আসাদ মল্লিক, ফিচার রাইটার, চুঁচুড়া, হুগলি:

ডেঞ্জার ইন দ্য মাড

করোনা সতর্কতা জারি বিশ্বজুড়ে। খাঁচায় বন্দি সভ্যতা। আর এরই মাঝে প্রকৃতির সাথে যোগাযোগ হারিয়েছে মানুষ। তাই এই নিবিড় মেলবন্ধনকে পুনরায় জীবিত করার লক্ষ্যে দ্য জার্মান সোসাইটি ফর নেচার ফটোগ্রাফি (জিডিটি) আয়োজন করে এক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার। ৭টি বিভাগে প্রায় ৫০০০ আলোকচিত্র জমা পড়ে, যেখান থেকে সেরার সেরা নির্বাচিত হয় পিটার লিন্ডেলের 'এ হেয়ার'স ড্রিম'। আদার অ্যানিম্যালস(অন্যান্য জীবজন্তু) বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে জেন্স কালম্যানের 'ডেঞ্জার ইন দ্য মাড'।

ডেঞ্জার ইন দ্য মাড : এই নামটিই যেন ছবির বিষয়কে বর্ণনা করে দেয় নিমেষে। আলোকচিত্রটিতে পঙ্কিল ভূমিতে নিমজ্জিত একটি কুমিরকে দেখা যায়। কুমিরটির শরীর পাঁকের সাথে নিজেকে যেভাবে একাত্ম করে নিয়েছে, তা কল্পনাতীত। কুমিরটির চোখের হলুদ রঙটি না থাকলে কাদা থেকে কুমিরটিকে আলাদা করা শক্ত হত। ছবিটি নিঃসন্দেহে কুমিরের সাথে প্রকৃতির নিবিড় যোগাযোগের দিকটি ব্যক্ত করে।

অন্যান্য জীবজন্তু বিভাগে প্রথম স্থানের জন্য ছবিটি তর্কাতীতভাবে যোগ্য। ছবির মধ্যে রঙের পার্থক্য ছবিটিকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যায়। একঘেঁয়ে কালো রঙের কাদার সাথে কুমিরের কর্দমাক্ত শরীর 'ক্যামোফ্লেজ' করলেও গাঢ় উজ্জ্বল হলুদ রঙের চোখ কুমিরটিকে আলাদা করে। এক্ষেত্রে কুমিরটিকে দেখে মনে হয় যেন কোনো অতিকায় রাক্ষস হলুদ চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে এবং পৃথিবীপৃষ্ঠ ফেটে বেরিয়ে আসার অপেক্ষা করছে।
ছবিটিকে এককথায় 'ভয়ংকর সুন্দর' বলে দাবি করছেন সমালোচকরা। কুমিরটির বীভৎসতা যেন সৌন্দর্যের আর এক রূপ। প্রকৃতির প্রত্যেক ভয়াল রূপ যে সত্য, পৃথিবী যে শুধুই 'ইউটোপিয়া' নয়, তা ব্যক্ত করে ছবিটি। বর্তমান আবহে এই ছন্নছাড়া পৃথিবীরই যেন আর এক রূপ এই ছবিটি। একইসাথে সৌন্দর্য ও মৃত্যুর চেতনা যেভাবে পাশাপাশি ফুটে ওঠে এই ছবিতে, তা অকল্পনীয়।

জেন্স কালম্যানের ছবিটি নিঃসন্দেহে প্রকৃতির ভয়ংকর দিককে সৌন্দর্যতার মোড়কে তুলে ধরেছে। পৃথিবী যে রামধনু-ইউনিকর্নের জগৎ নয়, তা তুলে ধরে 'ডেঞ্জার ইন ডি মাড'। এখানে প্রত্যেকদিন জীবজগত যেভাবে শিকারি ও শিকারের মাঝে টিকে থাকার লড়াইয়ে নামে, তা একটি মাত্র ছবিতে ফুটে ওঠে অনায়াসে। ছবিটির দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হতেই পারে যে একটি প্রাগৈতিহাসিক জীব সটান তাকিয়ে আছে দর্শকের দিকে।

আলোকচিত্রটি চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মনে করিয়ে দেয় জার্মান অভিনেতা আর্নল্ড সোয়াতজেনেগার অভিনীত 'প্রিডেটর' সিনেমাটিকে, যেখানে আর্নল্ডকে ভিনগ্রহীদের থেকে বাঁচতে গায়ে-মুখে কাদা মেখে ক্যামোফ্লেজের সাহায্য নিতে হয়! 'র‌্যাম্বো ২' চলচ্চিত্রে সিলভেস্টার স্ট্যালনকেও একইরকমভাবে কাদা মেখে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হয়। ফলত এটা অন্তত স্পষ্ট যে, শুধু কুমির না, সময়ে সময়ে মানুষও জীবজগতের থেকে বেঁচে থাকার তাগিদে পদ্ধতিগত উপায় শিখে চলেছে।

আলোকচিত্রটি দেখে অনেক পশুপ্রেমীই অ্যালিগেটরটির জন্যে পরিস্কার জলের দাবি করেছেন। তবুও অধিকাংশের মতে, ওদের নিজেদের মত বাঁচতে দেওয়াই উচিত। চরম কঠিন অবস্থাতে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার মত ক্ষমতা ধরে বলেই, আজ পৃথিবীর অন্যতম ভয়ংকর শিকারী এই সরীসৃপ। কোমোডো ড্রাগনের পরেই অ্যালিগেটর পৃথিবীর বৃহত্তর সরীসৃপ। জেন্স কালম্যানের দৌলতে এমনতর অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখতে পেয়ে স্বভাবতই খুশি নেটিজেনরা। আন্তর্জাল ও সামাজিক মাধ্যমে অনেকেরই মত যে, পিটার লিন্ডেলের 'এ হেয়ার'স ড্রিম'-কে ছাপিয়ে প্রথম হওয়ার দাবিদার আসলে জেন্স কালম্যানের 'ডেঞ্জার ইন দ্য মাড'।

(ছবি সৌজন্যেঃ ইন্টারনেট)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours