দীপ্তেন্দু চক্রবর্তী, প্রবাসী লেখক, টরোন্টো, কানাডা:

বলছিলাম আপনাদের এদেশের সমাজ ব্যবস্থা বা সরকারি ব্যবস্থা। আমি একুশ বছর বয়স থেকে বিদেশে আছি, কিছু দুর্নীতি ঘুষ দেখেছি ব্রিটেনে। ধরা পরে গেছে এবং জেলে গেছে তারা। আজ তিরিশ বছর কানাডাতে আছি। কোনোদিন কোনো দুর্নীতি দেখিনি, কয়েকবার দুর্নীতির খবর বেরিয়েছিল কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে তার নিস্পত্তি করা হয়েছিল শক্ত পুলিশ ব্যবস্থার জন্য। কোনো কাউন্সিলর, মন্ত্রী, পুলিশকে কোটি টাকা দিয়েও ঘুষ দিতে পারবেন না।  মূল্যবোধ এতো বেশি।কয়েকমাস আগে আমাকে আমার বন্ধুর ছেলে রবিন পুলিশে কাজ করে, স্পিডিংয়ের জন্য ধরলো। আমি হাসি মুখে রবিনের দিকে তাকালাম যেন ও আমাকে ছেড়ে দেয় । রবিন একটাও কথা না বলে আমাকে $১৭০ ডলারের টিকিট দিয়ে চলে গেলো। রবিবারে ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম। ভানুদা আমাদের বন্ধু, রবিন এসে বললো আঙ্কল সরি আমি তোমাকে ছাড়তে পারি না। আমার ছোট ছেলে বয়স পঁচিশ কানাডিয়ান সরকারের পেনশন দপ্তরে কাজ করে। জিজ্ঞাসা করলাম কবে আমি পেনশন পাবো? বললো অনেক দেরি আছে কিন্তু আমি তোমাকে কোনো খবর দিতে পারবো না। তোমার  ফাইল আমি খুলতে পারবো না। কোনো রকমের সহযোগিতা এরা  করবে না বেআইনি। কাজেই এদেশে এলেই আমরা হটাৎ দারুন সভ্য মানুষ বনে যাই। কাজে যাই সময়ের আগে, বরফের ঝড় হোক, রাস্তা জ্যাম থাকে আমাকে কাজে যেতেই হবে টাইম মতো। নইলে শুক্রবার টাকা পয়সা মিটিয়ে তাড়িয়ে দেবে। সে আপনি যেই হন না কেন? দুঃখের ব্যাপার শুনুন। একজন ভিপি বহুদিন ধরে কোম্পানিতে আছেন, দারুন তার প্রতাপ।কর্মকর্ত্তারা ঠিক করলো যে একে সরাতে হবে। খুব অস্বস্তিকর ব্যাপার। এতদিনের ভিপি, বন্ধুর মতো হয়ে গেছে কোম্পানিতে পনেরো বছর। সেই শুক্রবারে দেখা গেলো অফিসে খুব একটা লোক নেই। ভিপি ঘরে এসে  দেখলেন যে তার টেবিল পরিষ্কার, ছেলে বৌয়ের ছবি একটা বক্সে রাখা আছে অন্য সব জিনিসের সাথে। ওকে ফায়ার করার জন্য আরেকটা কোম্পানিকে আনা হয়েছে যাতে সহকর্মীরা লজ্জা না পায়। ঘরের দরজা বন্ধ করে  বিনয়ের সাথে ফায়ারিং কোম্পানির লোক তাকে ধন্যবাদ দিয়ে জানালো যে তাকে আর দরকার নেই, তবে কোম্পানির  bmw গাড়িটা আরো একমাস রাখতে পারেন, আর সব পাওনা গন্ডা খামে করে হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়। বুঝে দেখুন আগেরদিনও ভিপি বুঝতে পারেনি যে তাকে তাড়ানো হবে? হার্ট স্ট্রোক হয়ে যায় বহু মানুষের। এদের কথাই হচ্ছে কাজ করো টাকা নাও, একটু বেচাল দেখলেই আউট। কাজেই মালিকের কালো হাত গুড়িয়ে দাও বা অফিসে ক্রিকেট খেলা দেখা, সেল ফোনে গল্প চলবে না। দুর্নীতি নেই কথাটা অনেকেই বিশ্বাস করে না। হয়তো আছে কিন্তু আমার ওপর কোনো প্রভাব কখনো হয়নি।
একটি দলের কাউকে কোনো দিন ঘুষ দিইনি। বাড়ি বানাচ্ছি; যেদিন প্ল্যান পেলাম মিউনিসিপ্যালিটির লোক এসে পোর্টেবেল টয়লেট বসিয়ে গেলো শ্রমিকদের জন্য। ইলেট্রিক লাইটের ব্যবস্থা, জঞ্জাল ফেলার বিশাল বিন সব বসিয়ে গেলো। আমিতো সব ফি দিয়েছি আগেই। এইবার শুরু হলো বিল্ডিং ইন্সপেকটরদের রোজ তাগাদা কাজ শেষ করার জন্য। আমি টাকা বাচাঁবার জন্য দেওয়ালে ইনসুলেশন কম দিয়েছি ,ওরা  শুনবে না। ঠান্ডা হাওয়া ঢুকে যাবে তাই আমাকে আরো বেশি ইন্সুলেশন দিতে হবে। সমস্ত কাজ খুঁটিয়ে দেখবে।ঘুষের কোনো গল্প এখানে নেই। প্ল্যান পাস্ করানোর জন্য ওরা সব রকমের সাহায্য করে। আমার বাড়ির ভেতরে একটা বার বি কিউ উনুন চিমনি ওয়ালা বানিয়েছিলাম। প্রথমে খুব আপত্তি যে রান্না ঘরে আগুন লেগে যেতে পারে? আমি প্রমান দিলাম যে আমাদের মেয়রের বাড়িতে আছে তা হলে আমি কেন করতে পারবো না? আমাকে পারমিশন দিতে বাধ্য হলো কিন্তু আমাকে চুল্লিটাকে ফায়ার প্রুফ ইট দিয়ে বানাতে হলো।এদেশে আপনি যা চান তাই করতে পারেন। প্লেন চালানো, শিকার করা, বাড়িতে বুলেট বানানো, সব অধিকার আপনার আছে। নিয়ম মেনে। স্কুল পদ্ধতি খুব সুন্দর। প্রতিটি বোরোতে বেশ কয়েকটা স্কুল থাকে।আপনার বাড়ির পাশের কিন্ডার গার্ডেনে প্রথমে ভর্তি করলেন, তারপর চার ক্লাস অবধি স্কুল ঠিক করা থাকে, সেখান থেকে আবার হাই স্কুলের ঠিক করা থাকে। আপনার ইচ্ছা মতো আপনি বোরোর বাইরের কোনো স্কুলে দিতে পারবেন না। এইবার হাই স্কুল পাশ করার পর আপনার ছেলে মেয়েরা তাদের পাশের নাম্বার অনুযায়ী ইউনিভার্সিটিতে যায়। আবার কেউ আর পড়তে যায় না, কাজ পেয়ে যায় কোথাও। স্কুল পাশ করলেই ব্যাঙ্ক, সরকারি চাকরি  পাওয়া যায়। তা ছাড়া আছে নাগরিকদের খাওয়া থাকার ব্যবস্থা সরকারি  তরফ থেকে। এখন করোনার জন্য গরিব কম মাইনের লোকেদের বেশি করে মাইনে দেওয়ার ব্যবস্থা সরকার করেছে। আমার বন্ধু তথা দাদা সুনীলদা বহুবার আমার বাড়িতে এসেছেন। বলতেন তোমাদের লোকসংখ্যা কম আর বড়োলোকের দেশ। আমি বলতাম দুর্নীতি আর চুরি নেই কেন? (ক্রমশঃ)

(ছবি সৌজন্যে: প্রতিবেদক। ছবিতে এক নক্ষত্রের হাটে দাঁড়িয়ে প্রতিবেদক।) 

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours