ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

ইছাই-এর মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা  ঢেঁকুর গড়ে এসে  মা শ্যামরূপার  উপর  ক্রুদ্ধা  হয়ে।  পিতার   জন্য।  মা   শ্যামরূপাকে  দায়ী  করে  ঢেঁকুর নিকটে।   গৌরাঙ্গপুরে  ' দীপ  সাযরে ' শ্যামরূপার  স্বর্ন   মূর্তিটি বিসর্জন  দেয় ।
           ইছাই ঘোষের  মৃত্যুর  সাথে সাথে  একটি  যুগের  অবসান ঘটল। ধর্মমঙ্গল কাব্যের বীর নায়ক ইছাই ঘোষ যে এক অখন্ড  গোপ রাজ্যের   স্বপ্ন দেখে  ছিলেন ।তাঁর মৃত্যুর  সাথে সাথে  বিনষ্ট  হল। পিতৃ রাজ্য  পুনরুদ্ধার  করে ঢেঁকুর গড়ের  দখল  নিলেন  কর্নসেন -পুত্র  ধর্মরাজের  উপাসক  লাউসেন। 
            আমাদের  দেশের  প্রকৃত পক্ষে  কোন ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা  নেই। ইতিহাস বই  বলে আমরা  যা পড়ি, তা  দেশের  রাজা উজিরদের  কাহিনী। সেখানে  সাধারণ মানুষের কোন কথা, তাদের  জীবন যাপনের ইতিবৃত্ত  বা আর্থসামাজিক অবস্থার কথাও বলা হয়নি। তাই  ঐতিহাসিক  বহু  তথ্য  লিপিবদ্ধ করা নেই।  বর্তমানে স্থানীয় লেখকের রচনা, নাটক,কুলচী কিংবদন্তীই ইতিহাসের  একমাত্র  উপাদান। 
ইছাই ঘোষকে  নিয়ে  নানা  কিংবদন্তী  প্রচলিত  থাকলেও  ইছাই ঘোষ  একটি  ঐতিহাসিক  চরিত্র। তিনি  ছিলেন  ত্রিষষ্টি গড়ের  অধিপতি।  আজও  গড়  নামে  বেশ কিছু জনপদের নামের অস্তিত্ব  রয়েছে। যেমন 'অমরার গড়'. রাজগড়, বড়গড়, শেরগড় (উখরা), পানাগড়, ডিসেরগড়,  ইত্যাদি ।   
       অন্যদিকে  ঢেঁকুর গড়ের সন্নিকটে  গৌরাঙ্গ পুর  মৌজায়  রয়েছে ' ইছাই ঘোষের  দেউল 'রেখদেউল রীতিতে  পোড়ামাটির  ছোট ছোট  ইট  দিয়ে  নির্মিত  অনুপম  স্থাপত্য এক  উজ্জ্বল  দৃষ্টান্ত।  অনেকের  ধারণা এই  স্থাপত্য  কীর্তি  ইছাই ঘোষের  কীর্তি।  কিন্তু পুরাতত্ত্ব  বিশেষজ্ঞদের অভিমত  ইছাই  ঘোষের  সময়কার অষ্টম -নবম শতাব্দী।আর  দেউলটির  নির্মানকাল একাদশ -দ্বাদশ  শতক। তাই  সম্ভবতঃ  ইছাই-এর  কোন  উত্তর পুরুষ ইছাই-এর  শৌর্য  বীর্যের  প্রতীক রূপে  এই  স্থাপত্য নির্মাণ  করেন।  সম্ভবতঃ  প্রথম  এটি  ভগবতী  মন্দির  ছিল। কারন  গোয়ালাদের  আরাধ্য দেবী  ভগবতী।  তবে বর্তমানে  এই  মন্দিরে  একটি  শিবলিঙ্গ  পজিত হয়। (চলবে)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours