ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

বীরভানপুর  গ্রামের  প্রাচীনতা   বোঝা যায়  প্রাচীন মন্দিরগুলি  অবলোকন  করে। এই  গ্রামের  জমিদার  ছিলেন 'রায় পরিবার '। জমিদার  পদ্মলোচন  রায় গোপীনাথ  জীউ  এর  প্রতিষ্ঠা  করেন।  গোপীনাথ  মন্দিরের  প্রবেশ  পথের  বাম  দিকে  বেলে  পাথরের  জোড়া  শিব মন্দির।  জোড়া  শিব মন্দিরের মাঝে  দুর্গা দালান। 
      এই  মন্দিরগুলির  আনুমানিক  পঞ্চাশ  গজের  মধ্যেই  রয়েছে  পদ্মলোচন রায়  প্রতিষ্ঠিত  গোপীনাথ জীউ এর  মন্দির।  আগাগোড়া বেলে পাথরে নির্মিত। এই   মন্দিরটি রাঢ়রাংলার চার  চালার  আদলে  নির্মিত। চারটি  চালার  উপরে  আরো  একটি  ছোট  চার চালা ।মন্দিরটি  বহু  প্রাচীন  বলার  অপেক্ষা রাখে না। এই  গ্রামে  ঘোষালদের  কুল দেবতা  বিষ্ণু  মন্দির টি  প্রাচীন  ও এক রত্ন  বিশিষ্ট।  
            গ্রামের  মধ্যস্হলে  আচার্য  পাড়ায়  তিনটি  শিব  মন্দির  আছে। একটি  জোড়  মন্দির। অন্যটি পৃথক।  প্রাচীর  দিয়ে  ঘেরা  মন্দির  প্রাঙ্গণে  ঢোকার মুখে  বাম  দিকে  জোড় মন্দির। রামেশ্বর     শিব মন্দির পাঁচ ফুট  দাওয়ার  উপর রেখ দেউল রীতিতে  নির্মিত। মন্দিরটি দক্ষিনমুখী।   সন্মুখভাগে  অপূর্ব  টেরাকোটার  স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে।  টেরাকোটার   মুর্তিগুলির  মধ্যে উল্লেখযোগ্য  হর গৌরী, দেবী দুর্গা, লক্ষী, সরস্বতী, কার্তিক, গনেশ, নারদ, সেবিকা, প্রহরী ,ব্রহ্মা, নন্দী, ভৃঙ্গী, জয়া  বিজয়া  ইত্যাদি। মন্দিরটি  আনুমানিক তিন'শ বছর পূর্বে   নির্মাণ  করেন  ঈশ্বর  আচার্য। 
          রামেশ্বর  শিব মন্দির থেকে  কয়েক গজ দুরে মন্দির চত্বরে  প্রবেশ দ্বারের ডান দিকে   লক্ষীশ্বর   ও কাঞ্চনেশ্বর শিব মন্দির।  মন্দির দুটি  পুর্বমুখী।  এই  মন্দিরটির সন্মুখভাগে অপূর্ব টেরাকোটার স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে।  একই ভিতের  উপর  নির্মিত  তাই  জোড়  মন্দির  বলা হয়।  মন্দির দুটি  নির্মাণ  করেন কাশীনাথ দত্ত  ও  কাঞ্চনেশ্বরী দত্ত। 
             মন্দির  প্রাঙ্গণে   একটি  মন্দিরে দুর্গা  ও জগদ্ধাত্রী পূজা  হয়।  দেব দেবীর  বর্তমান  সেবাইত  আচার্য  পরিবার  ও এই  পরিবারের  দৌহিত্ররা। 
               বীরভানপুর গ্রামের প্রাচীনতা  শুধু  মন্দির  আর  স্থাপত্য  দিয়ে  প্রমান  হয়  না।  দামোদরের  তীরে  এই  বীরভানপুরের  মাটিতে  মাইক্রোলিথিক  যুগে  মানব  সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।  ১৯৩৫ সালে  নডিহা  গ্রামের  অজিত কুমার  মুখোপাধ্যায়  বীরভানপুর গ্রামে কয়েকটি  ক্ষুদ্রাস্মীয়  পোড়া মাটির  অস্ত্রের  সন্ধান পেলে  বিষয়টি  ভারত সরকার এর  প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে  জানান। সেই  বছর  পুরাতত্ত্ব  বিভাগের  তৎকালীন  সুপারিনটেনভেন্ট  ননী  গোপাল  মজুমদার সরজমিন  অনুসন্ধান করে  রিপোর্ট দেন। তার  ভিত্তিতে  ১৯৫৪ ও ১৯৫৭    সালে  দুবার  তৎকালীন  পুরাতত্ত্ব  বিভাগের  যুগ্ম  মহা নির্দেশক  ব্রজবাসী  লালের  তত্বাবধানে  খনন  কার্য  চলে এবং পোড়ামাটির  যুগের  ২৮২ টি  ক্ষুদ্রাস্মীয়  নিদর্শন  পাওয়া যায়। এগুলি  আবিস্কৃত  হওয়ার জানা  যায়  সেই  সময়  আদিম  মানুষের মূল  জীবিকা  পশু  শিকার  হলেও  যাযাবর জীবন  থেকে  স্হায়ী  বসবাসের জন্য  কৃষিকাজ  করতে  শুরু করে।  ব্রজবাসী  লালের  মতে  আবিস্কৃত  নিদর্শন গুলি  আনুমানিক  চার  হাজার বছরের প্রাচীন।  আরও খনন  কার্য  করার  প্রয়োজন  থাকলেও  এক  অদৃশ্য  কারনে  অনুসন্ধান  বন্ধ করে দেওয়া হয়।  কিন্তু  বিশেষজ্ঞদের মত  অজয়  ও দামোদর অববাহিকায়  অনুসন্ধান  করলে  প্রচীন  মানব  সভ্যতার  বহু  নিদর্শন  পাওয়া যাবে। (চলবে)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours