শেখ ফরিদ, প্রগতিশীল লেখক, বাংলাদেশ:

শশী পুন্নু ছায়াছবির কথা মনে আছে? আমি তখন ছোট।শাবানা আলমগীর অভিনিত সাদা কালো ফিল্মে  তৈরী শশী পুন্নু ছবিটি  দেখেছি। এই শশী পুন্নুর ছবিটি মূলত সিন্ধ ও বালোচ লোককাহিনী।  যা খুবই জনপ্রিয়। এতই জনপ্রিয় যে, আমরা যখন সিন্ধ ও বালোচ শব্দ দুটি শুনিনি৷ তখন এই কাহিনী অবলম্বনে সিনেমা দেখেছি। যদিও মুল লেখা পাঞ্জাবী ভাষায়।  এবং আমরা যে সিনেমা দেখেছি তা সিনেমার কাহিনী নিজের মত সাজিয়েছেন৷  আমার ধারনা সিনেমার কাহিনীকার মুল কাহিনী,  "কিস্সা শশীপুন্নু"  কখনো পড়েননি। কেন না, বাংলাভাষায় শশীপন্নুর অরিজিনাল কপি নেই। ইংরেজিও আমি খুজে পাইনি৷ পাঞ্জাবি ভাষা আমি খুব ভালো জানি না। তাই এই কাহিনীর অনুবাদ করে পড়তে আমার বেশ সময় লেগেছে। মূল বই থেকে কাহিনী  অন্যদিন লিখবো।

শশী পুন্নুর মূল কাহিনী লিখেছেন, মদীনায়(. আজকের সৌদী আরব)  জন্ম নেয়া হাশিম শাহ। হশিম শাহের পরিবার দেশান্তরী হয়ে মদিনা থেকে পাঞ্জাবে বসবাস শুরু করে। আজনালা নামক গ্রামে,  জাগদেব কালানা, জেলা ঃ অমৃতসর।  হাশিম শাহের পরিবারের পেশা ছিলো হেকমি।  এ ছাড়া তার বাবা ও দাদা পীর মুরিদিও করতো।
কবি ও লেখক হাশিম এক সময় ঘর তৈরী করার দিন জুরের কাজও করেছেন!  তার লেখা ও মেধার খবর শুনে  মুগ্ধ হয়ে মহা রাজা হরি সিং ও কয়েকজন শিখ সম্প্রদায়ের ব্যাক্তি পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। তার পর আর কবি হাশিম শাহ কে পেছনে  ফিরে তাকাতে হয়নি। কবিতা, গল্প লেখা শুরু করেন। তার কোন কোন লেখা তো কালজয়ী হয়। যেমন, কিস্সা শশী পুন্ন, কিস্সা শিরিন ফরহাদ, এসব গল্প ব্যার্থ প্রেমের কাহিনী।  তিনি এসব কাহিনী কবিতায় লিখেছেন৷ তার লেখায় আরবী ফার্সী, হিন্দী ও পাঞ্জাবি ভাষা স্থান পেয়েছে৷ তার লেখা গল্প কবিতা ছিলো, সে সময়ের মান উত্তীর্ণ এবং ব্যাতিক্রম। সমৃদ্ধ ছিলো তার লেখার শব্দ ও বাক্য তৈরীর কৌশল।

ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশে হাশিম শাহের  লেখা কিস্সা শশী পুন্নু নির্ভর করে অনেক সিনেমা তৈরী হয়েছে। বাংলা, পাঞ্জাবি সিন্ধী উর্দু সহ বেশ কিছু  ভাষায় এই কাহিনী নির্ভর মুভি তৈরী করা হয়েছে। হাশিম শাহের অনুসারী ও তার কবিতা ও গল্পের ভক্তরা তার উপর বেশ কিছু বই লিখেছেন।  তার কবিতায় সূফী প্রভাব স্পষ্ট।

১৭৩৫ খৃষ্টাব্দে জন্ম নেয়া হাশিম শাহ ১০৮ বছর বয়সে  ১৮৪৩ খৃষ্টাব্দে আজকের পাকিস্তানে মারা যান।  পাকিস্তানের থারপাল গ্রামে মে জুন মাসে তার নামে উরস বা মেলা হয়। তিনি শশী পুৃন্নু,  শিরি ফরহাদ সহ কবিতা লেখার জন্য  সাহিত্যে অমর হয়ে  থাকবেন। সিন্ধী, বেলুচ ও পাঞ্জাবিদের কাছে  হাশিম শাহ পরম  পু্ঁজনীয়।

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours