শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

একি যুদ্ধের খোলসে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নাকি বানিজ্যিক খেলা!

১৯৭৯ খৃষ্টাব্দে ১৬ জুলাই ওয়াশিংটন পোষ্ট পত্রিকায় একটি নিউজ ছাপা হয়, 'শাত ইল আরব"তেল সম্পদে  ভরপুর। শাত ইল আরব,  হলো ইরান ও ইরাক সীমান্তে বিরোধপূর্ন এলাকা। দু দেশই এই ছোট্ট অঞ্চলের মালিকানার দাবিদার। এই নিউজ ছাপার পর পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে যায়। সীমান্তে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। গুলাগুলি হয়৷ তারপর দুদেশই জাতিসংঘের যায়৷ জাতিসংঘ কোন সিদ্ধান্ত না দেয়ায়। পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারন করে। এবং ২২ সেঃ ১৯৮০ থেকে ২০ আগষ্ট ১৯৮৮ পর্যন্ত দুদেশ যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অধিকাংশ মুসলিম দেশ ও মার্কিন মিত্ররা ইরাকের পক্ষে অবস্থান নেয়। 

আট বছর যুদ্ধ চলার পর, জাতিসংঘ মধ্যস্থতা 
করতে আসে৷ জাতিসংঘ জানায়,আর যুদ্ধ নয়। শাত ইল আরবে যা তেল পাওয়া যবে দুদেশ ভাগ করে নাও।  উত্তম প্রস্তাব বটে!  তা এই কথাটা জাতিসংঘ ৯ বছর আগে বললেই তো আট বছর যুদ্ধ হতো না! 
ইরান ও ইরাক মেনে নিলো। এই ভাগাভাগির প্রস্তাব এ দুদেশও দিতে পারতো প্রথমেই,, যা না করে আট বছর যুদ্ধ করে গেলো। এই যুদ্ধের ইতিহাস  আরো কতো করুন ও হাস্যকর। সে জন্যই এ লেখার অবতারনা।

তেল উত্তোলনের জন্য যে কারিগরি সক্ষমতা থাকা দরকার  তা তো আর এ দুদেশের নেই। যদিও তারা  আট বছর যুদ্ধ করেছে।  অতপর ডাক পরে আমেরিকার।  আমেরিকার সাথে তেল উত্তোলনের চুক্তি করে দু দেশ! আমেরিকা সার্ভে করে ইরান ও ইরাককে জানায়, "শাত ইল আরবে" কোন তেলই নেই! অথচ এই অঞ্চলের মাটির তলার তেলের কূপ দখলের  আশায় এই দুই দেশ আট বছর যুদ্ধ করলো! এবার দুদেশ গেলো নয় বছর আগের পত্রিকায় ছাপা নিউজ রিপোর্টার ও সম্পদকের বিরুদ্ধে মামলা করতে। মামলা হলো যথারীতি।  ওয়াশিংটন পোষ্ট জানালো তারা মার্কিন স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত উৎস থেকে নিউজ ছেপেছে। নিউজের ভুলভ্রান্তির দায় ভার পত্রিকার নয়। মার্কিন গবেষণা সংস্থা জানায় যন্ত্রের ভুল হতেই পারে! তাই তারা কোন তথ্যের ভুলত্রুটির জন্য  ক্ষতিপুরণ দিতে বাধ্য নয়! 
১৯৪৫  সালের পর আমেরিকা নিজের ভূমিকে যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে দেয়নি৷ ইউরোপের কোন দেশ নিজেরা নিজেরা যুদ্ধে জড়ায়নি৷ এমন কি তারা নিজেদের ভিসা মুক্ত করেছে! আরো বিষ্ময়কর বিষয় হলো।  তারা এক দেশের নাগরিক অন্যদেশেও চলে যাচ্ছে ৪৮ ঘন্টার নোটিশে সকল সম্পদ নিয়ে। এবং উভয় দেশের  সরকার ও  প্রশাসন  স্বাগত জানায়৷ ফাইল আটকে কেউ টাকা নেয় না। বাধা নেই,কোন প্রশ্ন করা হয় না। ইউরোপের এক দেশের নাগরিক অন্য দেশে কোন প্রকার হয়রানি ছাড়া চাকুরি ও ব্যবসাও করতে পারে। 

 লক্ষ্য করার মত বিষয় যে, ১৯৪৫ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত  ৪ শতের অধিক ছোট বড় যুদ্ধ হয়েছে সব  ইউরোপ ও আমেরিকার মাটির বাইরে।  এবং অনেক যুদ্ধ এখনো চলমান। আরো কত যুদ্ধ বাধানোর জন্য বিজ্ঞ সমর বিশারদরা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে, তাদের কাপলের ঘাম ঝরাচ্ছেন তা আমাদের ছোট মাথায় ঢুকবে না! যাতে তাদের এসব  যুদ্ধ যুদ্ধ নামের বাণিজ্যিক খেলা  আম জনতার মাথায় না ঢুকে তার আয়োজনও সমর বিশারদরা যুদ্ধ বাধার আগেই করে থাকেন। এসব যুদ্ধ, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নাকি বাণিজ্যিক খেলা তা নিয়ে ভাবনার দাবি রাখে। 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours