয়ন করেছিলেন৷
নগরের ৫|৬ লি পশ্চিমে বৃহৎ আম্রবৃক্ষোদ্যানে প্রাচীন সঙ্ঘরাম বিদ্যমান৷ এই স্থানের সাথেই অসঙ্গ বোধিসত্ত্বের রাত্রিতে মৈত্রেয় বোধিসত্ত্বেও রাজপ্রাসাদে গমন করিছিলেন এবং সেখানেই যোগাচার্য্য শাস্ত্র, মহাযান সূত্রলঙ্কারটীকা, মধ্যস্থ বিভাঙ্গশাস্ত্র প্রভৃতি জনসাধারণের জন্য ব্যাখ্যা করেছিলেন। আম্রোদ্যানের উত্তর পশ্চিমদিকে একশত পদ দূরে তথাগতের চুল ও নখ রক্ষিত আছে৷ গান্ধারবাসী অসঙ্গ বোধিসত্ত্বকে এখানে বসুবন্ধু বোধিসত্ত্ব তৃষিত স্বর্গ থেকে এসে দর্শন দিয়েছিলেন। বসুবন্ধু বোধিসত্ত্ব সর্বস্তিবাদিন সম্প্রদায়ভুক্ত ছিলেন। তাঁর ধীশক্তি, তীক্ষ্ম বুদ্ধ, তাঁর জীবনে খ্যাতি আনে। অসঙ্গ বোধিসত্ত্ব আগে মারা যান, তারপর বসুসিংহ পরে বসুবন্ধুবোধিসত্ত্ব দেহ রাখেন৷ বলা হয় অসঙ্গ বুদ্ধের প্রস্থানের সহস্র বৎসর পর জন্মগ্রহণ করেছিলেন৷ তাঁর একান্ত অনুগত শিষ্য ছিলেন বুদ্ধসিংহ।। এনারা তিনজনই মৈত্রেয়ের সম্মুখীন হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
অঙ্গদ বোধিসত্ত্ব সরাসরি মৈত্রেয়ের নিকটস্থ পদ্মপুষ্প পান নি৷ ঋষি দেবের হাত ধরে তিনি মৈত্রেয়ের তুষ্টি লাভ করেন৷ বুদ্ধসিংহ আনন্দ পঙ্কে নিমর্জিত ছিলেন।ঋষি দৈবের দর্শনে জানা যায়, যে, মৈত্রেয়ের শরীরের সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। পবিত্র, মধুর স্বাদে তিনি হলেন পরিতৃপ্তির ফসল। অসঙ্গের ধর্মপ্রচার গৃহ হতে ৪০ লি উত্তর পশ্চিমে এক পুরাতন সঙ্ঘারাম বর্তমান। এইস্থানেই বসুবন্ধু প্রথম মহাযান পুস্তক অধ্যায়নে ব্রতী হন৷ একপ্রকার প্রকৃত বিধির কাছে আয়োজনকে প্রকট করে বোধগম্য ভবির বুকে রেখেই বসুবন্ধু মহাযান গ্রহণ করেন৷ তিনি শতাধিক শাস্ত্র প্রণয়ন করেন৷ এইখানে হিউয়েন সাং এর যাত্রাপথের অযোধ্যা অভিজ্ঞতা প্রজ্ঞাপ্রাপ্ত হয়।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours