ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:
এ প্রসঙ্গে একটি কিংবদন্তী আছে। গোপীনাথ চট্টোপাধ্যায় গোরুর গাড়ীতে, সওয়ার হয়ে যাওয়ার সময় তাঁর গোরুর গাড়ীর চাকায় ধাতব বস্তুর সাথে সংঘর্ষের আওয়াজ হয়। সেখানেই গাড়ী থামিয়ে মাটি খুঁড়ে সাত ঘড়া( কলসী) সোনার মোহর পান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সেই স্হানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করবেন। এরপর তিনি বর্ধমান মহারাজের নিকট এলাকার জমিদারীর ইজারা নিলেন।
তবে উল্লেখিত কিংবদন্তীর সমর্থনে কোন প্রামাণ্য তথ্য নেই। এটি শুধুমাত্র জনশ্রুতি।
গোপীনাথ চট্টোপাধ্যায় জমিদারী লাভ করে নিজ নামে গ্রামের নাম করন করলেন ' গোপীনাথপুর।গ্রামের আর একটি নাম হ'ল ' সগরভাঙা ' কথিত আছে, পুর্বে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাতায়াতের সময় এই রাস্তায় একটি কর্দমাক্ত ডোবায় পড়ে গোরুর গাড়ীর চাকা ভেঙ্গে যেত ( তখন সাধারণ মানুষের পরিবহনের প্রধান মাধ্যম ছিল গরুর গাড়ি)। তাই গ্রামের নাম হয় 'সগরভাঙা ' সগর শব্দের অর্থ গরুর গাড়ি।
গোপীনাথপুর মৌজা সরকারী রেকর্ডে ' লাট গোপীনাথপুর মৌজা ( জে, এল, নং-৮৫)নামে নথিভুক্ত। এই মৌজা দুই বর্ধমান জেলার বৃহত্তম এবং রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৌজা।
গোপীনাথ চট্টোপাধ্যায় - এর তিন সন্তান। এক কন্যা দুই পুত্র। কন্যা আনন্দময়ী প্রথম সন্তান। পুত্রদের মধ্যে বড় নন্দদুলাল ছোট দুর্গাচরন।
কন্যা আনন্দময়ীর বিয়ে হয় নডিহা গ্রামের মুখার্জি পরিবারে। তার নামে নডিহা সংলগ্ন ' আনন্দপুর গ্রাম'-এর নাম করন হয়। পুর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে গোপীনাথ চট্টোপাধ্যায় এর কনষ্ঠ পুত্র দুর্গাচরন চট্টোপাধ্যায়ের নামে আজকের শিল্পশহর দুর্গাপুরের নামকরণ হয়েছে। গোপীনাথ চট্টোপাধ্যায় এর দুই পুত্রের জ্যেষ্ঠ নন্দদুলাল বৈষয়িক ছিলেন না। কিছুটা আধ্যাত্মিক প্রকৃতির ছিলেন। কনিষ্ঠ পুত্র দুর্গাচরন ছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীত। পুরো মাত্রায় বিষয়ী।
নন্দদুলাল এর চার পুত্র উমাকান্ত। রাধাকান্ত,ও ভৈরব। কনিষ্ঠ পুত্র ভৈরবের নামে ভৈরবপুর গ্রাম। নন্দদুলাল এর দুই পুত্র সর্বেশ্বর ও শ্যামাচরন ।শ্যামাচরনের নামে শ্যামপুর গ্রাম।
গোপীনাথপুরের জমিদার পরিবারের কূলদেবী মা কালী। পাকা মন্দিরে মায়ের অধিষ্ঠান। বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেবী এখানে দক্ষিণ বাহিনী নন। উত্তর বাহিনী। দেবী।নিত্য মাছের ভোগ দিতে হয়।কার্তিকী অমাবস্যায় বিশেষ পুজা না হলেও প্রতি অমাবস্যায় বিশেষ পুজা সহ ছাগ বলি হয়। (চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours