আসাদ মল্লিক, ফিচার রাইটার, চুঁচুড়া, হুগলি:

কাট অ্যান্ড রান

করোনা আতঙ্কে আবদ্ধ মানবসমাজকে প্রকৃতির স্বাদ দিতে দ্য জার্মান সোসাইটি ফর নেচার ফটোগ্রাফি (জিডিটি)-এর আয়োজিত প্রতিযোগিতায় প্রায় ৭টি বিভাগে অংশগ্রহণ করেন আলোকচিত্রশিল্পীরা। প্রায় ৫০০০ ছবির মধ্যে 'ম্যামলস' বা 'স্তন্যপায়ী' বিভাগে তৃতীয় স্থান অর্জন করে নেয় উইনফ্রায়েড উইসনিউস্কির 'কাট অ্যান্ড রান' চিত্রটি। ছবিতে বর্ণিত বন্য জীবন নিঃসন্দেহে দর্শককে প্রভাবিত করে।

প্রযুক্তিগত উন্নতির যুগে ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি অন্য স্তরে উন্নীত হয়েছে। ভয়ংকরতম বন্য প্রাণীদের ছবি বহুদূর থেকে গ্রহণ সম্ভব বলেই ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ও ডিসকভারির মত চ্যানেলের দৌলতে আজ বাঘ-ভাল্লুকের নিত্য ক্রিয়াকলাপ আমাদের বসার ঘরে এসে পৌঁছেছে। উক্ত ছবিটিও তেমনই বন্যজীবনের একটি স্মারক।

ছবির মূল বিষয়বস্তু মুখে বাচ্ছা শূকর ধরে দৌড়াতে উদ্যত একটি লেপার্ড বা চিতা। আফ্রিকার ভয়ংকর সুন্দর এই জীব চরমতম কঠিন অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে অভ্যস্ত। বিশ্বের দ্রুততম এই জীব যে অতি সহজেই শিকার নিয়ে পালাতে সক্ষম, তা আর বলার অপেক্ষা থাকে না। কিন্তু ছবির পটভূমিতে তেড়ে আসা 'ওয়ার্টহগ' বা বড়ো আকারের বুনো শূকরের উপস্থিতি চিতার জীবনকে বিপদে ফেলেছে। আসন্ন বিপদ দেখে তাই মুখে শিকার ধরেই দৌড় লাগাচ্ছে চিতা।
রঙের কন্ট্রাস্ট, রঙের প্রাচুর্য, ডায়নামিক রেঞ্জ, সবুজ-হলুদের লুকোচুরিতে ছবিটি অনন্য হয়ে উঠেছে। তারই মাঝে ধূসর শূকর ও হলদে চিতার উপস্থিতি যেন 'চেরি অন দ্য টপ'। সারা শরীরে কালো বুটি ও হলদে রঙের ফলে ছবির মুখ্য আকর্ষণ এই চিতাটি, কিন্তু দর্শকদের মনে জায়গা করে নিয়েছে নিষ্পাপ বাচ্ছা শূকরটি, যেটি জীবন ঠিক করে শুরুর আগেই মৃত্যুর মুখে!

এই 'ওয়ার্টহগ' আসলে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী প্রাণী। আকারে চিতার থেকে অনেক ছোট হলেও এমন দুটি বুনোশূকর একটি বড়ো মাপের জলহস্তীকে মেরে ফেলতে সক্ষম। মুখের দু'দিকে উঁচিয়ে থাকা শক্তিশালী ক্যানাইন এবং শক্তিশালী শারীরিক গড়নের কারণে এই প্রাণী এতটা ভয়ংকর। শূকরের দেহের ওজন অত্যন্ত বেশি হলেও ছোটমাপের পা দিয়েও বেশ জোরে দৌড়াতে সক্ষম, ফলে সামনের সূচালো দেহাবয়বের জেরে শিকারকে প্রচন্ড ভরবেগের সাথে আঘাতে সক্ষম।

উইনফ্রায়েড উইসনিউস্কির 'কাট অ্যান্ড রান' চিত্রটি আসলে অপত্যস্নেহকে অতি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। যেকোন মা যে নিজসন্তানের নিরাপত্তার খাতিরে নিজ জীবন বিসর্জনে সক্ষম, তাই দেখা যায় এই ছবিতে। তেড়ে আসা শূকর দুটি নিজ সন্তানকে ফিরে পেতে যে চিতাকেও মেরে ফেলতে সক্ষম, তা বুঝেই যেন দৌড়ে উদ্যত হয়েছে চিতাটি। আর তাই 'কাট অ্যান্ড রান' শুধুই নাম নয়, এটি যেন চিতার প্রতি আলোকচিত্রশিল্পীর বার্তা।

চিত্রে চিতার মুখে ধরে থাকা প্রাণীটিকে একঝলক দেখে হনুমানের বাচ্ছা মনে হলেও, ভালো করে দেখলে ভুল ধরা পড়ে। তাছাড়া হনুমানের বাচ্চাকে বাঁচাতে শূকরের তেড়ে আসাটাও অস্বাভাবিক! আলোকচিত্রটি দেখে অনেকেই শূকরগুলির সাথে ডিজনীর 'টিমন ও পুম্বা' কার্টুনের পুম্বা চরিত্রের মিল পেয়েছেন। বর্তমান সময়ে ছবিটি দেখে স্বস্তি পেলেও বাচ্ছা শূকরটির জন্য মনখারাপ করেছেন অনেকে। তবুও বন্যজীবনের নিয়ম মেনে নিয়েছেন সকলেই। একযোগে পুম্বার মত সকলেই বলে উঠেছেন 'হাকুনা মাতাতা', স্বহিলি ভাষায় যার অর্থ 'চিন্তা কোরো না'। (ক্রমশঃ)

(ছবি সৌজন্যেঃ ইন্টারনেট)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours