শুভশ্রী সাহা, লেখিকা, কলকাতা:
পুরুষ হওয়ার জ্বালা অনেক। পুরুষকে ছোটবেলা থেকেই তার মা এক বিশেষ ফরম্যাটে ফেলে দেখতে চায়। কঠিন কর্তব্য পরায়ণ, সংগ্রামী, কেরিয়ার প্রিয়, আবেগ বর্জিত স্বচ্ছ লড়াকু নিয়ম নিষ্ঠ আদর্শবাদী চরিত্র। ছেলেরা প্রথম থেকেই বুঝে যায় তাদের বেশি আবেগ আশা অন্যায়। কাঁদা কাটা মানেই স্কুল কলেজে টিজিং, ছেলে হয়েছিস মানেই কেড়ে নে, নয়ত যারা করেছে সবখ শেখাও, অর্থাৎ বাবু তুমি নরম পন্থী হতে পারবে না। সাহিত্যিক কবি শিল্পী গায়ক বললেই প্রথমে হোঁচট খেতে হবে মা বাবাকে। ভাই তুমি ডাক্তার ইঞ্জিনীয়ার জজ ম্যাজিস্ট্রেট হও, নিদেন পক্ষে ব্যবসায়ী কিন্তু অস্থায়ী আয়তে থেকো না। তোমার ভালোলাগার আশায় ছাই দাও। এই সব সারবত্তা বুকে নিয়েই পুরুষ সংসারে প্রবেশ করে তখন তার চোখের ভিজে তটরেখা অনেকটাই শুকনো হয়ে এসেছে। তারপরে একটি নারী এবং শিশুর দায়িত্ব আলাদা করে পড়ে। নারী তার মায়েরই প্রতিমূর্তি, বাস্তববাদী হিসেবী , বেশির ভাগই তাদের মতে শিশুর সাথে সময় দেওয়ার থেকেও তার বড় কাজ ইস্কুলের ফিজের ব্যবস্থা করা।শিশু কাদাতাল সে ছোট থেকেই বুকের ভেতরে বসত করতে শুরু করে। বাচ্ছাদের দেখেছি মায়ের কোলে উঠলে আঁচল মুঠো করে ধরে, কিন্তু বাবার বুকে ঝুলতে ঝুলতেও নিশ্চিন্তে ঘুমায়। এই আশ্চর্য নিরাপত্তাতে সে প্রথম থেকেই বসত করে আসছে। তাই মা বা স্ত্রীর যে সীমাহীন চাহিদা পুরুষটিকে পেরোতে হয় এই শিশুটির কাছে কিন্তু তার একটিই পরিচয় দাঁড়ায় সে বাবা।
শিশুটি বড় হতে হতেই বাবা তার কাছে হয়ে ওঠে আশ্রয় অস্তিত্ব, আলাদীনের জীন, আর বাবার কাছে সেও বাবার অনেক। ছোটবেলায় ফেলে আসা ছিঁড়ে আসা মাটির নরম শিকড়। নিজের সমস্ত চাওয়া পাওয়া অপ্রাপ্তির কোলে জেগে ওঠা আশার চিরাগ। তাই বাবার কোল থেকে বেয়ে পড়া জল অক্লেশে সন্তানই মুছিয়ে দিতে পারে। বাবার যাবতীয় অক্ষমতা, অপারগতায় ঢেকে দেয় নরম সবুজ পাতা। ক্ষমা করে দেয় যাবৎ বঞ্চনাকে। এই রসায়ন শুধুই সন্তান এবং বাবার-- বাবা মানেই আইকন, বাবা মানেই ম্যাজিক স্টিকস, বাবা মানেই তুমুল ভালোবাসা বাবা মানেই হিরো, বাবা মানেই দীর্ঘ ছায়ার কোমল ধারাপাত। বাবাময় হয়ে হোক জীবনের প্রতিটি দিন।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours