মোনালিসা মুখোপাধ্যায়, ফিচার রাইটার, হুগলি:

শেওড়াফুলি দুপয়সার ঘাট। সামান্য দুপয়সার বিনিময়ে পারাপার হত। তাই এই নাম ওপারেই ব্যারাকপুর। ব্যস্ততার হিসেব নিকেশ ছিল না  সারাদিন গঙ্গার এপার ওপার করে কত মানুষ।  ভোর থেকে রাত। কত জনাসমাগম। শেওড়াফুলি হাটে আসার মানুষ কাজের সুত্রে এপার ওপার করা মানুষ। খুব ছোট থেকে এই ঘাটের সাথে চেনাজানা কত এপার ওপার করেছি  ভুটভুটি নৌকাতে । মাঝিভাই নিয়ে যায় নিয়ে আসে। আগে ছোট বেলায় মায়ের সাথে পার হবার সময় মা হাতে পয়সা দিত বলত মাঝগঙ্গায় ফেলবি। অধীর আগ্রহে থাকতাম কখন আসবে মাঝগঙ্গা। এপার থেকে ওপার দেখতাম আবার ওপারে গিয়ে দেখতাম কত ছোট হয়ে গেছে এপার। কখনও ভাবসম্প্রসারন মিলিয়ে দেখতে চেয়েছি নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস। "এ হিসেব মেলেনি কারও কোনদিন। দুপার থেকে দুপার ছবির মত। চিরকালই আমি প্রকৃতির সাথে হারাই ওদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি। ওরা আমায় মনে করিয়ে দেয় অনেককিছু কি এক নিবিড় টান এদের সাথে আমার। চুপ করে দেখি আর অনুভব করি। দাদুর বলা কাহিনী রোমন্থন করি। কিভাবে মর্ত্যে এল গঙ্গা জহ্নু মুনির জানু কেটে জাহ্নবী নাম কত কি। জোয়ার ভাঁটার খেলা। ওই পার ঘেঁষে আসে বান দুচোখ ভরে দেখেছি। তাকে ভেঙে দিতে এগিয়ে আসে জেটি।  তাদের লড়াই দেখেছি প্রাণভরে।
আজ কম যেতে পারলেও যাই, মানসভ্রমণও করি। আজ" শান্ত নদীটি পটে আঁকা ছবিটির মত"বয়ে চলেছে  আমার চেনা  সেই গঙ্গা। মানুষের কোলাহল থেমেছে একেবারে।  করোনা চুপ করিয়েছে তাদের।কিন্তু  পাখির ডাক আর স্রোতের শব্দ তুলছে এক নতুন সুর। সে সুর বলছে নিজেকে জাগাতে এ প্রকৃতি  কে ভালবাসতে। যাকে  করেছি আমরা অবহেলা যাকে করেছি কলুষিত আজ তার কিছু হয় নি সে তার গতিপথ ধরে বা পাল্টে বয়ে যাবে। কিন্তু আমরা আবার পারব তো ফিরে আসতে?
সুস্থ ভাবে বাঁচতে?  সময় সবসময়  সবকিছুর উত্তর দেয় দিচ্ছে দেবে।
নীলাকাশ আর নদীর মেলবন্ধনের সুর অনুভব করতে শিখতে হবে।
ভবসংসারের পারাবারের মাঝি পথ দেখায় বারবার  দেখতে হবে এবার সে পথ। "অন্তরে আজ দেখব যখন আলোক নাহি রে"।

(ছবি সৌজন্যে: প্রতিবেদক। গঙ্গার এপার থেকে ওপারের দৃশ্য)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours