দীপ্তেন্দু চক্রবর্তী, প্রবাসী লেখক, টরোন্টো, কানাডা:

গরম পড়ে গেছে। এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর অবধি আমাদের গরম থাকে । অন্টারিও রাজ্যে এই সময় প্রচুর ফল, তরি  তরকারি উৎপাদন হয়। আর সারা মাসে মেক্সিকো, ক্যালিফোর্নিয়া, ক্যারিবিয়ান থেকে বেগুন, সিম, শাক, কপি, আর সমস্ত রকমের তরকারি আমদানি করতে হয়। টরোন্টো থেকে পঞ্চাশ মাইল গেলেই নায়েগ্রা অঞ্চল। সেখানে কয়েক একর জমিতে আপেল, ন্যাস্পাতি, আঙ্গুর, পিচ, নানা ধরণের বেরি, ভুট্টার চাষ হয়। আমরা যাই উইকেন্ডে। এক বিরাট ঝুড়ি বেগুন, সিম, ভুট্টা, টম্যাটো তুলে আনি কম ডলারে। এদেশের ভুট্টা চিনির মতো মিষ্টি আর নরম। নাম পিচ আর ক্রীম । একটা দানা হলদে, আরেকটা দানা সাদা। সামারে খুব ভুট্টা খাওয়া হয়। পুড়িয়ে বা সেদ্ধ করে মাখন লাগিয়ে। আমাদের খাওয়া অনেক পাল্টিয়ে গেছে এদেশে আসার পর। বিশেষ করে আমাদের বাড়িতে। আমি ছোটবেলা থেকেই এদেশে। তাই এদেশের মতো খাবার রান্না হয়।
সকালে কফি বা চা, টোস্ট। দুপুরে স্যালাড, আর নানা রকমের স্যান্ডুইচ বানানো হয়। হ্যাম, চিজ, ডিম, বা চিকেন দিয়ে স্যান্ডুইচ। রাত্রে ভালো করে ডিনার। আলু সেদ্ধ , ভুট্টা সেদ্ধ, নানা ভেজ সেদ্ধ, বিফ রোস্ট বা চিকেন রোস্ট, বা ভেড়ার বা পর্কের চপ। যথেষ্ট। আবার বেশির ভাগ বাঙালির বাড়িতে ভাত, ডাল , পোস্ত , মাছের ঝোল, বা মাংস, বেগুন ভাজা একেবারে দেশের খাওয়া হয়। রুই বা ইলিশ বা পাবদা, কাতলা, সব পাওয়া যায় বাংলাদেশী দোকানে।ফ্রোজেন। আমাদের খাওয়া হয় না। এইবারে অন্টারিওর ফার্মাররা খুব ঝামেলায় পড়েছে। পরিযায়ি শ্রমিকেরা মেক্সিকো থেকে আসতে পারছে না করোনার  জন্য। এইসব শ্রমিকরা  প্রতি বছরে এখানে আসে কয়েক মাসের জন্য। ফার্মে কাজ করে, ফল তোলে, মাঠের কাজ করে। তারপর কিছু ডলার নিয়ে মেক্সিকোতে ফিরে যায়।চারমাসে কাজ করে পাঁচ লক্ষ টাকা মতো জমায়। এবার কি হবে জানি না। স্থানীয় লোকেদের বহু ডলার দিয়ে কাজ করাতে হবে।অন্টারিওর আইস ওয়াইন বিশ্ব বিখ্যাত। জার্মানি ছাড়া সব দেশ বানায় না। খুব ভোর বেলায় যখন আঙুরগুলো জমে শক্ত পাথরের মত হয়ে থাকে তখন সেই আঙ্গুর তোলা হয়। সঙ্গে সঙ্গে সেই শক্ত আঙুরের রস বার করে আইস ওয়াইন জন্য রাখা হয়। খুব দাম। ৭৫০ মিলের দাম $১৫০/$২০০ ডলার। যেখানে আমরা কিনি $১৫/২০ ডলারে। অবশ্য হাজার দলের বোতলের ওয়াইনও পাওয়া যায়।
এ বছরটা খুব খারাপ বছর। বহু বন্ধু বান্ধব মারা গেছে হটাৎ। এখন দশ জনের বেশি ফিউনারেল হোম যেতে দিচ্ছে না। এখানে শব দাহর কাজ ফিউনারেল হোমের অফিস করে থাকে। আপনি ওদের ভাড়া করবেন। ওরাই হাসপাতাল থেকে দেহ তুলে সাজিয়ে একেবারে গাড়ি করে চুল্লিতে নিয়ে যাবে। ফিউনারেল হোমে দুশোর ওপর মানুষের বসার জায়গা থাকে। দেহকে একটা কফিনের মধ্য রাখা হয়। বন্ধুরা নানা কথা বলে তার সম্বন্ধে, ফুল দেওয়া হয়। ব্যাস। অনেকেই কালীবাড়িতে শ্রাদ্ধ শান্তি করে থাকেন। টরোন্টো শহরে বহু বাঙালি প্রায় পঞ্চাশ বছরের ওপর আছেন। আমাদের অনেক দাদাদের বয়স এখন আশি নব্বইয়ের ওপরে। খবর আসে যে অমুক দাদা আর নেই। এখন আর যাওয়া হয় না। আগে আমরা ফিউনারেল হোম থেকে পঞ্চাশটা গাড়ি নিয়ে দেহের পেছনে পেছনে যেতাম। লাইন করে। লাল বাতি সেদিন দেহের সম্মানে খোলা থাকে। আমাদের  গাড়ি সে দিন থামে না। তবে একটাই মুশকিল এদেশে। প্রধানমন্ত্রী মারা গেলেও অফিস ছুটি না। শোক দিবস আছে।সরকারি পতাকা অর্দ্ধেক নামানো থাকে। আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। মশা নেই, মাছি নেই, কুকুর বিড়াল নেই, মিছিল নেই, বন্ধ নেই, কাটমানি কি কেউ জানেন না। প্রধানমন্ত্রীকে কেউ রসগোল্লার ভেতরে পাথর দিয়ে দাঁত ফেলে দেবার হুমকি দেয় না।বড্ডো এইসব নাটক মিস করি।  ভালো থাকবেন। (ক্রমশঃ) 

(ছবি সৌজন্যেঃ প্রতিবেদক)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours