আসাদ মল্লিক, ফিচার রাইটার, চুঁচুড়া, হুগলি:

টেক-অফ

লকডাউনের আবহে আবদ্ধ গোটাবিশ্ব। পশুপ্রেমীরা চিন্তিত পশুদের উপর করোনার প্রভাব নিয়ে। আর এরই মাঝে দ্য জার্মান সোসাইটি ফর নেচার ফটোগ্রাফি (জিডিটি) কর্তৃক আয়োজিত একটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় অভূতপূর্ব প্রায় ৫০০০ চিত্রের সম্ভারে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে পশুপ্রেমীরা। নানা ছবির মধ্যে এই সারস শ্রেণীর একঝাঁক পাখির উড়ানের দৃশ্য দেখতে পেয়ে স্বভাবতই খুশি নেটিজেনরা।

'বার্ডস'(পক্ষী) বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছে ফ্লুরিন লিউগারের 'টেক-অফ' ছবিটি। কার্যত ঝাপসা এই ছবিটি দেখে প্রথমেই মাথায় আসবে বিচারকরা এই ছবি কেন নির্বাচন করলেন! তবে আলোকচিত্রটি মন দিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে এটি শুধুই একটি ছবি নয়, 'টেক-অফ' কিছুটা অ্যাবস্ট্রাক্ট ছবির মতও দেখতে লাগে। ছবিতে সারস শ্রেণীর পক্ষীদের জল ছেড়ে ওড়ার মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করে এক অসাধারণ দৃশ্য উপহার দিয়েছেন ফ্লুরিন লিউগার।

এমন ছবি তোলা সম্ভব একমাত্র শাটারের গতি শ্লথ করে, ক্যামেরার পরিভাষায় যাকে বলা হয় 'স্লো শাটার স্পিড'। এক্ষেত্রে ক্যামেরা অনেক দ্রুত যেকোন মুহূর্তকে তুলে নিতে পারে। 'টেক-অফ' ছবিতে দেখা যায় সারসপাখিগুলি দলবেঁধে সবে উড়তে শুরু করছে। আলোকচিত্রশিল্পী এর কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, 'কয়োত'-এর তাড়া দেওয়ার কথা। কয়োত একপ্রকারের নেকড়ে জাতীয় প্রাণী। প্রাণভয়ে পলায়মান পক্ষীদের এই ছবিটি নিঃসন্দেহে দর্শককে এটা বুঝিয়ে দেয় যে, সঙ্কট যতই প্রবল হোক, প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করতেই হবে!
ছবিটি দেখে অনেকেই এটির উৎকর্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এই 'ব্লারি' বা ঝাপসা ছবিটিকে অনেকেই পুরস্কারের যোগ্য বলে মনে করছেন না। ফলত এটা বলতেই হবে যে, এত বড়মাপের প্রতিযোগিতার জন্য এমন ছবি বেছে নেওয়ার জন্য ফ্লুরিন লিউগারকে যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা করতে হয়েছে! আসলে আলোকচিত্রটির উৎকর্ষতা লুকিয়ে রয়েছে এর ভাবনায়, দেখনদারীতে নয়। কোনো সুন্দর প্রকৃতির ছবি হয়তো চোখকে আরাম দিতেই পারে, কিন্তু তা অর্থবহ নাও হতে পারে। এখানে, 'টেক-অফ' ছবিটি যেভাবে জীবজগতের বেঁচে থাকার লড়াইকে তুলে ধরে, তা সত্যিই অভাবনীয়।

নেটিজেনরা ইতিমধ্যেই এই ছবি দেখে বন্যজীবনকে গুপ্তধনের সাথে তুলনা করেছেন! 'টেক-অফ' যে আক্ষরিক অর্থেই করোনা দুর্গত মানুষের চিন্তাভাবনার টেক-অফ ঘটাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ছবিতে সাদা রঙের একঝাঁক সারস ও দূরের ঝাপসা কমলা পটভূমি যে রঙের পার্থক্য গড়েছে, তা অতীব সুন্দর। ছবিটি ঝাপসা হওয়ার ফলে আলাদা করে কোনো একটি সারসকে সম্পূর্ণ আলাদা করা দুষ্কর হলেও, এটা অন্তত স্পষ্ট যে নেকড়ের থেকে বাঁচতে সমগ্র পক্ষীকুল একই পন্থা অবলম্বনে পিছপা হয়নি। (ক্রমশঃ)

(ছবি সৌজন্যেঃ ইন্টারনেট) 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours