আসাদ মল্লিক, ফিচার রাইটার, চুঁচুড়া, হুগলি:

কলিশন

করোনা ভাইরাসের আক্রমণে দিশেহারা মানবজাতি। আর এই গৃহবন্দি প্রাণীদের দৌলতে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছে প্রকৃতি, অভূতপূর্বভাবে কমেছে দূষণ মাত্রা। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এই সময় খুবই কঠিন। আর এই কারণেই দ্য জার্মান সোসাইটি ফর নেচার ফটোগ্রাফি(জিডিটি) আয়োজন করে একটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার। প্রায় ৭টি বিভাগে আলোকচিত্রশিল্পীরা প্রায় ৫০০০ ছবি জমা করেন, যার মধ্যে ৭০ টি ছবি নির্বাচিত হয়। বিশেষ বিভাগ(ওয়াটার)-এ তৃতীয় স্থানের অধিকারী হয় বিরঘিট পথ্যফ্যের 'কলিশন'।

আলোকচিত্রটি দেখলে সায়েন্স ফিকশনের গল্প মনে পড়া স্বাভাবিক। সকালবেলায় শিশিরবিন্দু কিভাবে একে-অপরের সাথে লেগে থাকে, তারই একটি আণুবীক্ষণিক ছবি এটি। জলকণারা কিভাবে তারজালির মত গঠনের মাধ্যমে একসাথে আছে, তা দেখলে অবাক হতেই হয়!

ছবিতে যেভাবে জলকণাদের মাকড়সার জালের মত লেগে থাকতে দেখা যায়, তা দর্শককে আকর্ষিত করে। ছবির দিকে তাকিয়ে আরও কিছু আবিষ্কারের চেষ্টা করতে বাধ্য হয় কৌতূহলী দর্শকের মনন। সকালের শিশিরবিন্দুর এমনতর ছবি দেখে এটি বলাই বাহুল্য যে, প্রকৃতির রাজ্য রহস্যময়!
অত্যাধুনিক ক্যামেরা এবং উচ্চ রেজোলিউশনের কারণে এমন আলোকচিত্র গ্রহণে সক্ষম হয়েছেন বিরঘিট পথ্যফ্য। 'কলিশন' নামটিই ব্যক্ত করে ছবির বিষয়বস্তু। ছবিতে ভিন্ন ভিন্ন আকারের জলবিন্দুর অভ্যন্তরীণ টান চোখে পড়ে, মূলত যার জন্য সংঘর্ষ হয় ও জলবিন্দুগুলি জুড়ে গিয়ে বৃহৎ জলকণায় পরিণত হয়। যদিও প্রথমেই নামটি শুনলে কোনো দুর্ঘটনার কথাই মাথায় আসে অধিকাংশ দর্শকের।

প্রকৃতির রাজ্যে যত আণবিক স্তরে যাওয়া যায়, ততই রহস্যের পরিমাণ বাড়ে। তেমনই এই জলবিন্দুগুলির ক্ষেত্রেও। ভোরবেলা শিশিরে পা ডুবিয়ে সবুজ ঘাসভরা মাঠে হাঁটতে কার না ভালো লাগে! উক্ত আলোকচিত্রে শিশিরবিন্দুদের এমন আণবিক চিত্র দেখতে পেয়ে স্বভাবতই উৎফুল্ল নেটিজেনরা। অনেকে আবার এই জলবিন্দুদের সাথে মানব সমাজের মিল পেয়েছেন। অনেকে তুলে এনেছেন 'মাৎস্যন্যায়'-এর কথা।

'ক্লোজ অ্যাঙ্গেল' অর্থাৎ প্রচন্ড কাছ থেকে উচ্চমানের লেন্সের সাহায্য নিয়ে গৃহীত হয় ছবি। এই 'কলিশন'-ও সেই প্রযুক্তিগত উন্নতির একটি নিদর্শন। যেখানে একদশক আগেও এমন ছবির জন্যে অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া অসম্ভব মনে হত, সেইখানে আজকাল ক্যামেরা ও অত্যন্ত উন্নতমানের লেন্সের সাহায্যে এমনতর ছবি তোলা সম্ভব হচ্ছে!

বিরঘিট পথ্যফ্যের 'কলিশন' শুধুমাত্র একটি আলোকচিত্রই নয়, এটি মানবসভ্যতার উন্নতির একটি স্মারক, একটি নিদর্শন। মানুষ আজ এতটা উন্নত হতে পেরেছে যে পদার্থের অভ্যন্তরীণ ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রহস্যও ভেদ করা সম্ভবপর হচ্ছে। অতি সাধারণ শিশিরবিন্দুর ছবিও যে এতটা আকর্ষক হতে পারে, তা দেখিয়ে দিয়েছেন বিরঘিট। আণবিক স্তরের ছবি হওয়ায় আলোকচিত্রে রঙের প্রাচুর্য নেই, তবে তথ্যভিত্তিক হওয়ায় অনেকেই এই ছবিকে উক্ত বিভাগে প্রথম স্থানের দাবিদার বলে মনে করছেন! (ক্রমশঃ)

(ছবি সৌজন্যেঃ ইন্টারনেট)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours