আসাদ মল্লিক, ফিচার রাইটার, চুঁচুড়া, হুগলি:

কিউরিয়াস গ্ল্যান্সেস

লকডাউনের আবহে আবদ্ধ গোটাবিশ্ব। পশুপ্রেমীরা চিন্তিত পশুদের উপর করোনার প্রভাব নিয়ে। আর এরই মাঝে দ্য জার্মান সোসাইটি ফর নেচার ফটোগ্রাফি (জিডিটি) কর্তৃক আয়োজিত একটি আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় অভূতপূর্ব সব চিত্রের সম্ভারে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে পশুপ্রেমীরা। রাকুনের ন্যায় প্রায় বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর ছবি দেখতে পেয়ে স্বভাবতই খুশি নেটিজেনরা।

জন পিচার তোলা ছবি 'কিউরিয়াস গ্ল্যান্সেস' আলোকচিত্রটি প্রতিযোগিতায় স্তন্যপায়ী বিভাগে চতুর্থ স্থানাধিকারী। চিত্রে রাকুন নামক প্রাণীদের অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। মানুষ কোয়ারানটাইনে থাকার মাঝেও একে অপরের থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য হচ্ছে, সেখানে রাকুনদের দেখা যায় একই সাথে দলবদ্ধভাবে থাকতে। নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য যে, মহামারীর জেরে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও জীবজগৎ যেন নিজের মেজাজেই আছে।

জার্মানির হেসেন প্রদেশে মূলত এই ছবিটি তোলা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে তোলা ছবিটি দেখতে বেশ রহস্যময় লাগে। আসলে এই রাকুন প্রোকিওনিড পরিবারের বৃহত্তম। রাকুনের সবচেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলি হল চরম দক্ষতাযুক্ত সামনের পাঞ্জা, মুখের মুখোশ ও রঙযুক্ত লেজ। এইরকমের লেজ মূলত আমেরিকার আদিবাসী জনগণের পৌরাণিক কাহিনীগুলির সঙ্গে যুক্ত। রাকুন মূলত উপত্যকা বা পার্বত্য অঞ্চলে বসবাস করলেও, অভিযোজনগত কারণে এরা ঠান্ডা আবহাওয়ার যেকোনো অঞ্চলে থাকতে অভ্যস্ত। বর্তমানে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার অন্যতম কারণ।
রাকুন মানুষের মতই সমাজবদ্ধ জীব। সাধারণত বন্যঅঞ্চলে রাকুনের গড় আয়ু মাত্র ১.৮ থেকে ৩.১ বছর এবং গৃহপালিত অবস্থায় প্রায় ২০ বছরের কাছাকাছি। এর কারণ হল বন্যজীবনে থাকাকালীন এদের অধিকাংশের মৃত্যু হয় যানবাহনের তলায় চাপা পড়ে বা চোরাশিকারীদের হাতে। রাকুন মূলত নদী-হ্রদ তীরবর্তী গাছ বা শহরাঞ্চলের উঁচু গাছে বসবাস করে। জার্মানির হেসেন শহরেও তার অন্যথা হয়নি। জন পিচা আলোকচিত্র গ্রহণের কারিকুরি কাজে লাগিয়ে এই অনবদ্য ছবিটি তুলেছেন, যার জন্য তাঁকে সাধুবাদ দিতেই হত।

ছবিতে মূলত চারটি রাকুনকে জড়াজড়ি করে থাকতে দেখা যায়, তিনজন সামনে ও একজন পিছনে। পিচার ক্যামেরার আলোতে রাকুনগুলিকে দেখে মনে হয় তারা যেন ফ্ল্যাশের আলোর দিকে এগিয়ে আসছে। তাদের 'কিউরিয়াস গ্ল্যান্সেস' অর্থাৎ কৌতূহলি দৃষ্টি সত্যিই দর্শককে প্রভাবিত করে। ছবির পটভূমির অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশের মাঝে ফ্ল্যাশের আলো স্পটলাইটের ন্যায় কাজ করে। ছবির বিষয়বস্তু যে রাকুনগুলিই তা অন্তত এই স্পটলাইট থেকেই স্পষ্ট। দর্শকদের সাথে রাকুনদের আত্মিক যোগাযোগ স্থাপনে সফল 'কিউরিয়াস গ্ল্যান্সেস'।

 'কিউরিয়াস গ্ল্যান্সেস' ছবিটির গ্রহণ পদ্ধতি মুরাদের 'গ্লোয়িং ফক্স'-এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। মুরাদের ছবিতে সিল্যুয়েট শটের ব্যবহার যেমন ছবিটিকে অনবদ্য করে, তেমনই পিচার ছবিটিতে ফ্ল্যাশের ব্যবহার রাকুনগুলিকে পটভূমির থেকে আলাদা করে তুলে ধরে। ছবির একেবারে সামনের রাকুনটিকে এক্ষেত্রে দলপতি বলে মনে হয়, যেন সে আলোকচিত্রশিল্পীকে কোনো অজানা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে। রাকুনটির একটি হাত সামনের দিকে থাকায় মনে হয় যেন দর্শকদের সাথে আলাপ করার উদ্দেশ্যে হ্যান্ডশেক করতে চায় সে, আর এতেই ছবিটি দর্শকদের কাছে অধিক আদরের হয়ে ওঠে। আলোয় আলোকিত রাকুনদের ছবি অন্তত এটা ব্যক্ত করে যে এরা এখনও পর্যন্ত বিলুপ্তির আঁধারে তলিয়ে যায়নি। (ক্রমশঃ)

(ছবি সৌজন্যেঃ ইন্টারনেট।)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours